ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি, ১০ জনের মৃত্যু

বাদশাহ সৈকত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ১৬ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কুড়িগ্রামে ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি, ১০ জনের মৃত্যু

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা : কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৪ লক্ষাধিক মানুষ। সাত শিশুসহ ১০ জন পানিতে ডুবে মারা গেছেন।

সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের নতুন অনন্তপুর এলাকায় মঙ্গলবার বিকেলে নৌকা ডুবে চার শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত দুজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান।

স্থানীয়রা জানায়, নতুন অনন্তপুর গ্রামের কয়েকজন নারী ১৪-১৫টি শিশুকে নিয়ে একটি ডিঙ্গি নৌকায় করে বন্যার পানিতে ঘুরতে পাশের একটি বিলে যান। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নৌকাটি ডুবে যায়। স্থানীয়রা বিষয়টি দেখতে পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকে অবগত করে নৌকা নিয়ে তাদের উদ্ধার করতে যান। তারা শিশুসহ কয়েকজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই দুজনের মৃত্যু হয়। রুনা বেগম (৩৫) নামের এক নারী নিজে পানিতে ডুবে দুই হাতে সন্তানকে পানির ওপর ভাসিয়ে রাখেন। স্থানীয়রা তার শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করতে পারলেও দীর্ঘক্ষণ পানিতে ডুবে থাকা মাকে বাঁচাতে পারেনি। নিহত চার শিশু হলো- অনন্তপুর গ্রামের ব্যাপারীপাড়ার আয়নাল হকের ছেলে হাসিবুল (৭), একই গ্রামের মহসিন আলীর মেয়ে রুপা মনি (৮), মনছুর আলীর ছেলে মোরসালিন সুমন (১০) এবং রাশেদের কন্যা শিশু রুকু মনি (৭)।

অন্যদিকে, কুড়িগ্রামের রৌমারী ও নাগেশ্বরী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে দুই যুবক নিখোঁজ হয়েছে। এদের মধ্যে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

ওই ‍দুই যুবক হলেন- রৌমারী উপজেলার চাক্তাবাড়ী গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৩) এবং নাগেশ্বরী উপজেলার কালিগঞ্জ ইউনিয়নের মাদাইখাল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আ ন ম মুসার ছেলে আল মামুন (৪০)।

 

নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ রওশন কবির জানান, মাদাইখাল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আ ন ম মুসা সোমবার নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার বড় ছেলে আল মামুন বাবাকে দেখতে নাগেশ্বরী উপজেলা শহর থেকে বাড়ির দিকে রওনা দেন। পাঁয়ে হেটে যাওয়ায় সময় বাড়ির পাশে মাদাইখাল এলাকায় খাদে পড়ে নিখোঁজ হন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে নাগেশ্বরী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তার লাশ উদ্ধার করে।

রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ আবু মো. দিলওয়ার হাসান ইনাম জানান, রৌমারী উপজেলার চাক্তাবাড়ী এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকালে সাইফুর ইসলাম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কলাগাছের ভেলায় উঠিয়ে উঁচু স্থানের দিকে যাওয়ার সময় বিদ্যুতের তারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পানিতে পড়ে যান। স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের নিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার সন্ধান পাননি।

এছাড়া, গত রোববার ও সোমবার দুই দিনে বন্যার পানিতে ডুবে চিলমারীতে দুটি এবং উলিপুরে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. এস এম আমিনুল ইসলাম।

বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গো-খাদ্যের সংকট দেখা দেওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বানভাসী মানুষজন। চরাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে পার্শ্ববর্তী উঁচু বাঁধ ও পাকা সড়কসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।

জেলা প্রশাসন থেকে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের কথা বলা হলেও বন্যাদুর্গত বেশিরভাগ মানুষ ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

 

কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান জানান, জেলার ৯ উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য এখন পর্যন্ত ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। নতুন করে ১ হাজার মেট্রিক টন চাল, ২০ লাখ টাকা ও ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলার সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ৮৫টি মেডিকেল টিম বন্যা বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করছে।

কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলাসহ সোনাহাট স্থলবন্দরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রৌমারী উপজেলার চাক্তাবাড়ী এলাকায় শহররক্ষা বাঁধের প্রায় দেড়শ ফুট ধসে যাওয়ায় যাদুরচর ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী ৩০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

বন্যার কারণে ৩৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে ৯ হাজার ৯৪২ হেক্টর জমির ফসল।


রাইজিংবিডি/কুড়িগ্রাম/১৬ জুলাই ২০১৯/বাদশাহ্‌ সৈকত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়