ইয়াসিন হাসান ইংল্যান্ড থেকে

বৃষ্টি মাথায় নিয়ে প্রিয় ক্রিকেটারদের দেখার আনন্দ

ব্রিস্টল থেকে ক্রীড়া প্রতিবেদক :  ‘সাকিব ভাই একটু বের হন না...।, ‘মুশফিক ভাই বেস্ট অব লাক’, ‘তামিম...তামিম...তামিম...।, ‘মাশরাফি ভাই আপনি কই ...।, ব্রিস্টলে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিং রুমের সামনে এভাবেই চিৎকার, চেঁচামেচি করছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। শুধু প্রবাসীরা নন, বাংলাদেশ থেকে অনেকেই এসেছেন প্রিয় দলকে সমর্থন করতে, উৎসাহ জোগাতে। কিন্তু বেরসিক বৃষ্টি তাদের উৎসবে পানি ঢেলে দিয়েছে।  ব্রিস্টলে প্রায় ১৫ হাজার বাংলাদেশির বসবাস। এখানে পা দিয়ে জানা গিয়েছিল খেলা দেখার জন্য প্রায় ৮ হাজার বাংলাদেশি বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের টিকিট কিনে রেখেছেন।স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক নারী সমর্থক বললেন,‘আমরা মাস ছয়েক আগে এ ম্যাচের টিকিট কেটে রেখেছি। এখানে খেলা হবে আর আমরা বাংলাদেশের জন্য চিৎকার করব না, তা কি হয়।’ ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আম্পায়ার্স বিভাগে লিঁয়াজো অফিসার হিসেবে কাজ করতেন রাশাদ বিন করিম। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ায় যান। সেখান থেকে দুই বছর হলো ইংল্যান্ডের প্লাইমাউথে থিতু হয়েছেন। ব্রিস্টল থেকে প্লাউমাউথের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। আজ সকালেই সেখান থেকে বাংলাদেশের খেলা দেখতে চলে আসেন ব্রিস্টলে। সাথে ছিল পরিবারের আরও তিন সদস্য। বৃষ্টির সম্ভাবনা জেনেও মাঠে এসেছেন। কেন? ‘অনেক দিন পর খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছি। টনটনে ১৭ জুনের ম্যাচটাও দেখব। প্রিয় দলের খেলা। খুব কাছ থেকে ক্রিকেটার সবাইকে দেখেছি। তাই চলে এলাম ম্যাচ দেখতে। আশা করছি কয়েকটি ওভার হলেও দেখতে পারব’ – বলছিলেন রাশাদ। ‘মা... আমি এখানে। হয়তো জিতব নয়ত শিখব’- এমন প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সিলেটের ব্যবসায়ী জামাল। ব্রিস্টল থেকে খানিকটা দূরের এক শহরে থাকেন। কাপড়ের ব্যবসা করেন। ১৫-২০ জন বন্ধুবান্ধব নিয়ে এসেছিলেন ম্যাচ দেখতে। চড়া দামে কিনেছেন টিকিট। ম্যাচ হবে কি হবে না, তা নিয়ে তার একটুও মাথা ব্যথা নেই। প্রিয় দলের প্রিয় ক্রিকেটারদের কাছ থেকে দেখার ইচ্ছা। তাইতো ড্রেসিং রুমের সামনে দাঁড়িয়ে তার উল্লাসের কমতি নেই। সিনিয়র ক্রিকেটাররা কেউ ড্রেসিং রুমের বাইরে না আসলে সাব্বির, মোসাদ্দেক, মিরাজরা এসেছিলেন। তাদের দেখেই মন ভরেছে, ‘একটু মাশরাফিকে ছুঁয়ে দেখতে পারতাম...এমপি সাহেবের তো দেখাই পেলাম না।  ওদের দেখলাম (মিরাজ, মোসাদ্দেক, সাব্বিরকে দেখিয়ে)। কী যে ভালো লাগছে।  বাংলাদেশ...বাংলাদেশ।’ স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ২২ বছর ধরে ইংলান্ডে বসবাস করছেন জসিম উদ্দিন। তার দুই সন্তানই সাকিবের ভক্ত। বৃষ্টিতে মন খারাপ তার দুই সন্তানেরই।তবে ম্যাচটি শুরু না হওয়ায় হতাশ তিনি। বিশেষ করে টানা দুই হারের পর বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের প্রত্যাশায়। কিন্তু বৃষ্টিতে ম্যাচ নিয়ে শঙ্কা। হতাশা ঝরল জসিম উদ্দিনের কন্ঠে, ‘আমাদের জন্য এই ম্যাচটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু আকাশের যা অবস্থা তাতে করে খেলা হবে না মনে হচ্ছে। আজ আমাদের নিশ্চিত ২ পয়েন্ট পাওয়ার ম্যাচ ছিল। কিন্তু এভাবে পয়েন্ট হারালে তো সেমিফাইনাল খেলতে পারব না।’ আগের দিন বিকেল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির থামার কোনো ‘নামগন্ধ’ নেই।  আজও সারাদিন বৃষ্টির পূর্বাভাস। স্থানীয়রা জানালেন, এখানকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসও ভুল করে। আজ তেমন একটি দিনের প্রত্যাশা করছেন তারা। অলৌকিকভাবে যদি বল মাঠে গড়ায় এতটুকুর নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে যে, ব্রিস্টলের পুরো গ্যালারি থাকবে লাল-সবুজের দখলে। রাইজিংবিডি/ব্রিস্টল/১১ জুন ২০১৯/ইয়াসিন/পরাগ