ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘বইয়ের মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাংলা একাডেমির নয়’

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বইয়ের মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাংলা একাডেমির নয়’

বাংলা একাডেমির আয়োজনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সাহিত্য উৎসব। অমর একুশে গ্রন্থমেলা শিরোনামে এবারের উৎসবে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ। যে কারণে এবারের গ্রন্থমেলায় মুজিববর্ষ ঘিরে থাকছে নানা আয়োজন। গ্রন্থমেলার নানা প্রসঙ্গ নিয়ে রাইজিংবিডির মুখোমুখি হয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ছাইফুল ইসলাম মাছুম।

রাইজিংবিডি: মুজিববর্ষ ঘিরে সারাদেশে নানা আয়োজন চলছে। এবারের গ্রন্থমেলায় মুজিববর্ষ ঘিরে আপনাদের কী ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী: আমরা ২০১৯ সালেই বলেছিলাম, এবারের একুশে গ্রন্থমেলা আমরা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নামে উৎসর্গ করব। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এবারের মেলা আমরা সাজানোর চেষ্টা করেছি। পুরো মেলার বিন্যাস করার চেষ্টা করেছি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। মাঠের পরিধি বেড়েছে। গতবারের চেয়ে এবার বইমেলার পরিধি অনেক বড়। স্টলের সংখ্যা বেড়েছে। যদিও এবারের মেলার অন্তরায় হবে মেট্রোরেলের কাজ। এটা একটা জাতীয় কাজ। ফলে এখানে বাধা সৃষ্টি করা সমীচীন হবে না। সব বিবেচনা করে মেলাটিকে বিভিন্ন পর্যায়ে শুধু সাজানো নয়, বরং মুজিব আদর্শ, মুজিবের লেখালেখি, মুজিবের জীবন নানাভাবে উপস্থাপন করা হবে। বাংলা একাডেমি মেলা উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘আমার দেখা নয়া চীন’ প্রকাশ করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে একাডেমিতে যে আলোচনা অনুষ্ঠান হবে সেখানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গ্রন্থসমূহের আলোচনা হবে, প্রকাশনা উৎসবও হবে। 

বাংলা একাডেমি পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন বছরে একশ বই করবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দিক থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর নানা সৃষ্টিকর্ম, সামাজিক অবদান, রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে তাঁর অংশগ্রহণ সব মিলিয়ে বইগুলো হবে। তারই অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে ২৬টি বই এই মেলায় প্রকাশ হবে। 

রাইজিংবিডি: বাংলা একাডেমি প্রতিবছর অনেক বই প্রকাশ করে। একাডেমি বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেয়?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী: বাংলা একাডেমিতে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় বেশি প্রাধান্য পায়। প্রধানত গবেষণা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা, তারপর আসে লোকজীবন, লোক ঐতিহ্য, লোক গবেষণা। এরপর সৃষ্টিধর্মী বই, যেটাকে আমরা সৃজনশীল বই বলি।

রাইজিংবিডি: প্রতি বছর একুশে গ্রন্থমেলায় গড়ে চার হাজারের বেশি বই প্রকাশিত হয়। বলা হয়ে থাকে প্রকাশিত বইয়ের বড় অংশ মানহীন। এক্ষেত্রে একাডেমির কোনো পর্যবেক্ষণ রয়েছে কিনা?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী: বইয়ের মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাংলা একাডেমির নয়। তবুও বইমেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির যেহেতু সবচেয়ে বড় ভূমিকা সুতরাং এড়িয়ে যাওয়া যায় না। গত বইমেলায় প্রায় চার হাজার পাঁচশ বই প্রকাশিত হয়েছিল। বইগুলোর মান যাচাইয়ের জন্য আমরা কমিটি করেছিলাম। ওই কমিটি প্রাথমিকভাবে এক হাজার ৫০টি বইকে মোটামুটি মানসম্মত বই হিসেবে ধরেছে। সেভাবে একটা তালিকা প্রস্তুত করে আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছিলাম। আমাদের বলার উদ্দেশ্য ছিল- এই বইগুলো পুনঃপাঠের মধ্যমে সঠিক মান নির্ণয় করা হোক। এর মাধ্যমে দুইশ বা পাঁচশ বই অন্তত বের হয়ে এলে অফিসিয়ালি সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় কিংবা বাংলা একাডেমি রাষ্ট্রীয়ভাবে তালিকা প্রকাশ করে জানাবে- বইগুলো বাংলা একাডেমির বিবেচনায় পাঠযোগ্য এবং মানসম্মত। এই বছর বই পর্যবেক্ষণ আমরা আরেকটু গভীরভাবে করার চেষ্টা করব। 

রাইজিংবিডি: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিকাশের জন্য ১৯৫৫ সালে বাংলা একাডেমি যাত্রা শুরু করেছিল। বর্তমানে একুশে গ্রন্থমেলা একাডেমির বড় কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেলার সঙ্গে বাংলা একাডেমি জড়িয়ে পড়ল কীভাবে?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী: জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটা হয়ে গেছে জাতীয় দায়িত্ব হিসেবে। আশির দশকের পর থেকে বাংলা একাডেমি মেলার আয়োজন করছে। বাইরে থেকে সাধারণ লোকের ধারণা হতে পারে, বাংলা একাডেমির সবচেয়ে বড় কাজ বইমেলা করা। কিন্তু আমরা ভেতর থেকে এটা বিবেচনা করি না। আমাদের বড় কাজ হলো- গবেষণায় সহযোগিতা করা, গবেষণাপত্র প্রকাশ করা এবং গবেষণা কর্মে যারা আগ্রহী তাদের নিয়ে নানা আয়োজন করা। আমাদের যে বিভাগগুলো আছে, তারা রুটিন মতো কাজগুলো করে। বইমেলা আমাদের আটটি বিভাগের একটি বিভাগ। এটা হলো বিক্রয় বিপণন বিভাগ; এর অধীনে একমাসব্যাপী বইমেলা হয়। তারা সারা বছর এই কাজের জন্য নিয়োজিত থাকে। বইমেলাকে বাংলা একাডেমির মূল কাজ ধরে নিলে অবিচার হবে।

রাইজিংবিডি: বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পসহ বেশ কিছু প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী: বাংলা একাডেমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়। এখনও গবেষণা পরিকল্পনায় কিছু কাজ হচ্ছে। নতুনভাবে একটা কাজ অনুমোদনের জন্য আমরা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি; সেটা অনুবাদ প্রকল্প। অনুবাদকে প্রধান্য দিয়ে আমরা কাজটি করব।

রাইজিংবিডি: দিনদিন গ্রন্থমেলা আরো বেশি বাণিজ্যিক হয়ে উঠছে। স্টল বরাদ্দের লটারি থেকে শুরু করে প্রকাশকদের মুখে অনেক অভিযোগ শোনা যায়।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী: বইমেলা পরিচালনার জন্য সার্বজনীন একটা কমিটি থাকে, সেখানে প্রকাশকেরাও রয়েছে। আর স্টল বরাদ্দের বিষয়ে, আমি শতভাগ না বললেও ৯৯.৯ ভাগ আমরা স্বচ্ছ থাকার চেষ্টা করি। এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কারো আপত্তি থাকলে আমাদের জানালে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেই। 


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়