ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

খুলনায় বাবা-মেয়ে হত্যায় সহোদরসহ ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ১৬ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খুলনায় বাবা-মেয়ে হত্যায় সহোদরসহ ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা: খুলনায় এক্সিম ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা ও তার বৃদ্ধ বাবা ইলিয়াস চৌধুরী হত্যা মামলায় ৫ আসামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

গণধর্ষণের পর পারভীন এবং তার বাবা ইলিয়াসকে জোড়াখুনের ঐ চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক ঘটনায় জড়িত দুই ভাইসহ আসামিদের ফাঁসির আদেশ দেন খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক  মোহা. মহিদুজ্জামান ।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছে, খুলনা নগরীর লবণচরা থানাধীন বুড়ো মৌলভীর দরগা রোডের বাসিন্দা শেখ আব্দুল জলিলের ছেলে সাইফুল ইসলাম পিটিল (৩০), তার ভাই মো. শরিফুল (২৭), মো. আবুল কালামের ছেলে মো. লিটন (২৮), অহিদুল ইসলামের ছেলে আবু সাইদ (২৫) ও মৃত সেকেন্দারের ছেলে মো. আজিজুর রহমান পলাশ (২৬)। এদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আসামি শরিফুল পলাতক রয়েছে।

খুলনার মঙ্গলবার দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে ধর্ষণের মামলায়ও ৫ জনের ফাঁসির আদেশ ও প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড এবং লাশ গুমের চেষ্টার অভিযোগে প্রত্যেককে আরো ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে এক্সিম ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে উত্যক্ত করতো এলাকার কয়েকজন বখাটে সন্ত্রাসী। তাদের উত্যক্তের প্রতিবাদের কারণে ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে গণধর্ষণ ও তার পিতা ইলিয়াস চৌধূরীসহ তাকে হত্যা করা হয়।

আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেন, পারভীন অফিসে আসা-যাওয়ার পথে আসামিরা কু-প্রস্তাবসহ নানাভাবে যৌন হয়রানি করতো। এর প্রতিবাদ করায় ঘটনার দিন রাতে বাড়ির দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করে ৫ আসামি। এরপর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পারভীনের বাবাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পাশের রুমে থাকা পারভীনকে ৫জন মিলে গণধর্ষণের পর হত্যা করে সেফটি ট্যাংকির মধ্যে বাবা ও মেয়ের মরদেহ ফেলে দেয়। পরে ঘরে টাকা পয়সা ও স্বর্নালঙ্কার লুটতরাজ চালিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

নগরীর লবণচরা থানাধিন বুড়ো মৌলভীর দরগা এলাকার ৩নং গলির ঢাকাইয়া হাউজ এ.পি ভিলা নামের বাড়িতে ২০১৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর নৃশংস এ খুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরের দিন লবনচরা থানায় পারভীন সুলতানার ভাই রেজাউল আলম চৌধুরী বিপ্লব বাদি হয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলা দায়ের করেন। পারভীন সুলতানাকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের অভিযোগে ২২ সেপ্টেম্বর আরেকটি  মামলা দায়ের হয়।

২০১৬ সালে হত্যাকান্ডের ও একই বছরের ২৪মার্চ গণধর্ষনের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মোঃ কাজী বাবুল ওই ৫জনকে অভিযুক্ত করে খুলনা’র মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। হত্যাকান্ডের মামলায় ২২জন ও গণধর্ষণের মামলায় ২৮জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। আসামিদের মধ্যে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ২জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের বর্ণনা রয়েছে। চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ৩নং ট্রাইব্যুনালে মামলাটির যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) শুরু হয়।

মামলার তদন্ত চলাকালে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৫জনের মধ্যে ৪জন গ্রেফতার হয়। এছাড়াও গ্রেফতার করা হয় পিটিলের স্ত্রী আসমা খাতুন, নোয়াব আলি গাজী ও আসলাম মিস্ত্রি নামের একজন সন্দেহভাজনকে। তাদের মধ্যে লিটন ও সাঈদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে উঠে আসে লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনা।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন স্পেশাল পিপি এড. ফরিদ আহমেদ। সহায়তায় ছিলেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার পক্ষে এড. কাজী সাব্বির আহমেদ, এড. মোমিনুল ইসলাম, এড. তসলিমা খাতুন, এড. কুদরত ই খুদা।

পিপি এ্যাড. ফরিদ আহমেদ এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী এড. মোমিনুল ইসলাম এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মামলার বাদি নিহত পারভীন সুলতানার ভাই রেজাউল আলম চৌধূরী বিপ্লব তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানান। একই সঙ্গে পলাতক আসামি শরিফুলকে গ্রেফতারেরও দাবি জানান।


রাইজিংবিডি/খুলনা/১৬ জুলাই ২০১৯/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়