বেশ কিছুদিন ইলিশ নিয়ে কথা হয় না। পেঁয়াজ যখন মূল আলোচ্য বিষয় তখন ইলিশ আড়াল হয়ে যায়! ওই আড়াল থেকেও একটি বিষয় উঠে এসেছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে আতিথেয়তা দিতে ইলিশ কিন্তু রেখেছিল আয়োজকরা। মা বা স্ত্রীর হাতের রান্নার মতো মজা না হলেও দীর্ঘদিন পর ইলিশ পেয়ে চেটেপুটে খেয়েছে সবাই। দলেরই একজন যেমন বলছিলেন, ‘আমার একটু ডাল ভাত হলেই হয়। এখানে ইলিশ খেয়ে মনটা জুড়াইছে…।’
ইলিশের স্বাদ মুখে নিয়ে আজই মাঠে নামছে বাংলাদেশ। সাথে থাকছে নতুনত্বের ছোঁয়া। শেষ দুই টেস্টে বাংলাদেশ কিছু না কিছু নতুনত্ব নিয়ে মাঠে নামছে। চট্টগ্রামে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জার্সির পেছনে ছিল নাম ও নাম্বার। ভারতের বিপক্ষে ইন্দোরে ম্যাচটি ছিল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী ম্যাচ। এবার বাংলাদেশ নাম লিখাচ্ছে দিবারাত্রি টেস্ট ক্রিকেটের ক্লাবে। যে ক্লাবে বাংলাদেশের সাথে ঢুকে পড়ছে ভারতও।
দুই দলই আজ প্রথমবারের মতো খেলবে গোলাপি বলের টেস্ট ক্রিকেট। এজন্য ক্রিকেটের নন্দনকানন এখন গোলাপিময়। মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে পড়েছে গোলাপি আলোকচ্ছটা। শহরের বিভিন্ন জায়গা গোলাপি আলোয় রাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। শহীদ মিনারের আলোর রঙও গোলাপি করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কলকাতা মিউনিসিল্যালটির বেশ কিছু পার্ককেও গোলাপি আলোতে সাজানো হয়েছে। বুধবার থেকে টাটা স্টিল বিল্ডিংয়ে চলছে থ্রিডি ম্যাপিং। এছাড়া চোখে পড়েছে কয়েকটি বিল বোর্ডও। যেখানে বড় করে লিখা, ‘ইন্ডিয়া’স ফাস্ট পিঙ্ক বল টেস্ট।’
উপমহাদেশের প্রথম গোলাপি টেস্টকে ঘিরে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে তা ছুঁয়ে যাচ্ছে ক্রিকেটারদেরও। তবে দুই দলই আবেগকে সরিয়ে মাঠে নামতে মুখিয়ে। মুমিনুল যেমন বলছিলেন, ‘রোমাঞ্চটা চলে এসেছে যে গোলাপি বলে কিভাবে খেলব কিংবা কিভাবে খেলা হবে সেটা নিয়ে। আমাদের রোমাঞ্চ মূলত খেলাটি নিয়েই। দিন শেষে আপনাকে তো ক্রিকেটই খেলতে হবে। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে চিন্তা করলে এসব চিন্তা আসা উচিত না।’
মুমিনুলের আগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি ২২ গজে যতটা আত্মমণাত্মক সংবাদ সম্মেলনে ঠিক ততোটাই বিশ্লেষণধর্মী। এর আগে ভারত একাধিকবার গোলাপি বলে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিল। কিন্তু কোনোবারই রাজী হয়নি। এবার ‘দূর্বল’বাংলাদেশকে পেয়ে তারা গোলাপি বলে অভিজ্ঞতা নিতে চাইছে! এমনটা ভাবনা অনেকের। কোহলির কাছে প্রায় ভাবনার এক প্রশ্ন করা হয়েছিল গতকাল। রাগচটা মেজাজে ভারতের অধিনায়ক উত্তর দেন এভাবে, ‘অবশ্যই আমরা গোলাপি বলের ক্রিকেটের স্বাদ পেতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত এটা হচ্ছে। হঠাৎ করে একটা সফরের আগে সূচিতে একটা গোলাপি বলের টেস্ট যুক্ত হতে পারে না।’
বাংলাদেশ ভারতের দ্বিপাক্ষিক সিরিজের সূচিতেও ছিল না গোলাপি বলের টেস্ট। ভারতের ক্রিকেটের মহারাজ বিসিসিআইয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর ঐতিহ্যবাহী ইডেন টেস্ট রাঙানোর পরিকল্পনা নেন। প্রথমেই তার মাথায় আসে গোলাপি টেস্ট। বিসিবিকে প্রস্তাব দেওয়ার পর বিসিবিও তাতে রাজি হয়। এরপর শুরু হয় মহাযজ্ঞ। গাঙ্গুলীর আমন্ত্রণে আজ ইডেনে উপস্থিত হবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
ঘন্টা বাজিয়ে টেস্ট শুরু করবেন শেখ হাসিনা। এছাড়া টেস্ট রাঙাতে সারাক্ষণ থাকছে বিভিন্ন আয়োজন। মাঠে বল গড়ানোর আগেই ইডেন টেস্ট জমে উঠেছে। তবে মাঠের ক্রিকেটে টেস্ট জমবে কিনা তা জানা নেই কারোরই। দুই দলের বর্তমান পারফরম্যান্স বলছে ইডেনেও আকাশ-পাতাল পার্থক্য থাকবে। তবে ওয়ার্ল্ড নম্বর থ্রি ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ একটা কাজ করতেই পারে। চেষ্টা। আউট অব বক্স পারফর্ম করে সবাইকে চমক দেওয়ার সেরা মঞ্চ হতে পারে ইডেন। কারণ, ইডেন বরাবরই চমক দেখাতে ‘ওস্তাদ।’এবারের ঐতিহাসিক ম্যাচটি চমক দেখালে মন্দ হয়না মোটেও।
ক্রিকেটে বাংলাদেশ-ভারত ব্যাট-বলের লড়াই মানেই বারুদের জ্বলামুখ! অলিখিত যুদ্ধংদেহী ভাব! সীমানার এপার-ওপারে সেই উত্তেজনা আছে। পদ্মা-গঙ্গার উত্তাল ঢেউও বলে দিচ্ছে ইডেন উপহার দেবে বারুদে ঠাঁসা এক ম্যাচ। তাইতো চারদিনের টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি করেছে আয়োজকরা। ইডেনের অসংখ্য মণি-মাণিক্যের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই থাকবে বাংলাদেশ ও ভারতের গোলাপি বলের টেস্ট।
মাঠে পাওয়া যাবে নতুনত্ব। ক্রিকেটারদের শারীরিক ভাষাতেও থাকবে সেই রোমাঞ্চ। কিন্তু ‘গোলাপি’আবেগ সরিয়ে দুই দলই মনোযোগী নিজেদের সেরা ক্রিকেট উপহার দিতে।
কলকাতা/ইয়াসিন/আমিনুল