ইয়াসিন হাসান ইংল্যান্ড থেকে

তিন বন্ধুর সংগ্রহশালায় ৯০০০ অটোগ্রাফ

সাউদাম্পটন থেকে ইয়াসিন হাসান : ‘হেই মাশরাফি, ক্যান আই হ্যাভ ইউর অটোগ্রাফ প্লিজ!’ হোটেল থেকে বের হওয়ার পথে মাশরাফিকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন পিটার। সময় ও সুযোগ থাকলে কখনোই ভক্ত, সমর্থকদের আবদার না মিটিয়ে যান না মাশরাফি বিন মুর্তজা। এবারও তা করলেন না। টিম বাসে ওঠার আগে পিটারের তিন ছবিতে মাশরাফি হাত বুলালেন। পাশেই তার বন্ধু পল ও টনি। ওখানে ছিলেন বাংলাদেশি এক ছেলে। তার কালো রঙের টি-শার্টের ওপর আঁকানো ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। সাদা কাগজে যখন অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন, তখন মাশরাফির চোখের সামনে লাল-সবুজের বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশকে পিটার চেনেন ২০১৭ সাল থেকে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশকে খেলতে দেখে মাশরাফি, সাকিব, মাহমুদউল্লাহদের সম্পর্কে জানেন। শুধু পিটারই নন, তার দুই বন্ধুও দুই বছর আগে থেকে বাংলাদেশকে চেনেন। ত্রয়ী বন্ধু ২০১০ সালের কোনো এক উজ্জ্বল সকালে প্রাণবন্ত আড্ডায় সিদ্ধান্ত নেন গলফার, ফুটবলার ও ক্রিকেটাদের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করবেন। বন্ধু-বান্ধবদের আড্ডায় নেওয়া হাজারো সিদ্ধান্তের মধ্যে হাতে গোনা টেকে কয়েকটা! এই ত্রয়ীর সিদ্ধান্ত টিকে যায়। সেই থেকে শুরু। নয় বছর ধরে অটোগ্রাফ সংগ্রহ করে যাচ্ছেন তারা। তাদের নেওয়া প্রথম অটোগ্রাফ ছিল গলফার এডওয়ার্ড মোলেনারির। তিনজনের মধ্যে পিটার হচ্ছেন গুরু। তার সঙ্গেই হলো কথোপকথন, ‘আমরা ৯ হাজার অটোগ্রাফ এরই মধ্যে সংগ্রহ করেছি। বাসায় বিশাল সংগ্রহ।’ বাংলাদেশ সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা যখন অটোগ্রাফ নেওয়া শুরু করেছি তার আগে বাংলাদেশ একবারও সফরে আসেনি। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি চলার সময় শ্রীলঙ্কার কোচ (ব্যাটিং) সামারাবীরা আমাকে মাশরাফির অটোগ্রাফ এনে দিয়েছিল। তখনই তোমাদের দেশ সম্পর্কে জানতে পারি।’ ‘কিছুক্ষণ আগে সাকিব খাবার ডেলিভারি নিচ্ছিল। ওকে গিয়ে বললাম অটোগ্রাফ লাগবে। সময় নিয়ে কয়েকটা অটোগ্রাফ দিল। ভেরি গুড পারসন।’ সাকিবের আগে সাত সকালে তাদের সঙ্গে দেখা হয় লিটনের। ডানহাতি ব্যাটসম্যানও তাদের আবদার মেটান। তিনটি ভাগে তারা অটোগ্রাফ সংগ্রহ করেন। পিটার নেন ব্যক্তিগত ছবিতে। পল নেন গ্রুপ ছবিতে। আর টনি ব্যক্তিগত মাইলস্টোন। সাউদাম্পটনের তিন বাসিন্দার জীবন চলছে এভাবেই। আজ বাংলাদেশের তো কাল ভারতের। কাল ভারতের তো পরশু অন্য কোনো দলের কিংবা অন্য কোনো সুপারস্টারের! নাহ, কোনো সুপারস্টারের পেছনে তারা ছুটেন না। তাদের কাছে সবাই সমান। তাইতো বলেন, ‘ওরা ক্রিকেটার, ফুটবলার কিংবা গলফার। হয়তো ওদের পরিচয় জানি না। একদিন তো ওরা বড় হবে নাকি। চিয়ার্স।’ মাঝবয়সি পিটার, টনি ও পল ঘুরে বেড়ান এই স্টেডিয়াম থেকে ওই স্টেডিয়ামে। এই টিম হোটেল থেকে ওই টিম হোটেলে। এই ত্রয়ীর বন্ধুত্ব এখন শুধু অটোগ্রাফ নেশায় মগ্ন।

   

রাইজিংবিডি/সাউদাম্পটন/২৩ জুন ২০১৯/ইয়াসিন/পরাগ