নির্বাচন

আনন্দ ও আশঙ্কায় ভোটাররা

শ্যামল কান্তি নাগ : আনন্দ আর আশঙ্কায় ঢাকার দুই সিটির সাধারণ ভোটাররা। যখন দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর ভোট দিতে বুথে যাবেন, তখনই সেই নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে নানা ভীতি আর শঙ্কার মধ্যে থাকতে হচ্ছে তাদের।

পাড়া মহল্লায় আনন্দ উল্লাসের কমতি নেই প্রার্থীদের সমর্থকদের। অলিগলিতে চায়ের দোকানেও শুধুই ভোটের আলোচনা। কে হচ্ছেন দুই সিটির নগরপিতা। কে হচ্ছেন তাদের এলাকার কাউন্সিলর।

সরেজমিনে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আনন্দ ও শঙ্কা দুটোই কাজ করছে তাদের মধ্যে। গত বছরের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে দেশব্যাপী যে তাণ্ডব ঘটেছিল, সেই ভয়ও ভোটারদের তাড়া করছে। সব মিলে মনের অজান্তেই ভোটকেন্দ্রে যেতে অনীহা কাজ করছে তাদের মধ্যে।

এবার যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে সেহেতু সংঘর্ষের ঘটনার আশঙ্কা কম হলেও, একে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে অনেকটাই স্বস্তিতে সাধারণ ভোটাররা। বিশেষ করে, যে সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, তাতে বিশৃঙ্খলা না ঘটার আশাই করছে জনগণ। রোববার রাত ১২টা থেকে সকল প্রচারণা বন্ধ হলেও, থেমে নেই অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা। নানা কৌশলে, এমনকি কুশল বিনিময়ের মধ্যেও চলছে ভোটের প্রচারণা।

প্রচারণা যে শুধু প্রার্থীরাই চালিয়েছেন তা কিন্তু নয়। প্রচারণায় এবার অনেক এগিয়ে খোদ নির্বাচন কমিশনও! তবে তা কোনো প্রার্থীর পক্ষে নয়। ‘আপনার ভোট আপনি দেবেন, যাকে খুশি তাকে দেবেন’, ‘নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন, শান্তিমতো ভোট দেবেন’- এমন বাণীসমৃদ্ধ খুদেবার্তায় ভোটারদের সচেতন ও উৎসাহিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

সিটি নির্বাচনে দীর্ঘদিন পর ভোট দেবেন প্রতিটি পাড়া-মহল্লা অলিগলির ভোটাররা। তাই এই  ভোট তাদের মধ্যে আনন্দ-উল্লাস বয়ে এনেছে।

 

মাস জুড়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ছাড়া এবারে বড় কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা নেই। তবে প্রচারণার শেষ দিকে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদপ্রার্থী মাহী বি চৌধুরীরর ওপর হামলা কিছুটা হলেও কালি লেপেছে প্রচারণার শান্তিতে।

মাহী বি চৌধুরী বিএনপির সমর্থন চেয়ে পাননি। তার পরিবর্তে বিএনপি সমর্থন দেয় তাবিথ আউয়ালকে। এ নিয়ে মানসিক দ্বন্দ্ব রয়েছে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে। অন্যদিকে, ব্যক্তিগত যোগ্যতায় আনিসুল হক অনেকটাই এগিয়ে। যে কারণে মাহির ওপর হামলার ঘটনাটি এমন  প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে যে, কে বা কারা ঘটাল এই ঘটনা? পুলিশ অবশ্য তৎপর এর কারণ খুঁজে বের করতে।

 

এদিকে সর্বশেষ নির্বাচনী ভাষণে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নীরব প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলেছেন। এই প্রতিশোধ কে কীভাবে নেবেন, তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

শান্তিপূর্ণ ভোটের ক্ষেত্রে এ ধরনের বক্তব্যকে সমালোচকরা তির্যক দৃষ্টিতেই দেখছেন। যদিও এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পেট্রোল বোমায় মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, বাসে আগুন ধরিয়ে যেভাবে বিএনপি তাদের দোসর ২০ দলকে নিয়ে শত শত মানুষ খুন করেছে, তারা যদি প্রতিশোধ নেয়, তাহলে তিনি পালাবার পথ পাবেন না।’ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যকে তিনি অবিবেচনাপ্রসূত বলেও উল্লেখ করেছেন।

 

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা উত্তর এবং ঢাকা দক্ষিণ নামে ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ হয়।

 

এবারের নির্বাচনে উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩৬টি ওয়ার্ডে মোট ভোটারসংখ্যা ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৭১ জন এবং মহিলা ১১ লাখ ২১ হাজার ৭৪২ জন।

 

ঢাকা দক্ষিণে ৫৭টি ওয়ার্ডে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৩ জন ভোটার রয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ১০ লাখ ৯ হাজার ৭০ জন এবং মহিলা ৮ লাখ ৬১ হাজার ২৯৩ জন।

 

মঙ্গলবার এসব ভোটার তাদের পছন্দের নগরপিতা এবং স্থানীয় কাউন্সিলর নির্বাচন করবেন। আর তা যেন শান্তিপূর্ণভাবে করতে পারেন, এমন আশাবাদ ভোটারদের।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ এপ্রিল ২০১৫/নাগ/সুমন/কমল কর্মকার