ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

গ্যাস নিয়ে দিন-রাত কানামাছি

আরিফুল ইসলাম সাব্বির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ২৫ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গ্যাস নিয়ে দিন-রাত কানামাছি

সাভার সংবাদদাতা : সাভার-আশুলিয়ায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। তবে দিনের বেলা এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হলেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা চলে যাবার পরেই অবৈধ গ্যাসের পুনঃসংযোগ দিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, সাভার-আশুলিয়া এলাকায় ৩৫ হাজারের মতো বৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। প্রতিটিতে একটা বা দুইটা চুলার বৈধ সংযোগ থাকলেও গ্যাসের সঞ্চালন লাইনকে নিজেদের মতো অবৈধ লাইন চালানোর উপযোগী করে নিচ্ছে একটি গোষ্ঠী। 

তবে একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও এসবের জন্যে দায়ী ব্যাক্তিরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

স্থানীয় এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রমিক প্রধান এলাকা হিসেবে চিহ্নিত আশুলিয়া ও সাভারের ঘোষবাগ, কাঠগড়া, আনারকলি এলাকায় একই জায়গায় ৮ থেকে ১০ বার অভিযান চালিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কিন্ত এরপরেই আবার এসব সংযোগ নতুন করে বসিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে প্রকৃতপক্ষে অসাধু ব্যবসায়ীরাই লাভবান হয়। কারণ প্রত্যেকটা সংযোগ দিতে নতুন করে টাকা নিচ্ছে।

জানা যায়, একেকটা আবাসিক বাড়িতে প্রতিবার নতুন সংযোগে প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা নেয়া হয়। এছাড়া যেহেতু এসব সংযোগে সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকে না, ফলে ইচ্ছামতো চুলা প্রতি এক থেকে দুই হাজার টাকা নেয়া হয়।
চাহিদামতো বৈধ সংযোগ না পাওয়ায় বাড়িওয়ালারা বাধ্য হয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিচ্ছে বলে দাবি করেন আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার বাড়িওয়ালা আব্দুর রহমান। 

তিনি বলেন, ‘অবৈধ সংযোগ নেয়ায় এ পর্যন্ত ৫বার গ্যাসের লাইন বিচ্ছিন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিবারই নতুন করে টাকা দিয়ে নতুন করে লাইন নিয়েছি। তা না হলে বাড়িতে ভাড়াটিয়া থাকবে না।’এসময় তিনি চাহিদা অনুযায়ী বৈধ গ্যাস সংযোগ দিলে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেবেন না বলে জানান।

আনারকলি এলাকার বাড়িওয়ালা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিবার গ্যাস সংযোগ নেয়ার সময় বড় অংকের টাকা দিতে হয়। এছাড়া মাসে মাসে বিল তো আছেই। আমরা বৈধ গ্যাস চাই। কিন্তু না পেলে কি করব? গ্যাস ছাড়া বাড়িতে ভাড়াটিয়া পাওয়া যায় না। তবে সরকার যদি আমাদের বাড়ির গ্যাস লাইন বৈধ করে দিতো তাহলে আমাদের এমন দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।’

এদিকে মূল সঞ্চালন লাইন থেকে অবৈধ সংযোগে গ্যাস চলে যাওয়ায় বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীরাও গ্যাস সংকটে পড়ছেন বলে জানান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তারা।

সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) আবু শাহাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘অবৈধ গ্যাস ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা সব সময়ই সোচ্চার। নিয়মিত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু তারা রাতের আঁধারে আবার সংযোগ দিচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এসব অবৈধ সংযোগ নিতে গিয়ে বা ব্যবহার করতে গিয়ে নানা দুর্ঘটনা ও অগ্নিকাণ্ড ঘটছে।’

তিতাসের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘অবৈধ গ্যাস ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। এরই মধ্যে কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করাও হয়েছে। তবে জনবলের অভাবের কারণে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ গ্রহণ ও প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আপাতত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু যাঁরা অবৈধ সংযোগ নিচ্ছেন, তারা একসময় বিপদে পড়বেন।’


রাইজিংবিডি/সাভার/২৫ আগস্ট ২০১৯/ আরিফুল ইসলাম সাব্বির /জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়