বিশ্ব বাতায়ন

ভালো থাকবেন নাসিম ভাই

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম সংগ্রামী মানুষ ছিলেন। কখনো কোনো অপশক্তির কাছে তাঁকে আপোস করতে দেখিনি। বরং রাজপথের এই মানুষটি সব সময় সামনে থেকে সংগ্রাম করেছেন। কর্মীদের সাহস জুগিয়েছেন। কিন্তু জীবনের শেষ লড়াইয়ে তিনি হেরে গেলেন।

রক্তচাপজনিত সমস্যা নিয়ে গত ১ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। ওই দিনই তাঁর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর ৪ জুন তাঁর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও ৫ জুন ভোরে তিনি স্ট্রোক করেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যার কারণে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে তাঁকে আইসিইউতে মেডিকেল বোর্ডের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। যদিও এরপর দু’বার পরীক্ষা করেও তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আমরা আশা করেছিলেন, তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। কিন্তু হলো না। তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন। এই সংকটকালে তাঁর এভাবে চলে যাওয়াটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।

রাজনীতির সঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম সম্পৃক্ত হন ষাটের দশকে। শুরুর দিকে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও পরে ছাত্রলীগে যোগ দেন। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। জেলখানায় আরো তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে তাঁর পিতা এম মনসুর আলী হত্যাকাণ্ডের পরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হন। পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ নাসিমকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সেই সময় দীর্ঘদিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে।

উনিশশো একাশি সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে মোহাম্মদ নাসিম যুব সম্পাদক নিযুক্ত হন। তখন থেকেই কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অপরিহার্য হয়ে উঠতে শুরু করেন তিনি। রাজনীতির বিভিন্ন পর্যায়ে মোহাম্মদ নাসিমকে অনেকবার কারাবন্দী হতে হয়েছে। প্রথম তাকে কারাগারে যেতে হয় ১৯৬৬ সালে, যখন তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। সেই সময় পাকিস্তান সরকারের ভুট্টা খাওয়ানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে পিতা এম মনসুর আলীর সঙ্গে কারাগারে যেতে হয় মোহাম্মদ নাসিমকেও। এক বছর পরে তিনি ছাড়া পান।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মোহাম্মদ নাসিম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন। তখন ঝিনাইদহ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, খুন খারাপির অভয়ারণ্য ছিল। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ডাকে সাড়া দিয়ে সেই সময় অনেক সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণ করেন। আর এই এলাকাকে তিনি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ মুক্ত করেন। যে কারণে এই অঞ্চলের জনসাধারণ আজও তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। শুধু তাই নয়, তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর সারাদেশে পরিবহন চাঁদাবাজি বন্ধ করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এরশাদ, খালেদাবিরোধী সব আন্দোলনে সাহসের সঙ্গে তিনি রাজপথে লড়াই করেছেন। তার এই লড়াই আমাদেরকে সাহস যুগিয়েছে বিভিন্ন সময়। 

মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর আমরা একজন বর্ষীয়ান, আদর্শবান, সাহসী নেতাকে হারালাম। যা কখনোই এই দেশের রাজনীতিতে পূরণ হওয়ার নয়। তিনি এদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণকারী প্রতিটি ব্যক্তির হৃদয়ে রাজনীতির কিংবদন্তী হিসেবে বেঁচে থাকবেন। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দলের জন্য তাঁর অবদান মানুষ চিরদিন স্মরণ করবে। তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। ভালো থাকবেন নাসিম ভাই।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ

 

ঢাকা/তারা