ইয়াসিন হাসান ভারত থেকে

উৎসবের মঞ্চে বিবর্ণ বাংলাদেশ

উৎসবের মঞ্চে এমন বিপর্যয়।  এ যেন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ।

বাংলাদেশ থেকে আরও ভালো প্রতিদ্বন্দ্বীতার প্রত্যাশা করেছিল সবাই। কিন্তু ইডেনে উপমহাদেশের প্রথম দিবারাত্রির টেস্টে বাংলাদেশ পথ হারাল আরও একবার।  ইন্দোরে ব্যাটিং বিপর্যয়ে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ১৫০ রানে।  এবার ইডেনে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করল মাত্র ১০৬ রান।  জবাবে ভারত প্রথম দিনই ম্যাচের নাঁটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।  পূঁজারার ৫৫ ও বিরাট কোহলির অপরাজিত ৫৯ রানে ৩ উইকেটে ভারত তুলেছে ১৭৪ রান।  প্রথম দিনই স্বাগতিকদের লিড ৬৮ রান।

ইডেন মানেই আভিজাত্য।  ইডেন মানেই ইতিহাস।  ঐতিহাসিক ইডেনে আজ রাঙাল নতুন রঙে।  ভারত ও বাংলাদেশের প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট।  পুরো কলকাতা এখন গোলাপিময়।  আয়োজক দেশের বোর্ড প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলীর আমন্ত্রণে এ টেস্ট উদ্বোধন করতে দেশ থেকে উড়াল দিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ঘন্টা বাজিয়ে টেস্ট শুরু করেছেন শেখ হাসিনা।  তার পাশেই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

টস জিতে মুমিনুল হক ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন।  ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত সাহসিকতা নাকি আত্মঘাতী ছিল তা বলা মুশকিল! গোলাপি বলে এর আগে কখনো খেলেনি বাংলাদেশ।  শক্তিধর ভারতের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে তাই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া বেশ সাহসিকতাই বটে। 

যদিও দিনের খেলা শেষ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছেন,‘আমাদের প্রথম ৬ ওভারের ব্যাটিং বলে দিচ্ছে সিদ্ধান্ত ভালো ছিল, কিন্তু পরের ব্যাটিং আবার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।’ প্রথম ৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারানো বাংলাদেশ পরবর্তী ২৪ ওভারে হারিয়েছে ১০ উইকেট।

ইশান্ত একাই নিয়েছেন ৫ উইকেট।  গোলাপি বলে প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে পেয়েছেন পাঁচের স্বাদ। এছাড়া উমেশ যাদব ৩টি ও শামি পেয়েছেন ২ উইকেট।  পেসাররা উইকেট ভাগাভাগি করে নেওয়ায় স্পিনাররা দ্যুতি ছড়ানোর সুযোগই পাননি। 

ব্যাটিংয়ে বরাবরের মতোই ভরাডুবি।  কোনো পরিকল্পনা ছিল না ব্যাটসম্যানদের।  ছিল না মাঠে পড়ে থাকার তাড়ণা।  কোথায় উৎসবের মঞ্চে শক্তহাতে প্রতিরোধ গড়বেন, দেয়াল হয়ে দাঁড়াবেন ২২ গজে।  সেখানে ব্যাটসম্যানরা কেউই ভালো কিছু করতে পারেননি।  সর্বোচ্চ ২৯ রান করা সাদমান হাঁকিয়েছেন ৫ বাউন্ডারি।  এছাড়া রিটায়ার্ড হার্ট হওয়া লিটন ২৭ বলে ৫ বাউন্ডারিতে করেন ২৪ রান।

ইমরুল এবারও ফ্লপ। ইশান্তের বলে ৪ রানে আউট হন এলবিডব্লিউ হয়ে।  পরের চার ব্যাটসম্যান রানের খাতা খুলতেই পারেননি।  মুমিনুল হক, মোহাম্মদ মিথুন ও মুশফিকুর রহিম সাজঘরে ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগে।  সাদমান থিতু হয়েও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হয়েছেন।  মাহমুদউল্লাহ সাদা পোশাকে পায়ের তলায় মাটি খুঁজতে ব্যর্থ আবারও।  ৬ রানে ইশান্তের হাতে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।  এরপর লিটন দারুণ ব্যাটিং করলেও মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন।  মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগেই ৬ ব্যাটসম্যান নেই বাংলাদেশের।

কনকাশন সাবে মিরাজ ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন।  ভালো করতে পারেননি মিরাজও।  এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ১৯ রান করা নাঈমও মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন ইশান্তের বলে।  সাহস নিয়ে এক বল খেলেছিলেন পরবর্তীতে। দ্বিতীয় বলে আউট হয়ে ফিরে আসেন।  তাকে বোল্ড করে ইশান্ত পেয়ে যান পাঁচ উইকেট।  শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আবু জায়েদ আউট হন তখন বাংলাদেশের রান মাত্র ১০৬।  ৩০.৩ ওভারেই শেষ বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস।

এমন হতশ্রী ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে বাংলাদেশ।  কৃত্রিম আলোয় ব্যাটিং করা চ্যালেঞ্জিং হবে বলেছিলেন দুই দলের অধিনায়ক।  কাজটা কঠিন ছিল তা বোঝা গেল দুই ভারতীয় ওপেনারের ব্যাটিংয়ে।  শুরুতে নড়বড়ে ছিল তাদের ব্যাটিং।  সেই সুযোগে বাংলাদেশ প্রথম সাফল্য পেয়ে যায় দ্রুত।  সাড়ে তিন বছর পর দলে ফেরা আল-আমিন সাজঘরে পাঠান ইন্দোরের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে।

বিরতির পর রোহিতকে ফেরান ইবাদত।  ২১ রানে এলবিডব্লিউ হয়ে আউট হন রোহিত।  এরপর তৃতীয় উইকেটে পূঁজারা ও কোহলি ৯৪ জুটি গড়েন।  দিনের শেষ ঘন্টায় সেই জুটি ভাঙেন ইবাদত।  ডানহাতি পেসারের লাফিয়ে উঠা বলে স্লিপে ক্যাচ দেন পূজারা।  দিনের বাকিটা সময় পাড় করেন কোহলি ও রাহানে।  কোহলি ৫৯ রানে ও রাহানে ২৩ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন।  

ব্যাটিং ব্যর্থতায় উৎসবের মঞ্চ বিবর্ণ করেছে বাংলাদেশ।  বাংলাদেশ প্রথম দিবারাত্রির টেস্টের ভবিষ্যত চিত্র এঁকে দিয়েছে প্রথম ইনিংসেই। কলকাতা/ইয়াসিন