ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ: প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ

শরীফ আতিক-উজ-জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ৬ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১৭:১০, ২৮ আগস্ট ২০২০
দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ: প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ

আশীষ নন্দী তার Nationalism, Genuine and Spurious প্রবন্ধে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, জাতীয়তবাদ আর দেশপ্রেম সমার্থক নয়। জাতীয়তাবাদ অন্যান্য আদর্শের মতো মানুষের ব্যক্তিত্বের মাঝে সৃষ্ট একটি আদর্শ। জাতিরাষ্ট্রের ধারণার অনুবন্ধ হিসেবে তা ঔপনিবেশিক আমলে এশিয়া ও আফ্রিকার ঘাড়ে চড়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। দেশপ্রেম একটি সংবেদনশীল অনুভূতি যা মূলত একটি ভূ-খণ্ড, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও তার অপরাপর বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে।

রবীন্দ্রনাথ স্বদেশপ্রেমকে মূল্যবান মনে করেছেন, কিন্তু জাতীয়তাবাদী চেতনাকে খারিজ করে দিয়েছেন। সাধারণ মতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতের জাতীয় কবি যিনি ভারতের জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতাও তিনি। যদিও মুসলিম ধর্মীয় উগ্রবাদীরা অসংখ্যবার এই সংগীত বদলে ফেলার দাবি করেছে যা মূলত সাম্প্রদায়িক ও উগ্র জাতীয়তাবাদী বিদ্বেষপ্রসূত একটি ভাবনা। কিন্তু এমন দৃষ্টান্ত একটি নয়। পাকিস্তানের জাতীয় কবি ইকবালের ‘সারে জাহা সে আচ্ছা হিন্দুস্তা হামারা...’ ভারতীয় সেনাবাহিনীর রণসংগীত। এই গান গেয়ে তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ফলে ভূ-খণ্ডের ধারণা ও জাতীয় সংস্কৃতিচেতনার মধ্যে অদ্ভুত কিছু বৈপরীত্য রয়েছে। ঔপনিবেশিক ভারতে উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সর্বদা তাঁর অবস্থান ছিল। তাঁর এই নমনীয় অবস্থানকে ভারতীয়রা কখনো ভালো চোখে দেখেননি। ‘গোরা’ ‘ঘরে বাইরে’ ও ‘চার অধ্যায়’- এই তিনটি উপন্যাসেই তিনি উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনাকে আক্রমণ করেছেন। এই অনুভূতিকে তিনি দেশপ্রেম হিসেবে স্বীকার করেননি। যদিও তার স্বদেশ প্রেমের গান সেই সময় বহু সংগ্রামে প্রেরণাদায়ী সংগীত হিসেবে গীত হতো। এমনকি জেলখানাতেও অনেক বিপ্লবী তাঁর গান গেয়ে তাঁদের চেতনা উদ্দীপ্ত রাখতেন।

আশিষ নন্দী আরো জানাচ্ছেন, স্বদেশ প্রেমকে প্রকাশ করতে তিনি দেশাভিমান,  স্বদেশপ্রেম,  দেশভক্তি, স্বদেশচেতনা  ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করলেও কখনোই এই শব্দগুলোকে Nationalism- এর প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করেননি। জাতীয়তাবাদ বোঝাতে তিনি সবসময়ই ইংরেজি Nationalism শব্দটি ব্যবহার করেছেন। রবীন্দ্রনাথ দেশপ্রেমিক ছিলেন কিন্তু জাতীয়তাবাদী নন। দেশ বলতে তিনি একটি ভূ-খণ্ড ও তাঁর নিজস্ব স্বদেশী নানা উপাদানকে বুঝতেন যার সঙ্গে জাতিরাষ্ট্রের ধারণা ও জাতীয়তার আদর্শভিত্তিক ভূ-খণ্ডের পার্থক্য রয়েছে। উল্লেখিত তিনটি উপন্যাসে তিনি ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক বক্তব্য প্রকাশ করেছেন যার মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে তার একটি নিজস্ব আদল ধরা পড়েছে। ‘গোরা’তে তিনি Nationalism- এর একটি মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, জাতীয়তাবাদী চেতনা এক অর্থে অভারতীয়, প্রতি-ভারতীয় এবং ভারতীয় সভ্যতা, তার ধর্মীয় আদর্শ ও সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদীতার বিরুদ্ধে এক ধরনের অপরাধ। ‘ঘরে-বাইরে’তে দেখাচ্ছেন কীভাবে জাতীয়তাবাদ সম্প্রদায়গত জীবনকাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে দেয় এবং ধর্মীয় সহিংসতাকে উসকে দেয়। ‘চার অধ্যায়’-এ দেখা যায় শিল্পায়নের বীজ পোতা হচ্ছে সেখান থেকে শ্রমিক বিদ্রোহের সূচনা এবং পরবর্তী সময়ে সংগঠিত বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটছে যা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

আশিষ নন্দীর বয়ান মতে, এই তিনটি উপন্যাস লেখা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের বন্ধু বেদান্ত ও ক্যাথলিক ধর্মতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ, ভারতের প্রথম আগ্রাসী হিন্দু জাতীয়তাবাদী পণ্ডিত ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় (১৮৬১-১৯০৭)-এর সাথে Nationalism সম্পর্কিত তর্ক-বিতর্ক, যুক্তি-প্রতিযুক্তি ও আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে। এখানে স্বামী বিবেকানন্দ, সিস্টার নিবেদিতা এবং সম্ভবত রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর সাথে Nationalism সম্পর্কিত আলোচনার কিছু প্রতিফলনও লক্ষ্য করা যাবে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রসহ অন্যান্য চরিত্রের মধ্য দিয়ে তার আশঙ্কা, উদ্বেগ, প্রত্যাশা ইত্যাদি প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের মধ্যকার ভিন্নমত নির্মিত হয়েছিল ভারতের বহুসাংস্কৃতিক ঐক্য সম্পর্কিত উপলব্ধি থেকে। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, বেদ, উপনিষদ বা শ্রীমদ্ভগবদগীতা ভারতের ধ্রুপদী সংস্কৃতির কেন্দ্রে অবস্থান করলেও তা কোনোভাবেই ভারতের বিভিন্ন জাতিসত্তার মাঝে ঐক্য স্থাপনে সক্ষম নয়। এখানে রামমোহন রায়, স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রী অরবিন্দ প্রমুখ থেকে তিনি ভীষণ রকমের আলাদা; যারা মনে করতেন হিন্দুত্ববাদ ভারতীয় জনগণের সংহতির ভিত্তি।

কিন্তু রবীন্দ্রনাথ সব সময়ের জন্য মধ্যযুগের মরমী দার্শনিক,  কবি ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব- যেমন, কবীর,  নানক,  বুল্লে শাহ,  লালন  প্রমুখের দর্শন ও চিন্তাভাবনাকে ভারতের সব জাতিগোষ্ঠীর মিলনের ভিত্তি হিসেবে কল্পনা করে এসেছেন। এখানে জাতীয়তাবাদের পাশ্চাত্য ধারণা তার কাছে খুব গুরুত্ব পায়নি। রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদকে সরিয়ে রেখে একটি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের দেশপ্রেমের খোঁজে ছিলেন যেখানে ভূ-খণ্ড, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব মানুষ, সাংস্কৃতিক ভিন্নতা সর্বোপরি মানুষের বিকাশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বিভিন্ন বিষয়ে মতদ্বৈধতা থাকলেও তাঁর এই মতের সমর্থক ছিলেন মহাত্মা গান্ধী।  তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ভারতের সংহতির ভিত্তি প্রধানত মধ্যযুগের দর্শন, ধ্রুপদী যুগের নয়। উনিশ শতকের সংস্কারবাদী রামমোহন রায় প্রমুখ যারা ধর্মীয় অনুশাসনের পুনর্জাগরণ প্রত্যাশা করেছিলেন তিনি তার সাথে একমত ছিলেন না। গান্ধী সবসময় জাতীয়তাবাদকে দেখতেন ন্যায়বিচার এবং সমতার সর্বজনীন সংগ্রাম হিসেবে এবং সুস্পষ্টভাবে বলতে চেয়েছেন, সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হলো সাম্রাজ্যবাদেরই আরেক নাম। তাই তিনি অহিংস আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন।

জার্মান-আমেরিকান দার্শনিক হানা আরেন্ট (১৯০৬-১৯৭৫) মনে করেন, জাতীয়তাবাদ জাতির কাঠামোর মধ্যে একটি ছদ্মসম্প্রদায় (pseudocommunity) গড়ে তোলে। চীনা বংশোদ্ভূত আইরিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বেনেডিক্ট অ্যান্ডারসন (১৯৩৬-২০১৫) একই সুরে সুর মিলিয়ে তাকে কাল্পনিক সম্প্রদায় (Imaginary community) বলেছেন। কিন্তু দেশপ্রেম দেশের সমস্ত মানুষকে মর্যাদা ও স্বীকৃতি দেয়। জাতীয়তাবাদের মতো দেশপ্রেম কখনো মানুষের মাঝে আদর্শিক পার্থক্য খুঁজে বেড়ায় না। এই দুই রাষ্ট্রচিন্তাবিদ যখন এই কথাগুলো বলছেন, তার অনেক আগেই রবীন্দ্রনাথ এই দুয়ের পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে নিরূপণ করে গেছেন। জাতিরাষ্ট্রের আরেকটি ক্ষতিকারক দিক হলো এরা বিশ্বে ক্ষমতার খেলা খেলতে চায় এবং ক্ষুদ্র জাতিরাষ্ট্র বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্বাধীনতা হরণ করে। তবে দক্ষিণ এশীয় জনগণ, যারা জাতিসত্তা ও সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের মধ্যে পার্থক্য অনুধাবন করতে পারেন না, তাদের মাঝে জাতীয়তা অপেক্ষা সাম্প্রদায়িকতার অনুভূতি অনেক বেশি তীব্র। এই দুটি বিষয়কে গুলিয়ে ফেলে দীর্ঘকাল থেকেই তারা সহিংসতার পথে হাঁটছে।

ব্রিটিশ-চেক দার্শনিক আর্নেস্ট গেলনার (১৯২৫-১৯৯৫)  মনে করেন,  জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্য খোঁজার জন্য কাউকে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই কেননা এর ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট নেই, তা সর্বত্র একই রকমের। স্টানলি জোন্স (১৮৮৪-১৯৭৩) একজন স্বপ্নদর্শী ও মহাত্মা গান্ধীর খুব ঘনিষ্ঠ তাত্ত্বিক। তিনি মনে করতেন, বিশ্ব শান্তির জন্য সবচেয়ে বড় রকমের হুমকি হলো আধুনিক জাতীয়তাবাদের উত্থান যা দেশপ্রেম নামক মহৎ সংবেদনশীলতাকে বদলে আধুনিক বিশ্বের চরম শত্রুতে পরিণত করেছে। জাতীয়তাবাদের অনুভূতি মানুষকে অপরাধ করতে প্ররোচিত করে অন্যথায় দেশপ্রেমিক হলে তারা তা করতো না।
প্রাচ্য-প্রতীচ্য বিতর্ক ও সংস্কৃরি মাঝে জাতীয়তাবাদকে টেনে আনা হলেও রবীন্দ্রনাথ সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদী ভাবনার আদলটি অন্যদের থেকে আলাদা। প্রতীচ্যের মূলচেতনা ও প্রতীচ্যের জাতীয়তাবাদী ভাবনার মাঝে তিনি পার্থক্য দেখতে পেতেন। প্রতীচ্যের চেতনা মুক্তচিন্তা বা স্বাধীনতার ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের জাতীয়তাবাদী ভাবনা অন্যদের নিয়ন্ত্রণ বা পরাধীন রাখাতে উৎসাহী ছিল। একইভাবে ‘আধুনিক’ ও ‘ইউরোপীয়’র মাঝেও তিনি পার্থক্য দেখতে পেতেন। জাতীয়তাবাদ, তাঁর মতে একটি চৈতন্যনাশক বিষয় যা মানুষের অনুভূতিকে ভোঁতা করে দিয়ে পরিশেষে উগ্রতার দিকে টেনে নিয়ে। জাতীয়তাবাদী চেতনার গঠনমূলক দিক হতে পারে নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি নতুন করে আবেগ জাগিয়ে তোলা ও অনুভূতিশীল হওয়া। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ঢালাও বিরোধিতা ও বিদ্বেষ প্রদর্শন তিনি পছন্দ করেন নি। পূর্ব-পশ্চিমের সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। স্বকীয় বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রেখেই তিনি পরিবর্তনকে স্বাগত জানানোর পক্ষে ছিলেন। তাঁর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার পেছনে এইসব মানবিক ভাবনাই ছিল চালিকাশক্তি।

ইংরেজ ঔপনিবেশিক ভারতে ইয়োরোপীয় আধুনিকতার যে চর্চা করে আসছিল তার সাথে ভারতীয় ঐতিহ্য, ধর্মীয় আদর্শ, সম্প্রদায়সমূহের আচার, বস্তুতান্ত্রিক অভাব, অবকাঠামো ও শিক্ষাগত সমস্যার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল। সেই দূরত্ব ইংরেজরা নানাভাবে বাড়িয়ে তুললে তার প্রতিবাদস্বরূপ একটি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে একটি জাতীয় আদর্শ নির্মাণ উগ্র জাতীয়তাবাদকে অতিক্রম করতে সক্ষম হবে। সেই সময়কার বাংলার রাজধানী কলকাতা ছিল স্থানিক-বৈশ্বিক, ঐতিহ্যবাহী-আধুনিক, ঔপনিবেশিক-স্বাদেশিক, জাতীয়-আন্তর্জাতিক ভাবাদর্শ, বৈশিষ্ট্য, মতবাদ ইত্যাদি ধারণের আদর্শ এক স্থান। এখানে মনে রাখতে হবে, রবীন্দ্রনাথ সম্পূর্ণ একটি বিপরীত দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন। তাঁর আন্তর্জাতিক পরিচিতি নিজস্ব একক অবস্থান ঘোষণায় সাহস যুগিয়েছে। অনেকের মতো তিনিও মনে করতেন, আধুনিকতা বৈশ্বিকভাবে একটি ‘কাল্পনিক সম্প্রদায়’ গঠন করতে সক্ষম হয়েছে যারা একে অপরকে ব্যক্তিগতভাবে জানেন না, তবে একই আদর্শ লালন করেন। আদর্শ বিনিময়ের ভেতর দিয়ে তারা কেন্দ্র ও প্রান্তের সাথে একটি যোগসূত্র নির্মাণে সক্ষম।

সংস্কৃতির গ্রহণ-বর্জনের ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী অনুভূতিকে চাপিয়ে দিয়ে নানাবিধ বিতর্ক তৈরি করা হয়। উগ্র মানসিকতা তার অনেক বিস্তৃতি ঘটায়। প্রাচ্যের সাথে প্রতীচ্যের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণকে তিনি দূষণীয় মনে করতেন না। কিন্তু এক্ষেত্রে তাঁর মূল সমস্য ছিল সামাজিক আধুনিকায়ন যার সাথে শিক্ষার গুণগত মান, বিজ্ঞানমনস্কতা ও নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি জড়িত ছিল। কিন্তু সব ছাপিয়ে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠায় সংস্কৃতির প্রশ্নে গ্রহণ-বর্জনের সীমানা নির্ধারিত হওয়ার আগেই ঢালাও বর্জনের পক্ষে চাপ তৈরি হতে থাকে। তবে রবীন্দ্রনাথ পাশ্চাত্যের নকলনবিশিকে আধুনিকতা বলেননি। ভারতীয় বৈশিষ্ট্যের নতুন নির্মাণকে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মনে করতেন যে একটি জাতিসত্তার নিজস্ব একটি চেতনালোক ও চর্চিত বৈশিষ্ট্য থাকে যার সাথে সমসাময়িক কালে নতুন বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় সাধন করতে হয়।

রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন ভারত এক জাতিরাষ্ট্র নয়,  ভারত বহু  সম্প্রদায়ের দেশ। সেখানে জাতীয়তাবাদ অপেক্ষা দেশপ্রেমের গুরুত্ব অনেক বেশি। আবার দেশপ্রেম সম্পর্কেও তিনি আনন্দমোহন বসুকে লিখেছেন, দেশপ্রেম আমাদের চূড়ান্ত আধ্যাত্মিক আশ্রয় নয়। আমি হীরার মূল্য দিয়ে কাঁচ ক্রয় করব না। যতদিন বেঁচে আছি মানবতার উপর দেশপ্রেমকে ছড়ি ঘোরাতে দেব না। জাতীয়তাবাদ হলো বিশাল এক হুমকি। এটাই বছরের পর বছর ধরে ভারতের সমস্যার মূল কারণ। যার অর্থ তিনি জাতীয়তাবাদের ওপর দেশপ্রেম আর দেশপ্রেমের ওপরে মানবতাকে স্থান দিয়েছেন এবং আধুনিক বিশ্বে তা-ই হওয়ার কথা।

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ