দৈববাণী || পেটার হান্ডকে
অলঙ্করণ : শতাব্দী জাহিদ
কোথায় শুরু করবো?
সব কিছু সংযুক্তির বাইরে আর টলোমলো।
বাতাস কম্পিত তুলনায়।
কোন শব্দই অন্যটির চেয়ে ভালো নয়,
পৃথিবী বিস্ফোরিত হয় রূপকসমূহে
- ওসিপ ম্যান্ডেলস্টাম
চারজন কথক (ক, খ, গ, ঘ)
ক
মাছি মাছির মতোই মরবে।
খ
কার্তিকের কুত্তা শুঁকতে থাকবে কার্তিকের কুত্তার মতোই।
গ
পালের শূকর পালের শূকরের মতোই রয়ে যাবে।
ঘ
ষাঁড় গর্জন করবে ষাঁড়ের মতোই।
ক
মূর্তি দাঁড়িয়ে থাকবে মূর্তির মতোই।
খ
মুরগি কক্কক্ করবে মুরগির মতোই।
গ
পাগল লোকটা দৌঁড়াতে থাকবে পাগল লোকটার মতোই।
ঘ
উন্মাদ চেঁচাবে উন্মাদের মতোই।
ক
ঘেয়ো কুকুর ঘুরে বেড়াবে ঘেয়ো কুকুরের মতোই।
খ
শকুন চক্কর দিবে শকুনের মতোই।
গ
পপলার বৃক্ষের পাতা দুলে যাবে পপলার বৃক্ষের পাতার মতোই।
ঘ
ঘাস ফলা ঘাসের মতোই।
ক খ
তাসের ঘর ভেঙে পড়বে তাসের ঘরের মতোই।
ক গ
বোম ফাটবে বোমের মতোই।
ক ঘ
পাকা ফল গাছ থেকে ঝরে পড়বে পাকা ফলের মতোই।
খ গ
গরম পাথরে জল হিস্হিস্ করে উঠবে গরম পাথরে জলের মতোই।
খ ঘ
যারা মৃতুদণ্ড পেয়েছে তাদের দাঁড়াতে হবে মৃত্যুদণ্ড পেয়ে মরার মতোই।
ক খ গ ঘ
বন্দী শূকর হবে বন্দী শূকরের মতোই।
ক
গড়পরতার লোক আচরণ করবে গড়পরতার লোকের মতোই।
খ
জাউরার ব্যবহার হবে জাউরার মতোই।
গ
সম্মানীত লোক আচরণ করবে সম্মানীত লোকের মতোই।
ঘ
অপেরার নায়ক আচরণ করবে অপেরার নায়কের মতোই।
ক
সৎ সন্তানকে সৎ সন্তানের মতোই লালন করা হবে।
অলৌকিক ঘটনাকারী অপেক্ষায় থাকবে অলৌকিক ঘটনাকারীর মতোই।
আজাইরা লোক তাকিয়ে থাকবে আজাইরার মতোই।
মাসিহা আসবেন মাসিহার মতোই।
দুধের গরুকে দোহন করা হবে দুধের গরুর মতোই।
কুষ্ঠ রোগীকে এড়িয়ে চলা হবে কুষ্ঠ রোগীর মতোই।
নরক ঘৃণিত হবে নরকের মতোই।
কাফন ছড়ানো হবে কাফনের মতোই।
পাগলা কুত্তারে গুলি করা হবে পাগলা কুত্তার মতোই।
খ
বেকুব বক্বক্ করবে বেকুবের মতোই।
তোতাপাখি বুলি আওড়াবে তোতা পাখির মতোই।
তেলাপোকা আলো দেখলে দৌঁড়ে পালাবে তেলাপোকার মতোই।
মে মাসের তুষার উবে যাবে মে মাসের তুষারের মতোই।
শিশু সুখী হবে শিশুর মতোই।
অলৌকিক ঘটবে ঠিক অলৌকিকভাবেই।
পুকুরে লাশ ভেসে উঠবে পুকুরের লাশের মতোই।
বজ্রপাত হবে বজ্রপাতের মতোই।
গ ঘ
সৈনিকেরা শপথ নিবে সৈনিকের মতোই।
ব্যাঙ লাফাবে ব্যাঙের মতোই।
বিদ্যুৎ চমকাবে বিদ্যুৎ চমকের মতোই।
চোর ছোক্ছোক্ করবে চোরের মতোই।
ঘোড়া খাবে ঘোড়ার মতোই।
স্কুলের বাচ্চা পালাবে স্কুলের বাচ্চার মতোই।
জল ছিটকে উঠবে জলের মতোই।
মুখের মধ্যে থাপ্পড় হবে মুখের মধ্যে থাপ্পড়ের মতোই।
বিষাক্ত সাপ ছোবল হানবে বিষাক্ত সাপের মতোই।
খ গ ঘ
আহত অশ্ব পেছন দেখাবে আহত অশ্বের মতোই।
ঘোড়সওয়ারী বালক সাবধানী হবে ঘোড়সওয়ারী বালকের মতোই।
নেকড়ে জাতের কুকুর ডাকবে নেকড়ে জাতের কুকুরের মতোই।
ইহুদি দর কষাকষি করবে ইহুদির মতোই।
বড়শিতে আটকানো মাছ মোচড় খাবে বড়শিতে আটকানো মাছের মতোই।
খোলা ঘা পঁচে উঠবে খোলা ঘায়ের মতোই।
সতী বাতাসে ভেসে বেড়াবে সতীর মতোই।
সমবেত গানের দলের বালক গাইবে সমবেত বালকের মতোই।
নাবিক হাঁটবে নাবিকের মতোই।
স্পেনীয় হাঁটবে স্পেনীয়র মতোই।
গ্যারি কুপার হাঁটবে গ্যারি কুপারের মতোই।
ডোনাল্ড ডাক হাঁটবে ডোনাল্ড ডাকের মতোই।
ক
ভেজা লোমশ কুকুর দাঁড়াবে ভেজা লোমশ কুকুরের মতোই।
অসহায় পাপী দাঁড়াবে অসহায় পাপীর মতোই।
গরু দাঁড়াবে নতুন গোলাঘরের সামনে নতুন গোলাঘরের সামনে দাঁড়ানো গরুর মতোই।
মোরগ দাঁড়াবে গোবর-গাদার উপরে গোবর-গাদার উপর দাঁড়ানো মোরগের মতোই।
ক খ
পতিত বৃক্ষ ভেঙে চুরমার হবে পতিত বৃক্ষের মতোই।
বিকৃতমস্তিষ্ক মারামারি করবে বিকৃত মস্তিষ্কের মতোই।
বিড়াল ধীরে-সুস্থে পাক খেয়ে ঘুরবে গরম স্যুপের বাটি ঘিরে ঠিক বিড়ালের মতোই।
কুত্তা বজ্রপাত থেকে আড়ালে লুকাবে যেভাবে কুত্তা বজ্রপাত থেকে আড়ালে লুকায়।
গর্জনশীল সিংহ সদর্পে এড়িয়ে যাবে গর্জনশীল সিংহের মতোই।
দাবানল ছড়িয়ে পড়বে দাবানলের মতোই।
ক খ গ
হায়ানা চিৎকার করবে হায়ানার মতোই।
নৈশপ্রহরী হাই তুলবে নৈশপ্রহরীর মতোই।
ষড়যন্ত্রকারী ফিসফাস করবে ষড়যন্ত্রকারীর মতোই।
বেণুবাঁশ বাতাসে মর্মরধ্বণি তুলবে বেণুবাঁশের মতোই।
উটপাখি তার মুখ বালিতে গুজে দেবে উট পাখির মতোই।
স্বামী-বঞ্চিতা নারী কেঁপে উঠবে স্বামী-বঞ্চিতা নারীর মতোই।
ইন্দুর ঘুমাবে ইন্দুরের মতোই।
কুত্তা মরবে কুত্তার মতোই।
ক খ গ ঘ
জুতা পায়ে মানিয়ে যাবে জুতার মতোই।
ক
প্লেগ ছড়াবে প্লেগের মতোই।
খ
গোলাপ সুঘ্রাণ ছড়াবে গোলাপের মতোই।
গ
মৌমাছির ঝাঁক গুঞ্জন তুলবে মৌমাছির ঝাঁকের মতোই।
ঘ
তোমার ছায়া তোমাকে অনুসরণ করবে তোমার ছায়ার মতোই।
ক
কবর নিস্তব্ধ রইবে কবরের মতোই।
স্মৃতিস্তম্ভ দাঁড়িয়ে রইবে স্মৃতিস্তম্ভের মতোই।
খ
একজন মানুষ জেগে উঠবে মানুষের মতোই।
সমুদ্র পারের পাহাড়ের খাঁজ দাঁড়িয়ে থাকবে সমুদ্র পারের পাহাড়ের মতোই।
গ
আকস্মিক বৃষ্টি ধেয়ে আসবে আকস্মিক বৃষ্টির মতোই।
পিঁপড়া কামড়াবে পিঁপড়ার মতোই।
ঘ
জলোচ্ছ্বাস ফুসে উঠবে জলোচ্ছ্বাসের মতোই।
ভিতু ভেড়ার দল চড়ে বেড়াবে ভিতু ভেড়ার দলের মতোই।
ক
বালু তোমার আঙুল গড়িয়ে ঝরে পড়বে বালুর মতোই।
খ
থিয়েটারে তুমি থিয়েটারপ্রেমীর মতোই অনুভব করবে।
গ
একটা ডিম ঠিক আরেকটা ডিমের সাদৃশ্যের কথাই মনে করিয়ে দিবে।
ক খ গ
একটা চিৎকার বেরিয়ে আসবে ভিড়ের মুখ থেকে যেন একটা মুখ থেকে বেরিয়েছে।
ঘ
অর্গান পাইপ দাঁড়িয়ে থাকবে অর্গান পাইপের মতো।
শেষ বিচারের শিঙ্গা বেজে উঠবে শেষ বিচারের শিঙ্গার মতোই।
উদ্ঘাটন হবে উদ্ঘাটনের মতোই।
গ
ছুঁচো গর্ত খুঁড়ে যাবে বাগানের তলা দিয়ে ছুঁচোর মতোই।
খ
অন্য জগতের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে অন্য জগতের কণ্ঠস্বরের মতোই।
ক
হিমবাহ ছুটে আসবে হিমবাহের মতোই।
যারা বোধ হারিয়েছে তারা আচরণ করবে বোধহারানো মানুষের মতোই।
ক খ
নবীর মুখ হবে নবীর মতোই।
দেবদূত কথা বলবে দেবদূতের ভাষাতেই।
পোকা আলোতে ঝাপটাবে পোকার মতোই।
গুদামের দরজা খুলবে গুদামের দরজার মতোই।
ক খ গ
চোখের পিচুটি বেরিয়ে আসবে চোখ থেকে চোখের পিচুটির মতোই।
বাইরের বস্তু বমি হয়ে বের হয়ে যাবে বাইরের বস্তুর মতোই।
ইঁদুর বেরিয়ে যাবে ডুবন্ত জাহাজ থেকে যেভাবে ইঁদুর ছেড়ে যায় ডুবন্ত জাহাজ।
ঈশ্বর মানব জাতির দিকে হাত বাড়াবে ঈশ্বরের মতোই।
ক খ
ভালুক ঘুমাবে ভালুকের মতোই।
ক
দেয়াল দাঁড়িয়ে থাকবে দেয়ালের মতোই।
ঘ
গমক্ষেত আওয়াজ তুলবে গমক্ষেতের মতোই।
ঘ গ
বৃষ্টির পর মাশরুম মাশরুমের মতোই হবে যেমন বৃষ্টির পর হয়ে থাকে।
ঘ গ খ
বাদামের খোসা পানিতে দুলবে বাদামের খোসার মতোই।
ঘ গ খ ক
পরিযায়ী পাখি উড়ে যাবে পরিযায়ী পাখির মতোই।
যারা আনন্দে উড়ে বেড়ায় তারা যেন মেঘের মধ্যেই হাঁটে।
যারা বজ্রপাতে আহত হয় তারা যেন বজ্রাহত লোকের মতোই।
যারা সপ্ত আসমানে বসবাস করে তারা ঠিক সপ্ত আসমানের থাকার মতোই লোক।
যারা বিষাক্ত কাঁকড়া-বিছার দংশনে লাফ দিয়ে ওঠে তারা বিষাক্ত কাঁকড়া-বিছায় কামড়ানোর মতোই।
ক ঘ
ভাটার টান আর বন্যা পরস্পর পরিপূরক ঠিক ভাটার টান আর বন্যার মতোই।
জলের মধ্যে মাছ ঠিক মানিয়ে যায় জলের মধ্যে মাছের মতোই।
আগুন আর পানি প্রতিযোগিতা করে যাবে আগুন আর পানির মতোই।
দিন আর রাত্রি একদম আলাদা থাকবে দিন আর রাত্রির মতোই।
খ
তুমি ফুলশয্যায় থাকবে ফুলশয্যায় থাকার মতোই।
গ
স্বপ্ন তোমার কাছে স্বপ্নের মতোই মনে হবে।
খ
অমরত্ব তোমার কাছে অমরত্বের মতোই মনে হবে।
ক খ গ ঘ
তবে সমুদ্রের মাছ হতে হবে প্রচুর সমুদ্রের মাছের মতোই।
তবে বেলাভূমির বালু হতে হবে প্রচুর বেলাভূমির বালুর মতোই।
তবে আকাশের নক্ষত্র হতে হবে প্রচুর আকাশের নক্ষত্রের মতোই।
তবে পৃথিবীতে মানুষ হতে হবে প্রচুর পৃথিবীর মানুষের মতোই।
ক
আর খরগোশ বহুগুণে বাড়তে থাকবে খরগোশের মতোই।
খ
আর জীবাণু বহুগুণে বাড়তে থাকবে জীবাণুর মতোই।
গ
আর গরিব বহুগুণে বাড়তে থাকবে গরিবের মতোই।
ঘ
আর তোমার আমার মতো লোকেরা রয়ে যাবে তোমার আমার মতোই।
ক
প্রতিদিনের খাবার দরকার পড়বে প্রতিদিনের খাবারের মতোই।
খ
রক্ত লাল হবে রক্তের মতোই।
গ
বাতাস বেগবান হবে বাতাসের মতোই।
ঘ
বিষ পীতাভ হবে বিষের মতোই।
ক
ঝোলাগুড় অবশ্যই চটচটে হবে ঝোলাগুড়ের মতোই।
খ
বেকুবরা ভদ্র হবে বেকুবদের মতোই।
গ
জীবন জটিল হবে জীবনের মতোই।
ঘ
চালুনিতে ফুটা থাকবে চালুনির মতোই।
ক
পরম বস্তু হবে বর্ণনাতীত পরম বস্তু।
খ
খুরের প্রান্ত হবে খুরের প্রান্তের মতোই ধারালো।
গ
মহাবিশ্ব হবে অসীম ঠিক মহাবিশ্বের মতোই।
ঘ
খাওয়ার ব্যাপারে খুঁতখুঁতে লোক হবে চির শুকনাই।
ক
পিপা হবে পিপার মতোই গোল।
খ
নিগ্রো একগুয়ে হবে নিগ্রোর মতোই।
গ
পিতা পুত্রের কাছে পিতার মতোই হবে।
ঘ
উড়োজাহাজের ঝাকুনি হবে উড়োজাহাজের ঝাকুনির মতোই।
ক
পোপ হবেন পোপের মতোই অকাট্য।
খ
উপন্যাস হবে উপন্যাসের মতোই চমকপ্রদ।
গ
সিনেমা হবে সিনেমার মতোই অবাস্তব।
ঘ
খড়ের গাদায় সুই খুঁজে বের করা কঠিন হবে খড়ের গাদায় সুই খুঁজে বের করার মতোই।
ক
রাত্রি নীরব হবে রাত্রির মতোই।
খ
পাপ পাপের মতো ঘোর কৃষ্ণ হবে।
গ
আত্মা অফুরান ঠিক আত্মার মতোই।
ঘ
কুয়া গভীর হবে কুয়ার মতোই।
ক
স্পঞ্জ ভেজা হবে স্পঞ্জের মতোই।
খ
কবি স্বাপ্নিক হবে ঠিক কবির মতোই।
গ
অন্যেরা ঠিক একেবারে অন্যের মতোই হবেন।
ঘ
মৃত্যু অনিবার্য ঠিক মৃত্যুর মতোই।
ক
আগামীকাল অনিবার্য হবে আগামীকালের মতোই।
খ
প্রার্থনায় আমিন হবে ঠিক আমিনের মতোই অনিবার্য।
গ
কিছু একটা ঠিক অনিবার্যই হবে কেবল কিছু একটার মতোই।
ঘ
ময়ূর অহঙ্কারী হবে ময়ূরের মতোই।
ক খ গ ঘ
আর রূপান্তরিত ঠিক রূপান্তরিতের মতোই অনুভব করবে।
আর যারা লবণের স্তম্ভে পরিণত হয়েছিলো তারা দাঁড়িয়ে থাকবে লবণের বস্তার মতোই।*
আর যারা বজ্রপাতে আহত হয়েছিলো তারা পড়ে যাবে বজ্রপাতে আহতের মতোই।
আর সম্মোহিতরা কথা শুনবে সম্মোহিত লোকেদের মতোই।
আর পক্ষাঘাতগ্রস্থরা দাঁড়িয়ে থাকবে পক্ষাঘাতগ্রস্থদের মতোই।
আর আঙুলের ইশারায় নাচা লোকেরা নাচবে ইশারায় নাচা লোকেদের মতোই।
আর খোড়ারা দাঁড়াবে খোড়াদের মতো।
আর যারা বজ্রঘাতে তাড়িত তারা দাঁড়িয়ে থাকবে বজ্রাহতের মতোই।
আর ঘুমের মধ্যে হেঁটে যাবে নিদ্রায়-হাঁটা রোগীদের মতোই।
আর যাদের ডাকা হয়েছে কিন্তু নির্বাচিত করা হয়নি তারা দাঁড়িয়ে থাকবে ডেকে এনে অনির্বাচিত হওয়া লোকের মতোই।
আর বিকল্প ব্যক্তিরা বিকল্পের মতোই অনুভব করবে নিজেদের।
আর আয়নার কাছে দাঁড়ানো লোকগুলো নিজেদের আয়নায় দাঁড়ানো লোকের মতোই মনে করবে।
আর নবজাতক অনুভব করবে নবজাতকের মতোই।
আর মার-খাওয়া লোক নিজেদের মার-খাওয়াই ভাববে চিরকাল।
আর যাদের এই পৃথিবী গিলে ফেলেছে তারা ঠিক পৃথিবীর দ্বারা গিলে ফেলা একজনই হবে।
ক
বাস্তব হয়ে উঠবে বাস্তব।
খ
সত্য হয়ে উঠবে সত্য।
ক খ
বরফ জমবে বরফের মতো।
ক খ গ
সমাপ্তি গিয়ে দাঁড়াবে সমাপ্তিতেই।
ক খ গ ঘ
তলানি নিমজ্জিত হবে তলানিতেই।
ক খ গ
কিচ্ছু না ঠিক কিচ্ছু না হয়েই থাকবে।
ক খ
ছাই হয়ে উঠবে ছাই।
খ
বাতাস হয়ে উঠবে বাতাস।
ক
ধুলা হয়ে উঠবে ধুলা।
ঘ
বেজি হওয় উঠবে বেজি-মুখো।
গ
পালক হবে পালকের মতো হাল্কা।
খ
এসিড হবে এসিডের মতো তীব্র।
ক
চক হবে চকের মতো সাদা।
ঘ
মাখন হবে মাখনের মতো নরম।
গ
বিদ্যুৎচমক জবে বিদ্যুৎ চমকের মতো দ্রুত।
খ
চুল হবে চুলের মতোই চিকন।
ক
মৃত্যু হবে মৃতবৎ নীরস।
ঘ
মৃত হবে মৃতবৎ ম্লান।
গ
মৃত্যুকে মনে হবে মরণঘাতি রোগ।
খ
আলকাতরা হবে আলকাতরা-কালো।
ক
হৃদয় হবে মর্মপীড়িত।
ঘ
চামড়া হবে চামড়া-গভীর।
গ
রক্তচোষা হবে রক্ত পিপাসু।
ক
ক
খ
মামুলি হবে নিতান্ত মূল্যহীন।
ক
পাথর হবে পাথরের মতো কঠিন।
ক খ গ ঘ
প্রত্যেকটা দিন হবে প্রত্যেকটা দিনের মতোই।
।। সমাপ্ত।।
*বাইবেলে কথিত আছে লুতের অভিশপ্ত স্ত্রী সদম নগরের দিকে তাকানোর কারণে লবণের বস্তা হয়ে গিয়েছিলো। হিব্রু পুরাণ এবং কোরআন হাদিসেও এমন বয়ান আছে
অনুবাদকের টীকা
২০১৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া অস্ট্রিয়ান লেখক পেটার হান্ডকে নাট্যকার হিসেবে আধুনিক বিশ্বে অনন্য। নাটকে অবদানের জন্য তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইবসেন প্রাইজ পেয়েছেন ২০১৪ সালে। মহান নাট্যকার হেনরিক ইবসেনের নামে এই পুরস্কার প্রবর্তন করেছে খোদ নরওয়ে সরকার। ২০০৮ সালে প্রবর্তিত এই পুরস্কার প্রথমে পান পিটার ব্রুক। নাট্যজগতে অসামান্য অবদানের জন্য দেয়া এই পুরস্কার অর্থমূল্যেও বিশ্বের বিরাট একটি পুরস্কার। ইবসেনের জন্মদিনে প্রবর্তিত এই পুরস্কারের অর্থমূল্যে নরওয়ের মূদ্রায় ২৫ লক্ষ ক্রোন। রাজনৈতিক কারণে বিতর্কিত হলেও ঔপন্যাসিক, কবি পেটার হান্ডকে নাট্যবিশ্বে বিশেষ নন্দিত। প্রচলিত অর্থে নাটকের যে অবয়ব কয়েক হাজার বছর ধরে আমরা দেখে আসছি তা বদলে ফেলেছেন তিনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার নাটকে কোনো চরিত্র থাকে না। কয়েকজন কথক তার নাটকে কথা বলে যায়। কিছু নাটকে সংলাপও নেই প্রায়। কাহিনিও থাকে না তার নাটকে। নাটকীয় যেসব গুণাবলী নাটকে থাকতে হয় তাও তার নাটকে নেই। তথাপি তার নাটক গভীর অর্থবহন করে। বেকেটের এবসার্ড নাটকের মতো মনে হলেও তার নাটক একেবারে অর্থহীন নয়। বরং গুঢ় আর গভীর অর্থ বহন করে তার নাটক। ১৯৬৬ সালে তার প্রথম নাটক ‘দর্শককে ক্ষেপানো’ (Offending the Audience) দিয়েই তিনি আলোচনায় আসেন। আভা গার্দ বা নিরীক্ষাপ্রবণ নাট্যকার হিসেবেই তিনি অধিক পরিচিত। তার দ্বিতীয় নাটক ‘ক্যাসপার’ বিশ্বব্যাপী আলোচিত। দৈববাণী (Prophecy) তার আকারে ছোট নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম আলোচিত কাজ। এই নাটকে ক, খ, গ, ঘ যেন আমাদের সার্বক্ষণিক দৈববাণী শুনিয়ে যায়। মানুষের জীবন, পৃথিবী, মহাবিশ্ব, পোকা মাকড়, লোভ, আশা, মৃত্যু কতো বিষয় নিয়েই তারা কথা বলে।
পেটার হান্ডকের নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তিনি কোনো নাট্যসূত্র বা প্রযোজনা নির্দেশনা দেন না। নির্দেশকের জন্যে তিনি সব কিছু উন্মুক্ত রেখে দেন। তার অধিকাংশ নাটকেই মঞ্চ ফাঁকা। মঞ্চে এবং দর্শকস্থলে আলো জ্বলে। আর অভিনেতারা কী করবেন তিনি বলে দেন না। যে কোনো সৃষ্টিশীল নাট্য পরিচালক পেটার হান্ডকের নাটককে নিজের মতো করে তৈরি করে নিতে পারেন। সৃষ্টির অবারিত স্বাধীনতা রয়েছে তার নাটকে।
ঢাকা/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন