ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রবীন্দ্র-জীবনে প্রেম

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ৬ আগস্ট ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রবীন্দ্র-জীবনে প্রেম

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে স্ত্রী মৃণালিনী দেবী এবং ডানে বৌঠান কাদম্বরী দেবী

শাহ মতিন টিপু
রবীন্দ্রনাথের জীবনে প্রেম এসেছিল নীরবে। সেই প্রেম সরব হয়ে ওঠার সুযোগ পায়নি। রবীন্দ্র-জীবনে যে সব নারীদের ঘনিষ্টভাবে পাওয়া যায় তারা হলেন মারাঠি কন্যা আন্না তড়খড়, কাদম্বরী বৌঠান, আর্জেন্টিনার ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো এবং রবীন্দ্ররচনার গুণমুগ্ধ পাঠিকা হেমন্তবালা দেবী।  


মুম্বাই থাকাকালে প্রথম প্রেমে পড়েন রবীন্দ্রনাথ। তখন মুম্বাইয়ের নাম ছিল বোম্বাই। মুম্বাইয়ের এই প্রেমিকা মারাঠি কন্যা। নাম আন্না তড়খড়। এই প্রেম খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও বেশ তাৎপর্যময় ছিল। কেননা জীবনের প্রথম প্রেম বলে কথা! কবি তখন সবে কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে। আন্না ছিলেন বিদুষী, বুদ্ধিমতী। এই মারাঠি কন্যা কবির কাছ থেকে ভালোবেসে একটি ডাক নাম চেয়েছিলেন। কবি ‘নলিনী’ নামটি তার কাব্যভাবনা থেকে শুধুমাত্র তার জন্যই বুঝি তুলে এনেছিলেন। সেই নাম পেয়ে আন্না বলেছিলেন, ‘কবি, তোমার গান শুনলে আমি বোধ হয় আমার মরণ দিনের থেকেও প্রাণ পেয়ে জেগে উঠতে পারি।’


‘নলিনী’ নামটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় ছিল। কবির প্রথম জীবনে রচিত বহু কাব্য-গল্প-নাটকে এই নামটি এসেছে বহুভাবে। বহুকাল পরেও অতুলপ্রসাদ সেন এবং দিলীপকুমার রায়ের সঙ্গে একান্ত আলাপে এই তরুণীর কথা স্মরণ করতে দেখা যায় কবিকে। আন্নার সঙ্গে কবির প্রেম ছিল মাত্র মাসাধিক সময়। বহুদিন তার সঙ্গে কবির পত্র যোগাযোগ ছিল ।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে বয়ঃসন্ধির সংবেদনশীল সেই দিনগুলোতে কাদম্বরী বৌঠান খুব বেশি প্রভাব ফেলেছিলেন। কাদম্বরী বৌঠানকে বলা হয় রবীন্দ্রনাথের স্থপতি। কিশোর মনে ছাপ ফেলতে কাদম্বরীর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। কাদম্বরী এবং রবীন্দ্রনাথ দুজনে প্রায় সমবয়সী ছিলেন। বৌঠান ছিলেন তার জ্যোতিদাদার সহধর্মিণী। কবির অনেক সাহিত্য ও কবিতা সৃষ্টি এই নিঃসঙ্গ, রিক্ত এই নারীটিকে ঘিরেই। কবি তাকে নিয়ে ‘ভারতী’ পত্রিকায় লিখেন, ‘সেই জানালার ধারটি মনে পড়ে, সেই বাগানের গাছগুলি মনে পড়ে, সেই অশ্রুজলে সিক্ত আমার প্রাণের ভাবগুলিকে মনে পড়ে। আর একজন যে আমার পাশে দাঁড়াইয়া ছিল, তাহাকে মনে পড়ে, সে যে আমার খাতায় আমার কবিতার পার্শ্বে হিজিবিজি কাটিয়া দিয়াছিল, সেইটে দেখিয়া আমার চোখে জল আসে। সেই ত যথার্থ কবিতা লিখিয়াছিল। তাহার সে অর্থপূর্ণ হিজিবিজি ছাপা হইল না, আর আমার রচিত গোটাকতক অর্থহীন হিজিবিজি ছাপা হইয়া গেল।’

এই লেখাটি প্রকাশের পরেই ঠাকুরবাড়িতে আগুন জ্বলে উঠেছিল। আর সে কারণেই তার বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়। এর কিছুকাল পরেই কবি বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হলেন। কিশোরী বৌদিটির সঙ্গে বালক রবির সম্পর্ক ছিল সৌখিন ও খুঁনসুটির। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়ার কারণেই এই সুসম্পর্ক দাঁড়িয়েছিল। ‘চারুলতা’ এবং  ‘নষ্টনীড়ে’ সেই ছাপ স্পষ্ট পাওয়া যায়।

রবীন্দ্রনাথকে একটি চিঠিতে হেমন্তবালা লিখেন, ‘আপনি আমার দেবতা, আমার কল্পলোকের রাজা। আমার দুর্ভাগ্য যে, আমার পূর্ণ পূজা আপনার চরণে দিতে পারছি না। আপনি কি আমার মন দেখতে পারছেন না?’
গুণমুগ্ধ এই পাঠিকাকে স্বভাবসুলভ গুণেই আপন করে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

তথ্যসূত্র : বঙ্গভারতী


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ অগাস্ট ২০১৪/ টিপু/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়