ইয়াসিন হাসান ইংল্যান্ড থেকে

সাকিবের ‘টার্গেট’ যখন সাকিবের প্রেরণা

বার্মিংহাম থেকে ইয়াসিন হাসান : কী চাইছেন, তা কাউকে বলেননি। কোথায় গিয়ে থামতে চান, তা নিজেও জানেন না। আকাশ ছোঁয়ার লক্ষ্য নিয়ে উড়ে এসেছিলেন ইংল্যান্ডে। তাই সীমানাটা দেখতে পাচ্ছেন না নিজেও। উড়ন্ত সাকিব আল হাসান উড়ছেন বিশ্বমঞ্চে। রঙিন করছেন তার ভুবন। রংধনুর সাত রঙে রাঙাচ্ছেন ক্যানভাস।  তার অপ্রতিরোধ্য পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপে দাপটের সঙ্গে চলছে বাংলাদেশ। কী করেছেন সাকিব? চলুন সাকিবনামায় তা জানা যাক।

বিশ্বমঞ্চে বিশ্বকীর্তি

বিশ্বকাপে খুব কম খেলোয়াড়ই আছেন যারা নিজেদের মেলে ধরতে পারেন। পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদির কথাই ধরুন। ওয়ানডেতে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে আফ্রিদি থাকবেন শীর্ষ পাঁচে। কিন্তু বিশ্বমঞ্চে তাকে খুঁজে পেতে হবে দূরবীন দিয়ে! ২৭ ম্যাচে তার রান মাত্র ৩২৫, উইকেটসংখ্যা ৩০। সেখানে সাকিব সমান ম্যাচে রান করেছেন ১০১৬, উইকেট নিয়েছেন ৩৩টি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ৫১ রানের ইনিংস খেলার পথে সাকিব ছুঁয়েছেন বিশ্বকাপে হাজার রানের মাইলফলক। ৫ উইকেট নিয়ে ছাড়িয়েছেন ত্রিশের কোটা। বিশ্বকাপে এক হাজার রান ও ৩০ উইকেটের ডাবল শুধু সাকিবের নামের পাশে। তার ধারেকাছেও নেই কেউ। সনাৎ জয়াসুরিয়া ৩৮ ম্যাচে ১১৬৫ রান ও ২৭ উইকেট পেয়েছেন। জ্যাক ক্যালিস ১১৪৮ রান ও ২১ উইকেট পেয়েছেন।

অনন্য সাকিবের অসাধারণ অর্জন

একই ম্যাচে ফিফটি ও ৫ উইকেট। যে কোনো অলরাউন্ডারের জন্য এই পারফরম্যান্স অরাধ্য। ১৯৮৭ সালে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস ১১৯ রান ও ৫ উইকেট পেয়েছিলেন।  এরপর ১৯ বার ওয়ানডে ক্রিকেটে এমনটা দেখেছে বিশ্ব। সাকিব সবশেষ অলরাউন্ডার হিসেবে ঢুকেছেন এই এলিট ক্লাবে। কিন্তু বিশ্বকাপে কজন পেরেছেন এমন কীর্তি?

আগের এগারো আসরে শুধুমাত্র ভারতের যুবরাজ সিং এমনটা করেছিলেন। ২০১১ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫০ রান ও ৩১ রানে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন। এবার সাকিব ব্যাট হাতে ৫১ রান ও ২৯ রানে পেয়েছেন ৫ উইকেট। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের এ যেন আরেক মহামূল্যবান অর্জন। 

সুপারম্যান ফ্রম বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় পোস্টারবয় বলা হয় তাকে। সুপারস্টার, সুপারম্যান সাকিব। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে হাজার রান করেছেন। আর পাঁচ উইকেটও প্রথম। ওয়ানডে ক্রিকেটে তার দ্বিতীয় পাঁচ উইকেট এলো বিশ্বমঞ্চে। সাকিব বিশ্বকাপে এবার ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নিজেকে। ব্যাটিংয়ে ৪৭৬ রান, বোলিংয়ে ১০ উইকেট।  দলের তিন জয়ের সবগুলোতেই ম্যাচসেরা। তাইতো গৌরবের তিলক মানায় তার কপালেই। আফগানিস্তানের ম্যাচে পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। ওয়ানডেতে তার ২১তম। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ।

সাকিবের তিনে তিন

দল জিতে চলেছে সাকিবের পারফরম্যান্সে। সাকিবের অর্জনের ঝুলিতে বাড়ছে ম্যাচসেরার পুরস্কার। বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচসেরার পুরস্কার। এমন কীর্তি নেই বাংলাদেশের আর কারও। ইমরুল কায়েস ও মোহাম্মদ আশরাফুল সর্বোচ্চ দুবার করে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। বিগম্যান সাকিব তৈরি করেছেন নতুন ল্যান্ডমার্ক।  

সাকিবের ‘টার্গেট’ যখন সাকিবের প্রেরণা

নিজেকে কোথায় দেখতে চান সাকিব? বিশ্বকাপের আগে কিংবা মাঝপথেও মুখ দিয়ে কিছু বলেননি। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর সাকিব বললেন,‘কোনো টার্গেট থাকলে সেটা অর্জন করার তাড়না থাকে। সেটা অর্জন করতে পারলে অবশ্যই ভালো লাগে।’ তারমানে বিশ্বমঞ্চে এভাবে পারফরম্যান্স করবেন সেই টার্গেট নিয়ে এসেছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। নিজের ভেতরের তাড়না তাকে জাগিয়ে তুলেছে বারবার।   ‘আমি আমার পারফরম্যান্স র্যা ঙ্কিং করি না। বোলিং ও ব্যাটিংয়ে যখন অবদান রাখতে পারি তখন আমি নিজ থেকে সন্তুষ্ট হই’- সাকিব বলছিলেন আর হাসছিলেন।

মাইডাস টাচ

সেরা অলরাউন্ডার বলতে যা বুঝায় তার সব উপাদানই রয়েছে সাকিব নামের কিংবদন্তির। সে-কালের ইমরান খান, ইয়ান বোথাম নিজেদের কারিশমা দেখিয়েছেন।  মাঝে জ্যাক ক্যালিস, সনাৎ জয়াসুরিয়া দ্যুতি ছড়িয়েছেন। সাকিব এ-কালের সবচেয়ে বড় নাম। সবচেয়ে বড় অলরাউন্ডার।ধ্রুপদী সাকিব যেন বিশ্বক্রিকেটের মাইডাস টাচ, যার সংস্পর্শে সব সোনায় পরিণত হয়। রাইজিংবিডি/বার্মিংহাম/২৫ জুন ২০১৯/ইয়াসিন/পরাগ