ফ্লোরিডা থেকে উদয় হাকিম

উই উইন আমেরিকা ...

উদয় হাকিম, ফ্লোরিডা (আমেরিকা) থেকে : ‘উই উইন আমেরিকা’। কথাটি বললেন যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকা প্রবাসী হাসানুর রহমান। ইনিংসের শেষ বলে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কথাটি বলে উঠলেন তিনি। যদিও জয়টা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। কিন্তু আমেরিকার মাটিতে খেলা হলো বলেই তার অমন উচ্চারণ। শুধু হাসানুর রহমান নয়; এ যেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সকল বাংলাদেশিদের প্রাণের উচ্চারণ। এর আগে পুরো লাউডারডেল স্টেডিয়াম হয়ে উঠেছিল ঝলমলে বাংলাদেশ। দলের জয় যেন রাঙিয়ে দিয়ে গেলো পুরো স্টেডিয়াম মাতিয়ে রাখা বাংলাদেশিদের মন; যাদের হৃদয়ে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রথমবারের মতো মাঠে নেমেই বাজিমাত। লাল সবুজের পতাকায় রচিত হলো বাংলাদেশের আরেক ইতিহাস। প্রথমত, আমেরিকার মাটিতে প্রথমবারের মতো খেললো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। দ্বিতীয়ত, মাঠে নেমেই বিজয় ছিনিয়ে আনলো বাংলার দামাল ছেলেরা।  

                                  বাঘের প্রতিকৃতি নিয়ে গ্যালারিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ‘এই জয় উজ্জীবিত করবে নতুন প্রজন্মকে’। বললেন, ডা. এম হাসানুজ্জামান। দেশের জয়ে উচ্ছ্বসিত ডা. জামান বলেন, প্রথমবারের মতো খেলেই জিতল বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নতুন প্রজন্ম মাঠে থেকে খেলা দেখলো। দেশের খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিল। তারা চিনল নিজের দেশকে। বিজয়ের এই গৌরব তাদের উজ্জীবিত করবে। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম বাড়াবে। তিনি বলেন, দেশের এই বিজয়ে অনেক দিন পর প্রাণের মধ্যে সুখ অনুভব করলাম। হাসানুর রহমান আর হাসানুজ্জামনরা এসেছিলেন ওকালা থেকে। চার ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবের বিশাল বহর নিয়ে। তারা নাচলেন, গাইলেন, মজা করলেন, বিজয় দেখে বাড়ি ফিরলেন।  

তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে ম্যাচ জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন এই দুজন

বিসিবি কর্মকর্তা শিবলী, বাতেন গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন। শিবলী জানালেন, দেশের বাইরে তিনি যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই জিতেছে বাংলাদেশ। জিতলো এখানেও! চার বন্ধুকে নিয়ে মধ্যবয়সী আরেক শিবলী এসেছিলেন জ্যামাইকা থেকে। বাংলাদেশেও তিনি ক্রিকেটে সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ক্রিকেট জড়িয়ে আছে তার রক্তে। খুব টেনশনে ছিলেন। জয় পরাজয়ের দোলাচলে উদ্বিগ্ন ছিলেন। ম্যাচ শেষে বললেন, এরকম একটা জয় খুব দরকার ছিল।  

টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের পরাশক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর সমর্থকদের সঙ্গে লেখকের সেলফি

শামীম আল মামুন। বাংলাদেশে মার্সেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। মার্সেল পুরো সিরিজের কো-স্পন্সর। তিনি গ্রিনকার্ড  নিয়ে এসেছেন আমেরিকায়। থাকেন ডালাসে। দুটি ফ্লাইট ধরে অনেক কষ্ট করে চার জনের টিম নিয়ে এসেছিলেন খেলা দেখতে। দলের জয়ে তাদের সব কষ্ট উবে গেছে। আফসোস করে বললেন, শেষ ম্যাচটা দেখে যেতে পারলে ভালো লাগতো। আশা করি সিরিজও জিতবো আমরা। কিন্তু কাজের তাগিদে ফিরে যেতে হচ্ছে ডালাসে। খেলা শুরু হয়েছিল স্থানীয় সময় রাত ৮টায়। সন্ধ্যা ৬টা থেকেই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশিদের আসা। যুক্তরাষ্ট্রের নানা প্রান্ত থেকে এসেছেন বাংলাদেশিরা। পুরো স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ছিল ২০ হাজার। দর্শক ছিল ১৬ হাজারের মতো। যার নব্বই শতাংশই ছিল বাংলাদেশের সমর্থক। আর সে কারণেই সাংবাদিকরা বলছিলেন, এ যেন আরেক বাংলাদেশ। ক্রিকেট যে বাংলাদেশিদের হৃদয়ে কতখানি জায়গা করে নিয়েছে তার প্রমাণ এই ম্যাচ, টি টেয়োন্টি সিরিজে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ম্যাচ।

নিরাপদ সড়ক চাই প্ল্যাকার্ড নিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন অনেকেই

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট কিটসে টি টোয়েন্টির প্রথম ম্যাচে জিতেছিল স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ম্যাচে জিতলো বাংলাদেশ। সিরিজের ভাগ্য ঝুলে রইলো শেষ ম্যাচে। সিরিজে এখন সমতা। ক্রিকেটের প্রতি, দেশের প্রতি বাংলাদেশিদের যে মমতা তা নিশ্চয় বিফলে যাবে না। এখন সবার প্রত্যাশা-শেষ ম্যাচটি জিতে আমেরিকার মাটিতে সিরিজ জয়ে বাংলাদেশ লিখুক আরেকটি ইতিহাস। সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বিজয়ের ঢেউ আঁছড়ে পড়ুক বাংলাদেশের ঠিক উল্টো পিঠে থাকা আমেরিকায়। পুরো স্টেডিয়াম চত্বরটি নয়নাভিরাম। দক্ষিণ আর পূর্বপাশ জুড়ে গ্যালারি। পূর্বদক্ষিণ পাশজুড়ে বিশাল লেক। পূর্বে আছে বিশাল সুইমিং জোন। পশ্চিম-উত্তর প্রায় উন্মুক্ত। পশ্চিমে রয়েছে বিশাল ফুটবল খেলার মাঠ। এছাড়া, বেশকিছু পিকনিক মোটেল। সেদিকটায় খেঁজুর গাছ আর কুঁড়ে ঘরের আকৃতিতে তৈরি ছাউনিগুলোতে বাজি ফুটছিল। বাঘের প্রতিকৃতি, ঢোল, বাংলাদেশের পতাকা আর নিরাপদ সড়ক চাই প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসেছিলেন অনেকেই। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ শ্লোগানও ছিল  তরুণদের কণ্ঠে। সব ছাপিয়ে এখন প্রত্যাশা একটাই-সিরিজ জিতুক প্রিয় বাংলাদেশ। *

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ আগস্ট ২০১৮/অগাস্টিন সুজন/সাইফ