ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

আসমানীর জীবন যাপন ইউপি সদস্যের!

ফরহাদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ৩১ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আসমানীর জীবন যাপন ইউপি সদস্যের!

ফরহাদ হোসেন, লক্ষ্মীপুর : `আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।‘ কবি জসীমউদদীনের বিখ্যাত সেই কবিতার আসমানীর বাস্তব প্রতিমূর্তি হয়ে উঠেছেন লক্ষ্মীপুরের প্রাক্তন ইউপি সদস্য রোকেয়া বেগম।

১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আবিরনগর এলাকার নারী ইউপি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দায়িত্বে থাকাকালে গ্রামের গরিব-অসহায়দের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করেছেন। কিন্তু পরিবর্তন ঘটেনি তার নিজের ভাগ্যের।

উঠনে দাঁড়ালে ভাঙা বেড়া দিয়ে তার ঘরের ভেতরটা দেখা যায়। বেড়ার ফাঁক দিয়েই দেখা যায় একটা ছোট্ট চৌকি। সামান্য বাসনপত্র আর টুকিটাকি আসবাবপত্রের ছিটেফোঁটা নমুনা। কবিতার আসমানীর ঘরের চালে ভেন্না পাতার ছাউনি। আর রোকেয়া বেগমের চালের উপরে বাঁশ পাতার আচ্ছাদন। টোঁটা-ফাঁটা টিনের চালের ফাঁক দিয়ে বর্ষায় বৃষ্টির পানির ঢল নামে ঘরে। আর খরার দিনে চলে রোদের আলোর দোর্দণ্ড প্রতাপ। রাতের বেলায় চাঁদই কেবল কোমল আলো দিয়ে মমতার পরশ বুলিয়ে যায়।

রোকেয়া বেগম লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের আবিরনগর গ্রামের আমজাদ মিঝি বাড়ির মৃত আব্দুল হামিদের মেয়ে। গ্রামবাসী এখনো তাকে ভালোবেসে রোকেয়া ‘মেম্বার’ বলেই ডাকেন। তিনি ছিলেন সৎ ও আদর্শ একজন ইউপি মেম্বার। তাঁর অবদান ভোলেননি গ্রামবাসী। তাই এখনো তাঁর নামের শেষে মেম্বার পদবী জুড়ে দিয়েই সম্ভাষণ করেন।

গ্রামবাসী জানান, রোকেয়া ছিলেন একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান ইউপি সদস্য। তিনি নিজের জন্য কখনো ভাবেননি। গ্রামের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সব সময়। কিন্তু ভাগ্যচক্রে আজ তিনি অসহায়।

রোকেয়া বেগমের বাড়ি গিয়ে তাকে ঘরের চৌকাঠের উপরে বসে থাকতে দেখা যায়। তবে ঘরটিকে ঘর বললে ভুলই হবে। বরং বলা চলে টুকরো-টাকরা টিনের স্তুপ। ঘরটির অবস্থা খুবই নাজুক। সামান্য বৃষ্টি হলেও পানিতে ভেসে যায় ঘর। বেড়ার টিনগুলো ভাঙা। খুঁটিগুলোও নড়বড়ে। যেকোনো সময় ঘরটি হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়তে পারে। আর তাতে জীবননাশেরও সম্ভাবনা রয়েছে প্রাক্তন ইউপি সদস্য রোকেয়ার।

জীবনের এই নির্মম বাস্তবতায় কিছুটা হতাশ রোকেয়া বলেন, ‘জীবনে মানুষের অনেক উপকার করেছি। কিন্তু আমি নিজেই এখন নিঃস্ব। টাকা পয়সা চাই না, থাকার জন্য শুধু একটা ঘর যদি পেতাম!’

এদিকে, ‘জমি আছে, ঘর নেই’ এই প্রকল্পটির মাধ্যমে অসহায় ও গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। প্রকল্পটির মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরের মধ্যবিত্ত শ্রেণির বহু মানুষ ঘর পেলেও ঘর মেলেনি রোকেয়ার।

রোকেয়া বেগম জানান, ঘরের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে তিনি অনেকবার গেছেন। কোনো প্রতিকার হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ধর্ণা দিলে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রেদোয়ান আরমান শাকিল-এর সাথে যোগাযোগ করা হয়।

তিনি জানান, শিগগিরই সাবেক ইউপি সদস্য রোকেয়ার বাড়িটি পরিদর্শন করা হবে। নতুন বরাদ্দে রোকেয়া বেগমের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।

রোকেয়া বেগম দক্ষিণ লাহারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। বাবার সংসারে অভাব-অনটনের কারণে পড়ালেখা করতে পারেননি। দর্জির কাজ শিখেছিলেন। পরে গ্রামের গৃহবধূ ও তরুণীদের দর্জির কাজের প্রশিক্ষণ দিতেন। হঠাৎ শারিরীক অসুস্থতায় রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন তিনি। সেকারণে বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি আর। বাবা-মায়ের মৃত্যর পর একাই জরাজীর্ণ ঘরটিতে বাস করছেন তিনি।

বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া ভিজিডি কার্ডের রেশন, হাঁস-মুরগি ও কয়েকটি ছাগল পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন সততার মূর্ত প্রতীক রোকেয়া বেগম।

 

রাইজিংবিডি/লক্ষ্মীপুর/৩১ আগস্ট ২০১৯/ফরহাদ হোসেন/ইভা/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়