ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

এরশাদের আসনে নির্বাচন

লাঙ্গল-ধানের শীষ মাঠে নামাতে পারেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লাঙ্গল-ধানের শীষ মাঠে নামাতে পারেনি

রংপুর সদর-৩ আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল এবং বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা এখনো দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে পারেনি। অপরদিকে আসনটি জাতীয় পার্টিকে যাতে ছেড়ে দেয়া না হয় এজন্য মাঠ গরম রেখেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আ'লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুকে নৌকা মার্কার প্রার্থী রাখার দাবিতে রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো রংপুরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক সংগঠন মানববন্ধন করেছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে রংপুরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বহাল রাখার দাবি জানানো হয়।

এর আগের দিন শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) নগরীর বেশ কয়টি স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের পক্ষ থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।  নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগ সরে দাঁড়ালে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জাপা সাদ এরশাদ ও  এরশাদের ভাতিজা আসিফের সাথে। এমনটা ধারণা করছেন রংপুরের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রংপুর সদর আসনে অনেক নাটকীয়তার পর জাতীয় পার্টির প্রার্থী করা হয়েছে রওশন পুত্র সাদ এরশাদকে। এতে খুশি হতে পারেনি স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। মহানগর জাপার সভাপতি ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সদর আসনের নির্বাচন নিয়ে তার কোনো আগ্রহ নেই। তিনি এই নির্বাচন থেকে দূরে থাকবেন। অপরদিকে মনোনয়ন বঞ্চিত মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আহমেদও এই নির্বাচনে ক্ষুব্ধ। তিনি এবং অনুসারীরা কেউই নির্বাচনি মাঠে নেই। ফলে অনেকটা বেকায়দায় রয়েছে জাপা প্রার্থী।

এই আসনে আওয়ামী লীগ বাদেও সাদের শক্ত প্রতিপক্ষ হচ্ছে এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এই আসনে লড়ছেন। সাদ এরশাদকে লাঙ্গলের প্রার্থী করায় রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির ভোটের মাঠে না নামার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে তাদের দখলে থাকা মহানগরের ২৫ টি ওয়ার্ডেও নেতাকর্মীরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে কিনা সেটা চিন্তায় ফেলেছে জাতীয় পার্টির হাইকমান্ডকে।

মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ সাদ এরশাদ মনোনয়পত্র জমা দেন। ওই দিনই সাদ এরশাদকে চ্যালেঞ্জ করে চাচাতো ভাই আসিফ শাহরিয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এরশাদুল হক রঞ্জুর খোলা চিঠি রংপুরে আলোচনায় এসেছে। ফেসবুকে পোস্ট করা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে রংপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। জাতীয় পার্টির দুর্গ এখন আওয়ামী লীগের উর্বর ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

আসনটি উন্মুক্ত করে দেয়া হলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিশ্চিত হেরে যাবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এধরনের একাধিক পোস্ট রংপুরের মানুষের দৃষ্টি আর্কষণ করেছে।

এদিকে সদ্য বিএনপিতে যোগদানকারী রিটা রহমানকে আবারো দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় রংপুরের বিএনপির নেতাকর্মীরা খুশি হতে পারেনি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের ধারণা ছিল স্থানীয় কোনো প্রার্থী দেয়া হবে। কিন্তু হাইকমান্ড রিটা রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছে। ফলে হাইকমান্ড রংপুরে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের রিটা রহমানের পক্ষে নামাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে রিটা রহমান দু’একজন নিজের অফিসের লোক সাথে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। রংপুর বিএনপির কোনো নেতাকর্মীই সাথে ছিল না। এখনো নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে পারেননি তিনি।

জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, ‘হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তে দলীয় নেতাকর্মীরা হতাশ। ফলে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, শেষ পর্যন্ত নেতাকর্মীরা রিটা রহমানের পক্ষে থাকবে কি না ।’

অন্যদিকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী রংপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক অ‌্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু প্রার্থী হওয়ায় রংপুর আওয়ামীলীগের মধ্যে এখন পর্যন্ত ঐক্য রয়েছে। নেতাকর্মীদের দাবি এই আসনের ভোটাররা নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আওয়ামীলীগের অ‌্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুকে নৌকার প্রার্থী রাখার দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও সাহিত্য সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে।

শনিবার দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে বৃষ্টিতে ভিজে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়। একই দাবিতে নগরীর মডার্ণ মোড় ও পাগলাপীরেও বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘নৌকা মার্কার প্রার্থী পেয়ে রংপুরের মানুষ খুশি হয়েছে, সেই সাথে মুখিয়ে আছে উপ-নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য। নৌকা মার্কা না হলে মানুষ ভোট কেন্দ্রেও যেতে আগ্রহী না, অন্য মার্কায় ভোট দিতে আর চায় না। দীর্ঘদিন থেকে মহাজোটের স্বার্থে অন্য প্রতীকে ভোট দিয়েছে। কিন্তু আর নয়, এখন মানুষের একটাই কথা নৌকায় ভোট দিবো, রংপুরের উন্নয়নে সামিল হবো। অথচ একটি দল বারবার রংপুরের মানুষের আবেগকে পুঁজি করে ভোট নিয়ে রংপুরের উন্নয়ন না করে নিজের ও দলের নেতাকর্মীদের উন্নয়ন করেছে।

রংপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি বলেন, ‘এই আসনে নৌকা ছাড় দিবে কি দিবে না এমন কোনো ইঙ্গিত আমরা এখনও পর্যন্ত পাইনি। তবে রংপুরের মানুষ আর ছাড় দিতে চায় না। সবাই নৌকা মার্কা চায়। তারা দীর্ঘদিন পর নৌকা পেয়েছে, সকলেই মুখিয়ে আছে নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য।’ 

মহানগর জাপার সভাপতি রসিক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘এই নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। সাদ এরশাদের পক্ষে জাপা নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে কি না, এটা আমি বলতে পারবো না।’

রংপুর মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির বলেন, ‘জি এম কাদের যদি নিজের অবস্থান শক্ত করতে না পারেন, দল শক্তিশালী করা তার পক্ষে কঠিন হবে। আমাকে মনোনয়ন বোর্ড সিলেক্ট করে পরে আবার সাদকে মনোনয়ন দেয়া হলো। রংপুরের তৃণমূল নেতাকর্মীরা আমাকে সমর্থন করেছেন। মনোনয়ন পরিবর্তন করে শুধু আমাকেই নয়, রংপুরবাসীকেও অপমান করা হয়েছে।’

এদিকে ৫ অক্টোবরের উপ-নির্বাচনের ৭ প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম রাজু, জাতীয় পার্টির রাহগির আল মাহি সাদ, বিএনপির রিটা রহমান, স্বতন্ত্র আসিফ শাহরিয়ার, এনপিপি শফিউল আলম, গণফ্রন্টের কাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মন্ডল।


রাইজিংবিডি/রংপুর/১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯/নজরুল মৃধা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়