নির্বাচন

৫৪ ধারা নিয়ে হাইকোর্টের রায় আপিলে বহাল

নিজস্ব প্রতিবেদক : পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার (৫৪ ধারা) ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ধারা (১৬৭ ধারা) সংশোধনে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

 

মঙ্গলবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

 

বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

 

আদালত সংক্ষিপ্ত রায়ে বলেন, ‘ডিসমিস। তবে কিছু মডিফিকেশন থাকবে। কিছু গাইডলাইন দিয়ে দেব।’

 

ফলে বিনা পরোয়ানা ও রিমান্ডের ধারা সংশোধনে হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ছাড়া বোঝা যাবে না হাইকোর্টের রায়ের কোন অংশ থাকবে আর কোন অংশ থাকবে না।

 

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা এবং রিট আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

 

রায় ঘোষণার পরে ড. কামাল হোসেন বলেন, আপিল ডিসমিস হয়ে গেছে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। রায় পেলে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করব কী আছে আর কী নাই। তাই এখন কিছু বলা যাবে না।

 

অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সন্তুষ্ট।’

 

এর আগে গত ১৭ মে হাইকোর্টের দেওয়া রায় চ্যালেঞ্জ করে রাষ্ট্রপক্ষ যে আপিল করেছিল, তার শুনানি শেষে রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুলাই ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করেন তৎকালীন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার (এসি) আকরাম হোসেন। ওই বছরের ২৪ জুলাই মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে মারা যান রুবেল। এ ঘটনায় রুবেলের বাবা রমনা থানায় এসি আকরামসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় ২০০২ সালে বিচারিক আদালত এসি আকরামসহ ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।

 

এরপর তৎকালীন সরকার রুবেল হত্যা তদন্তের জন্য বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত শেষে কমিটি ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে।

 

ওই সব সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) হাইকোর্টে একটি রিট করে। ২০০২ সালের ২৯ নভেম্বর আদালত সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। এরপর রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট এ ব্যাপারে কয়েক দফা নির্দেশনা ও সুপারিশ দিয়ে রায় দেন।

 

হাইকোর্টের ওই রায়ে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রচলিত বিধান সংশোধন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ জন্য বেঁধে দেওয়া হয় ছয় মাসের সময়সীমা। আর ধারা সংশোধনের আগে এ ক্ষেত্রে কয়েক দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে সরকারকে বলা হয়।

 

এ রায়ের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে চারদলীয় জোট সরকার। ২০০৩ সালের ২ আগস্ট আপিল বিভাগ সরকারের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। তবে হাইকোর্টের ওই নির্দেশনাগুলো সে সময় স্থগিত করা হয়নি।

 

লিভ টু আপিল মঞ্জুরের পর সরকার আপিল করে। এর ধারাবাহিকতায় গত ২২ মার্চ আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়ে ১৭ মে শেষ হয়।

 

হাইকোর্ট যেসব নির্দেশনা দিয়েছিলেন :

ক. আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে না।

খ. কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে।

গ. গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে।

ঘ. বাসা বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেপ্তার ব্যক্তির নিকট আত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে।

ঙ. গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে তার পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবী ও আত্মীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে।

চ. গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে কারাগারের ভেতরে কাচের তৈরি বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। ওই কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকট আত্মীয় থাকতে পারবেন।

ছ. জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে।

ট. পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, তাহলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নেবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ মে ২০১৬/মেহেদী/ইভা/ এএন