ম্যানচেস্টার থেকে ইয়াসিন হাসান: শেষ কবে ক্রিকেটের জন্য ম্যানচেস্টারে এতোটা উন্মাদনা দেখেছেন বাংলাদেশের সোহেল উদ্দিন তা নিজেও মনে করতেন পারছেন না। অথচ ম্যানচেস্টারে তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন দীর্ঘ ১০ বছর। পেশায় ট্যাক্সি ড্রাইভার।
ক্রিকেট মানে তার কাছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ কিংবা ভারত, ইংল্যান্ডের কোনো সিরিজ। এখানে ফুটবল সব কিছু, ফুটবল মানে জীবন আনন্দ। কেন-ই বা থাকবে না। যে শহরে ক্রিকেট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ম্যানচেস্টার সিটির মতো ক্লাব পাশাপাশি মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে সেই শহরে ক্রিকেট পাগলামিটা একটু কমই। এখানে লাল-নীল বলতে মানুষ পাগল। ওল্ড ট্রাফোর্ডে লালের আধিপত্য, ইত্তিহাদে নীলের। ফুটবেলের উন্মাদনার ভিড়ে ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতি করার লোক হাতে গোনা কয়েকজন। ‘বহিরাগত’ যারা আছে তারাই এখন ক্রিকেট নিয়ে মজা পাচ্ছে। সেই মজা পাওয়া কেন্দ্রবিন্দু ম্যানচেস্টারের সেমিফাইনাল।
আর মাত্র তিনটি ম্যাচ। এরপরই শেষ ক্রিকেট বিশ্বকাপের উত্তেজনা। হয়তো বিশ্বকাপ মুকুটের পালাবদল হবে নয়তো শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ধরে রাখবে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। সাত সপ্তাহ, ৪৫ ম্যাচের পর বিশ্বকাপের দরজায় এখন কড়া নাড়ছে সেমিফাইনাল। শেষ চারের প্রথম যুদ্ধে দুপুরে মাঠে নামতে যাচ্ছে ভারত ও নিউজিল্যান্ড। লাল-নীলের শহরে ময়দানী যুদ্ধে নামবে নীল-কালোর দল।
লড়াইটা দলগত না হয়ে দুই দলের অধিনায়কের বললেও খারাপ হবে না। ১১ বছর আগে ২০০৮ সালে যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলেন বিরাট কোহলি ও কেন উইলিয়ামসন। উইলয়ামসনকে কাঁদিয়ে বিরাট গিয়েছিল ফাইনালে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে জিতেছিলেন শিরোপা। এবার সেই একই মঞ্চে আবার তারা দুজন। কিন্তু এবার বেড়েছে দায়িত্ব, বেড়েছে মর্যাদা। দুই অধিনায়ক আবেগতাড়িত নিজেদের পুরনো লড়াই নতুন করে সামনে আসায়। লড়াইটা যখন বিশ্বকাপের মঞ্চে তখন টিম ইন্ডিয়া অনেকটাই নির্ভার।
ভারত ছয়টি সেমিফাইনাল খেলেছে আগের ১১ বিশ্বকাপে। এর মধ্যে তিনটিতে গিয়েছিল ফাইনালে, শিরোপা জিতেছে দুটিতে। আর নিউজিল্যান্ডের পোড়া কপাল! বেচারারা বিশ্বকাপের ১১ আসরে সেমিফাইনাল খেলেছে সাতবার, অথচ ফাইনালে গেছে মাত্র একবার। শেষবারই খেলেছিল ফাইনাল। কিন্তু সেবারও তাদের ভাগ্যে জুটেনি বিশ্বকাপ। তাই এবারের লড়াইটা তাদের জন্য অনেক অরাধ্য।
তবে তাদের সাফল্যর পথ মসৃণ ছিল না। শেষ ম্যাচ পর্যন্ত তাদের সেমিফাইনালের ভাগ্য ঝুলে ছিল। ক্রিকেট বোদ্ধারা অনেকেই বলছে, সেমিফাইনালের জন্য উপযুক্ত দল নয় নিউজিল্যান্ড। তাঁদের জায়গায় পাকিস্তানকে চাইছে অনেকে। বৃষ্টিতে পাওয়া পয়েন্ট, ক্লোজ ম্যাচ শেষ মুহূর্তে জিতে নেওয়া এবং ভাগ্যদেবীর পূর্ণ সমর্থণে প্রি-ফাইনালের লড়াইয়ে ব্ল্যাকক্যাপসরা।
অন্যদিকে বিরাট কোহলির টিম ইন্ডিয়া শীর্ষে থেকে শেষ করেছে প্রথম পর্বের লড়াই। তাদের পথ ছিল পুরোটাই মসৃণ। শীর্ষে উঠতে তাদের সামনে বাঁধা হয়েছিল কেবল ইংল্যান্ড। এর বাইরে তাদের সামনে দাঁড়াতে পারেনি কেউ। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে দুই দলের লড়াইয়ে কিন্তু ভারতকে চোখ রাঙানি দিচ্ছে কিউইরা। সাত মুখোমুখিতে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে আছে কিন্তু কিউইরা। তবে ম্যানচেস্টারে টিম ইন্ডিয়াই কিন্তু এগিয়ে আছে। সেটা কিভাবে।
বিশ্বকাপে ভারত এ মাঠে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেছে। বিশাল ব্যবধানে জিতেছে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিনরা। ম্যানচেস্টারের কন্ডিশন, উইকেট সব কিছুই তাদের চিরচেনা। অন্যদিকে উইলিয়ামসন, রস টেলররা প্রথমবারের মতো নামতে যাচ্ছে। তাদের জন্য কন্ডিশন, উইকেট কিছুটা হলেও নতুন, কঠিন। বাড়তি সুবিধা নিয়ে যে ভারত নামতে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সেমিফাইনালের মঞ্চে বাড়তি সুবিধা পাওয়া কিংবা না পাওয়া গোনায় আসে না। লড়াইটা যখন শিরোপার, তখন ময়দানী যুদ্ধে কোনো ছাড় নেই।
২০০৮ সালের বদলা নেওয়ার সেরা সুযোগ এসেছে উইলিয়ামসনের সামনে। বিরাট কোহলি সুযোগ দেবেন না তা তো সবারই জানা। দুই সেরা ক্রিকেটারের লড়াইয়ে সেমির লড়াই পাচ্ছে ভিন্ন মাত্রা। যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে শেষ হাসিটা কে হাসে সেটা দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেটাররা। তবে তাদের ক্রিকেট উৎসবে বাঁধা তৈরি করতে পারে বেরসিক বৃষ্টি। ম্যানচেস্টারে গতকাল সন্ধ্যা থেকে ঝিরঝির বৃষ্টি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, দুপুর পর্যন্ত ঝিরঝির বৃষ্টি থাকবে।
রাইজিংবিডি/ম্যানচেস্টার/৯ জুলাই ২০১৯/ইয়াসিন/শামীম