ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

লুইজ গ্লুকের ৫ কবিতা

মুম রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫০, ১০ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৭:৫৪, ১০ অক্টোবর ২০২০
লুইজ গ্লুকের ৫ কবিতা

নৈশদৃশ্য

গত রাতে মা মারা গেছেন
মা যিনি কখনোই মরেন না। 

বাতাসে শীত ছিল
বহু মাস দূরে
তবুও বাতাসে ছিল।

সেটা ছিল মে মাসের দশমী
হায়াসিন্থ আর আপেলে ফুল ফুঁটেছে
ফুঁটেছে পেছনের বাগানে।

আমরা হয়তো শুনতে পাবো
মারিয়া কি গাইছে গান চেকোশ্লাভাকিয়া থেকে?

আমি কতোটা একা?-
এই ধাঁচের কোনো গান। 

আমি কতোটা একা,
না মা, না বাবা?-
আমার মগজ মনে হয় একদম ফাঁকা তাদের ছাড়া।

পৃথিবীর বাইরে থেকে সুগন্ধি আসছে;
সিঙ্কে সব পাত্রগুলো রাখা ছিল,
ধোয়া তবে একসঙ্গে গোছানো নয়।

পূর্ণ চাঁদের নিচে
মারিয়া ধোয়া কাপড়গুলো ভাঁজ করছিল;
আঁটোসাটো? বিছানার চাদরগুলো
শুকনো সাদা আয়তক্ষেত্র হয়ে গেল? চাঁদের আলো।

আমি কতোটা একা, কিন্তু সংগীতে
আমার নির্জনতাই আমার আনন্দোৎসব।
সেটা ছিল মে মাসের দশমী
 যেমন তার আগে ছিল নবমী, অষ্টমী।

মা ঘুমিয়ে ছিল তার বিছানায়,
তার বাহু বাইরে ছড়ানো, তার মাথা
ওগুলোর মধ্যে ভারসাম্য করে রাখা। 
 

ভালোবাসার কবিতা

সব সময়ই বেদনা তৈরি হওয়ার মতো কিছু থাকে।
তোমার মা উল বুনে যায়।
লালের প্রত্যেকটা রংবৈচিত্র সে স্কার্ফে পরিণত করে।
ওগুলো ক্রিসমাসের জন্য এবং তোমাকে ওগুলো উষ্ণ রাখবে
যখন সে একবারের পর আরেকবার বিয়ে করবে, তোমাকে নিয়ে যাবে একা। কীভাবে সেটা কার্যকর হবে,
যখন সেই প্রত্যেকটা বছর সে তার নিজের বিধবা হৃদয় সঞ্চিত রেখেছে যেন বা মৃতরা ফিরে আসবে।
আশ্চর্যের কিছু নেই তুমি তোমার মতোই,
রক্তে ভয় পাও, তোমার নারী
যেন একটার পর আরেকটা ইটের দেয়াল।
 
সুখ

এক পুরুষ আর এক নারী শুয়ে আছে সাদা বিছানায়।
এখন সকাল। আমি ভাবছি
শিঘ্রই তারা জেগে উঠবে। 
বিছানার পাশের টেবিলেই ফুলদানী একটা
লিলি ফুলে ভরা; সূর্যকিরণ
সাঁতার কাটে তাদের গলায়। 
আমি দেখলাম পুরুষটি ঘুরলো নারীর দিকে
যেন তার নাম বলবে
কিন্তু নীরবে, নারীটির মুখের গভীরে-
জানালার তাকে, একবার, দুইবার
একটা পাখি ডাকে। 
আর তারপর সে নারী নড়ে ওঠে, তার শরীর
পুরুষের নিঃশ্বাসে ভরে যায়।   

আমি আমার চোখ খুলি; তুমি আমাকে দেখছো।
এই ঘরের প্রায় পুরোটা জুড়ে
সূর্যের আলো ভেসে বেড়ায়।
তোমার মুখের দিকে তাকাও, তুমি বললে,
তোমার নিজের কাছে আমাকে ধরলে
একটা আয়না বানাবে বলে।
কী প্রশান্ত তুমি। আর জ্বলন্ত চাকাখানি
আমাদের উপর দিয়ে ধীরে চলে গেল।
 

প্রথম স্মৃতি

অনেক আগে, আমি আহত হয়েছিলাম। আমি বেঁচেছি
নিজের প্রতিশোধ নিতে
আমার বাবার বিরুদ্ধে, না
সে যা ছিল তার জন্য নয়-
বরং আমি যা ছিলাম তার জন্য: সময়ের শুরু থেকেই
শৈশবে, আমি ভেবেছিলাম
বেদনা মানে
আমি ভালোবাসায় নেই।
এর মানে আমি ভালোবেসেছিলাম। 
 
লাল পপি ফুল

বিরাট ব্যাপার
এটা নয় যে 
মন আছে। অনুভব: 
ওহ! আমার তা আছে, তারা
আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমার 
একজন প্রভু আছেন আকাশে
যাকে সূর্য বলে ডাকা হয়, আর তার জন্য
উন্মোচিত হই আমি, তাকে দেখাই 
আমার নিজের হৃদয়ের আগুন, আগুন
তার উপস্থিতির মতোই।
কিসের গৌরবই-বা করবো
যদি না হৃদয়ের করি? ও আমার ভাইয়েরা আর বোনেরা
তোমরা কি একদা আমার মতো ছিলে, অনেক আগে,
মানুষ হওয়ার আগে? তোমরা কি
নিজেদের আজ্ঞা দিয়েছিলে 
একবার উন্মোচিত হতে, যে কখনোই
উন্মোচিত হবে না আর? কারণ সত্যই
আমি কথা বলছি এখন
যেভাবে তুমি বলো। আমি বলি
কারণ আমি যে ছিন্নভিন্ন।


 

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়