নির্বাচন

দুই অঙ্কের সুদের হারে অসন্তোষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট) ব্যাংক ঋণের সুদের হার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

 

কমিটির পর্যবেক্ষণে সুদের হার এক অঙ্কে (সিঙ্গেল ডিজিট) নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে কয়েক দফা বাংলাদেশ ব্যাংককে সুদের হার কমাতে পরামর্শ দিলেও, তা না কমানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করে কমিটি।

 

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর উপস্থিতি ছিলেন। কমিটি সভাপতি ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থপ্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, মো. আব্দুল ওয়াদুদ, ফরহাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, মো. শওকত চৌধুরী এবং আখতার জাহান বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন ।বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিধিরা সুদের হার ঠিক রয়েছে বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন। এজন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতে আগামী বৈঠকে বেসরকারি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের ডাকা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকেই প্রতিশ্রুতি চায় সংসদীয় কমিটি।   

 

বৈঠক সূত্র আরো জানায়, বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক (এগ্রো-বেসড) উৎপাদনে সুদের হার আরো কমানোর জন্য সুপারিশ করে কমিটি।

 

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে ঋণের বিপরীতে যে সুদের হার রয়েছে সেটা বেশি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে সুদের হার ঠিক রয়েছে, তবুও কমিটি মনে করে এ হার কমানো উচিত। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ১৩-১৪ শতাংশ সুদ আছে। এ জন্য কমিটির আগামী বৈঠকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিদের ডাকা হবে।

 

বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে বেসিক ব্যাংক, মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সচিবালয় মিলে একটি সার-সংক্ষেপ প্রস্তুত করা হবে। ওই সার-সংক্ষেপের  বিষয়ে পরবর্তী  বৈঠকে আলোচনার পর সুপারিশ করা হবে।

 

বৈঠক সূত্র জানায়, বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম তদন্তকারী সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) কমিটিতে তলব করেও শেষ পর্যন্ত হাজির করাতে পারেনি কমিটি। বৃহস্পতিবারর বৈঠকে দুদকের আসার কথা থাকলেও তার আসবেন না বলে জানিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে বৈঠকে একটি সূত্র জানায়, দুদকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও পর্যন্ত তলব করা হয়নি কমিটিতে। এ বিষয়ে সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা তো দুদককে সেভাবে ডাকিই নাই। তারপরেও যে তদন্ত হচ্ছে সেটা নিয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আগামী বৈঠকে আসতে বলা হয়েছে, সেদিনই আলোচনা হবে।

 

এর আগের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বেসিক ব্যাংকের ফাংশনাল অডিটে অনিয়ম ধরা পড়েছে বলে কমিটিতে জানিয়েছিল, একই সঙ্গে  দুদক কেনো অনিয়ম পেল না সেটা নিয়েও কমিটিতে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন গভর্নর। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদককে বৈঠকের থাকার জন্য চিঠি দিয়েছিল সংসদী কমিটি। এছাড়া বৈঠকে বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমকে গতিশীল ও শক্তিশালী করা, বীমা কোম্পানিগুলোকে একটি নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আনা এবং বিমা সেক্টরের আধুনিকায়ন করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল নিয়োগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয় ।

 

মানি লন্ডরিং প্রতিরোধ আইনে  এ পর্যন্ত  কতজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এর অগ্রগতি কত দূর এবং গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

 

বেসিক ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনায় গত বছরের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান, মতিঝিল ও পল্টন থানায় ৫৬টি মামলা করে দুদক। এসব মামলায় মোট আসামি ১২০ জন। এদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা ২৬ জন। এ ছাড়া ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের ৮৪ জন এবং সার্ভে প্রতিষ্ঠানের ১০ জনকে আসামি করা হয়। তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বা পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি।

 

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান, অগ্রণী, সোনালী, জনতা ও রুপালী  ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জানুয়ারি ২০১৬/এনআর/রহমান