ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

বাবা-মায়ের খোঁজে সুইজারল্যান্ড থেকে কুড়িগ্রামে

বাদশাহ সৈকত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাবা-মায়ের খোঁজে সুইজারল্যান্ড থেকে কুড়িগ্রামে

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা: সুদীর্ঘ ৪১ বছর পর বাবা-মায়ের খোঁজে কুড়িগ্রামে এসেছেন সুইজারল্যান্ড প্রবাসী এক নারী।

সাথে নিয়ে এসেছেন প্রবাসী বন্ধু ও সুইজারল্যান্ডের স্বামীকেও। এই নারীর নাম রওফি। স্বামী জিইয়াস মরিনো। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে জেলার উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খুঁজেও কোন সন্ধান পাননি তার বাবা-মায়ের।

এই দম্পতিকে এ কাজে সহযোগীতা করতে আসা লোকজন জানান, ১৯৭৪ সালে সাড়ে তিন বছর বয়সে হারিয়ে যায় খোদেজা নামের এক শিশু। তারপর জেলার উলিপুর উপজেলার থেতরাই বাজার এলাকায় মেয়েটিকে কাঁদতে দেখে বেসরকারি শিশু সংগঠন টেরেডেস হোমসে কর্মরত লোকজন তাকে নিয়ে গিয়ে সেখানে আশ্রয় দেয়। পরে সেখানেই ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত টেরেডেস হোমস এ অন্যান্য শিশুদের সাথে বেড়ে উঠতে থাকে সে। এরপর সুইজারল্যান্ডের রওফি পরিবার বাংলাদেশে এসে শিশুটিকে দত্তক নিয়ে সুইজারল্যান্ডে চলে যায়।

সে সময় স্মৃতি হিসেবে একটি সাদাকালো ছবি সাথে করে নিয়ে দত্তক নেওয়া বাবা-মায়ের সাথে পাড়ি জমায় জেনেভা শহরে। সেখানে নতুন জীবন শুরু হয় খোদেজার। নাম হয় খোদেজা থেকে রওফি।

খোদেজা সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় লেখাপড়া শেষ করে সেখানকার এক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার জিইয়াস মরিনোকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে ৫ বছরের ইলিয়াস নামের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

সেখানে লেখাপড়া শেষ করে ২০০১ সাল থেকে জেনেভার সাইকেল ডেলা গোলেহে স্কুলে শিক্ষকতার কাজ শুরু করেন। কিন্তু সাথে নিয়ে যাওয়া সাদাকালো ছবিটা ছাড়া অতীতের আর কিছুই মনে নেই তার।

দীর্ঘদিন পরে হলেও এখন বাবা-মায়ের সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। বিদেশের মাটিতে দত্তক সন্তান হিসেবে বেড়ে উঠার পর জানতে পারেন তার জন্ম বাংলাদেশে। স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে থাকলেও জন্মভূমির টানে ছুটে এসেছেন। তার এই ইচ্ছের কথা স্বামীকে জানানোর পর সাথে এসেছেন তিনিও।

খোদেজার সফর সঙ্গি হিসেবে ইনফ্যান্টস ডু মনডের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর রাকিব আহসান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের লোকজনকে কাজে লাগিয়ে আমরা খোদেজার মা-বাবা এমনকি তার স্বজনদের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তবে কেউ যদি কখনো খোদেজার মা-বাবার পরিচয় দাবি করেন সে বিষয়ে আমরা সঠিক তথ্য উপাত্তসহ ডিএনএ টেস্ট করিয়ে শতভাগ নিশ্চিত হব। কেননা আমরা চাই না এই সময় এসে খোদেজা কোনো প্রতারণার শিকার হোক।’

অপর সফর সঙ্গী জেনেভা বাংলা পাঠশালার পরিচালক ও সুইস বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক বলেন, ‘খোদেজার সঙ্গে আমার পাঠশালাতেই পরিচয় হয়। সেখানে আলাপচারিতায় তার শৈশবের কথা জানালে আমিও তার বাবা-মায়ের খোঁজে সঙ্গে এসেছি। বিষয়টি খুবই জটিল। কেননা কোনো ডকুমেন্টস আমাদের হাতে নেই। তারপরেও যদি কোন ভাবে সন্ধান পাওয়া যায় সেই আশা তো আছে।’

স্থানীয় এনজিও কর্মী নুরুল হাবীব পাভেল জানান, ১৯৭৪ সাথে কুড়িগ্রামে দুর্ভিক্ষ চলছিল। তখনকার পরিস্থিতি দেখে চিলামারীর নুরন্নবী চৌধুরী, দেলোয়ার মাস্টার, ছমচ হাজীসহ অনেকেই একটি নোঙ্গর খানা খোলেন। পরবর্তী সময়ে টিডিএইচ নোঙ্গর খানাটি পরিচালনার দায়িত্ব নেন। ১২শ শিশু ছিল নোঙ্গর খানায়। প্রতি ৫০জন শিশুকে দেখার জন্য একজন করে টিম লিডার ছিল। খোদেজার টিম লিডার ছিলেন আনিছুর। সে খোদেজার ছবি দেখে চিনতে পেরেছে। কিন্তু তার মা-বাবার বিষয়ে কিছুই বলতে পারেনি।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ কুড়িগ্রাম/২৬ জানুয়ারি ২০১৯/ বাদশাহ্ সৈকত/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়