ঈদ-আনন্দ || আহসান হাবীব
আহসান হাবীব || রাইজিংবিডি.কম
অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার
একজন টুতে পড়ে, একজন ডাবল টুতে মানে ফোরে। টুতে যে পড়ে তার নাম ধরা যাক মিশু। আর ফোরে পড়ে যে, সে মিতু। ছোট ভাই আর বড় বোন। তো বড় বোন মিতু, ছোট ভাই মিশুকে নিয়ে চলে গেল বাড়ির পেছনে। কিছু একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে মনে হচ্ছে।
জানিস তো এবার কিন্তু আমাদের ঈদ হবে না। বড় বোন মিতু ফিস ফিস করে বলে।
কেন? ছোট ভাইয়ের গলায় আতংক।
: মা আমাকে বলেছে।
: হবে না কেন?
: বাবার বেতন হয় নি।
: বেতন কী?
উফ! তুই এত গাধা কেন? বোনটা বিরক্ত হয়ে বলে, আরে বোকা, বাবা একটা অফিসে চাকরি করে না? সেই অফিসে মাস শেষ হলে বাবাকে টাকা দেয়, সেটাকে বেতন বলে। কিন্তু এবার বাবার অফিসে কাউকে বেতন দিবে না। বোনাসও না।
বোনাস কি? ভাই জানতে চায়।
: ঈদের সময় বেতনের সঙ্গে বারতি টাকা দেয়, সেটাই বোনাস। এবার বাবাকে বেতন বোনাস কিছুই দিবে না।
: কেন দিবে না?
: অফিসের টাকা নেই বোধ হয়।
: কেন নেই?
: তা আমি কীভাবে বলব?
ছোট ভাইয়ের মাথা কাজ করে না। কারণ সে ইতিমধ্যে তার দুজন বন্ধুকে বলে ফেলেছে যে, তার দু’সেট প্যান্ট-শার্ট হচ্ছে, সাথে নতুন জুতো তো থাকছেই। এখন কী হবে? সে বোনের কাছে জানতে চায়, আমরা ঈদের জামা কাপড় কিনব না?
: পাগল! বাবা বাসা ভাড়াই দিতে পারছে না।
: বাসা ভাড়া কী?
: উফ! তুই দেখছি কিছুই জানিস না। আমরা এই যে বাসাটায় থাকি এটা তো আমাদের নিজেদের বাসা না। এই বাসায় মাসে মাসে ভাড়া দিতে হয়।
: এখন তাহলে কী হবে?
ভাইয়ের এমন প্রশ্নে বোনকে অবশ্য বিশেষ চিন্তিত মনে হয় না। ভাইয়ের ছোট্ট মাথাটা কিন্তু গরম হয়ে ওঠে। বোন গলা নামিয়ে বলে, শোন, বাবার কাছে আবার জামাকাপড় কিছু চেয়ে বসিস না যেন। বাবা-মা দু’জনেই চিন্তায় আছে। বাসা ভাড়া দিতে না পারলে আমাদের এখান থেকে চলেও যেতে হতে পারে। তখন যে কোথায় থাকব কে জানে!
আমাদের স্কুল? ভাই কণ্ঠে উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে।
: এর মধ্যে আবার স্কুলের কী হলো?
: না মানে, স্কুলও কি ছেড়ে দিতে হবে?
: আরে না, তুই সত্যিই একটা গাধা। আমরা তখন অন্য বাসা থেকে স্কুলে যাব।
: অন্য বাসায় ভাড়া দিতে হবে না?
এর উত্তর অবশ্য বোনের জানা নেই। সে এর উত্তর না দিয়ে ঘরের দিকে রওনা দিল। পিছে পিছে ভাই। গুরুত্বপূর্ণ গোপন আলোচনা শেষে দু’জনেই ঘরে ফিরে টিভি ছাড়ল। টিভিতে তখন দেখাচ্ছে ঈদে কোন চ্যানেলে কী কী নাটক, অনুষ্ঠান হবে তার ফিরিস্তি। কিন্তু মিশুর সেদিকে মনোযোগ নেই। তার মাথায় অন্য চিন্তা চলছে।
কিন্তু রাতে অন্য ঘটনা ঘটল। বাবা ফিরে এসেই হইচই লাগিয়ে দিলেন। ‘সবাই রেডি হও ঈদের কেনাকাটা করতে হবে না? কাল ঈদ ... কুইক কুইক।’ মিশু অবাক হয়ে বোনের দিকে তাকায়। মিতু তাকায় মায়ের দিকে। মা ভ্রু কুঁচকে তাকান বাবার দিকে। বাবা এবার হুঙ্কার দেন, কী হলো হা করে দেখছ কি জলদি রেডি হও!’
কী আশ্চর্য সবাই মিলে তারা স্কুটার ভাড়া করে সত্যি সত্যি ছুটলো মাকের্টে। মিশুর দুই সেট প্যান্ট-শার্ট কেনা হলো যেমনটা কথা ছিল, সাথে চকচকে নতুন জুতো। মিতুরও দুই সেট সাথে দু’জোড়া স্যান্ডেল। মার জন্য শাড়ি। তবে বাবা কিছু কিনলেন না, তার নাকি গত ঈদের কাপড়ই পরা হয় নি। ফেরার পথে তারা একটা চমৎকার রেস্টুরেন্টে ঢুকে খেলেন ... মজার সব খাবার। সব শেষে মিশু মিতু আইসক্রিমও খেল। সত্যি দারুণ একটা দিন গেল। ঈদের আগেই যেন আরেক ঈদ হয়ে গেল ওদের।
অনেক রাতে বাচ্চারা যখন ঘুমিয়ে গেল। তখন মা এলেন ঘরে। বাবা পেপার পড়ছিলেন। মা বললেন, তোমাকে একটা কথা বলব?
: বলো।
: আমার হাতের সোনার বালাটা হারিয়ে ফেলেছি। কাল থেকে পাচ্ছি না।
বাবা পেপারটা নামিয়ে তাকালেন মার দিকে। বললেন, আসলে কী জানো, কোনো কিছু কখনো হারায় না। জায়গা বদল করে মাত্র। আর জায়গা বদল করে কেন জানো?
: কেন?
: কখনো কখনো হারানো জিনিসের শূন্য জায়গা আনন্দ এসে ভরিয়ে দেয়।
মিশু মিতুর মা কিছু না বুঝে তাকিয়ে থাকেন স্বামীর দিকে। তার মুখটা হাসিতে ভরে উঠেছে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুলাই ২০১৫/তাপস রায়
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন