ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে বৃক্ষপ্রেমীদের ভিড়

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২১ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে বৃক্ষপ্রেমীদের ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা: খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে গেলে সবুজের সমারোহ দেখে মন ভরে যায়। বৃক্ষমেলা উপলক্ষে ইট-বালুর বিবর্ণ মাঠটি এখন সবুজে ভরপুর।

বনজ-ফলজ-ঔষধি আর শোভাবর্ধনকারী গাছে ভরে আছে খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দান। ভিড় লেগে আছে বৃক্ষপ্রেমীদের। বিকিকিনি হচ্ছে নানা জাতের গাছের চারা। এভাবেই জমে উঠেছে খুলনার বৃক্ষমেলা।

১১ জুলাই থেকে বসেছে খুলনা বিভাগীয় এই বৃক্ষমেলা। চলবে ২৫ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন মেলায় প্রয়োজনীয় গাছের খোঁজে আসছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। স্টলে স্টলে শোভা পাচ্ছে লেবু, জাম্বুরা, পেয়ারা, মাল্টা, ড্রাগন, কমলা, নাশপতি, সফেদাসহ বাহারি ফলের গাছ। চোখ জুড়ানো সবুজের মেলায় এসে খুশি দর্শনার্থীরা।

মেলায় ঢুকতেই চোখে পড়ে নানা জাতের আম গাছ। মেলা সেজেছে ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ শতাধিক জাতের আম গাছে। বিভিন্ন জাতের ফলের পাশাপাশি অর্কিড, ক্যাকটাস, বনসাই, ড্রসিনা, অ্যানথোরাম, মুসান্ডা, এরিকা ফুলের গাছ মেলার সৌন্দর্যকে বাড়িয়েছে বহুগুণে।

মেলাজুড়ে আছে বনজ বৃক্ষের সমাহার। মাত্র ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকার সৌখিন গাছও শোভা পাচ্ছে মেলায়। বিশেষ করে যারা ছাদ কৃষি করেন তারা কিনছেন ফল-ফুলের নানা গাছ।

মেলার নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ঠিক বাম পাশে রয়েছে ‘ম্যাজিক ফেরোমন সবজি স্পেশাল’ নামে একটি বেড। যেখানে একই সঙ্গে মাছ, সবজি ও ফলজ-বনজ গাছ চাষের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। রয়েছে ভোজন রসিকদের পছন্দের অন্যতম মাংস রান্নার উপকরণ ‘চুইঝাল’র গুণাগুণ সম্বোলিত ফেস্টুনও।

সবমিলে ধীরে ধীরে জমে উঠছে মেলা। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে মেলায় উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। নাগরিক জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া সবুজ অরণ্য যেন মেলায় টানছে নগরবাসীকে।

 

খুলনা বিভাগীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা কমিটির হিসেবে- এবারের মেলায় স্টল রয়েছে ৫৬টি। মেলা উদ্বোধনের দিন বিক্রি হয়েছে বনজ ১১৩টি, ফলদ ৩১০টি, ওষধি ১১৯টি, সৌন্দর্য বর্ধণকারী ৩৪৯টি এবং ফুল গাছ ২৩৫টি । যার মূল্য ছিল ৮৬ হাজার ৪৯৫ টাকা। ১১ জুলাই থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩২৯টি গাছ বিক্রি হয়েছে। যার মূল্য ১৫ লাখ ৩৬৩ টাকা।

নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বপালনরত সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বন সহকর্মী সৈয়দ অলিউর রহমান মিলন ও মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিনই মেলায় দর্শনার্থী এবং ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। সার্বিক নিরাপত্তা, শৃংখলা এবং পরিবেশ ভালো থাকায় অভিভাকরা সন্তানদের নিয়ে মেলায় আসছেন। বিক্রিও হচ্ছে বেশ। এবার মেলায় ফলজ এবং শোভাবর্ধনকারী গাছের চারা তুলনামূলক বেশি বিক্রি হচ্ছে।’

মেলায় আগত দৌলতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের নবীন কৃষিবিদ নাইমুল হাসান জানান, মেলায় আসলে অনেক পরিচিত-অপরিচিত গাছ দেখা যায়, কেনা যায়। তবে মেলার সময়টা অনেক কম হয়ে গেছে। মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা হলে ভাল হয়।

খুলনা সিটি কলেজের ছাত্রী রওশন জেবিন তৃষা বলেন, ‘বৃক্ষমেলায় আসলে মন ভালো হয়ে যায়। অনেক প্রজাতির গাছ দেখা যায়, চেনা যায়। তবে বৃক্ষমেলার প্রচারণা আরও বাড়ানো দরকার।’

করিম নার্সারীর প্রতিনিধি আকবর বিন ওসমানি বলেন, ‘এবারের বৃক্ষমেলার আয়োজন অনেক ভাল। বেচাকেনাও বেশ ভাল হচ্ছে। মানুষের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। মানুষের মধ্যে সৌখিনতা বেড়েছে, ফলে অনেকেই এখন ছাদ কৃষির দিকে ঝুঁকছেন।’

খুলনা নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি এসএম বদরুল আলম রয়েল জানান, এক সময় খুলনা সিটিতে ৮৭টি নার্সারি ছিল। শুধুমাত্র জায়গার অভাবে সেই সংখ্যা এখন নেমে গেছে ২৬টিতে। তিনি বলেন, মেলার সময়সীমা বাড়ানো দরকার। এখানে প্রতিদিন নতুন নতুন গাছ আসছে। বিক্রিও হচ্ছে ভালো।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ বশিরুল-আল-মামুন বলেন, ‘আমরা এবার মেলায় আসা সকল নার্সারি মালিককে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দিতে চেষ্টা করছি। মেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। দর্শনার্থী বা ক্রেতারা সানন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং তাদের পছন্দমতো বৃক্ষ ক্রয় করতে পারছেন।

 

রাইজিংবিডি/ খুলনা/২১ জুলাই ২০১৯/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়