ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সংকটের ‘জটিলতা কমিয়ে আনার’ আশাবাদ চীনা রাষ্ট্রদূতের

কক্সবাজার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোহিঙ্গা সংকটের ‘জটিলতা কমিয়ে আনার’ আশাবাদ চীনা রাষ্ট্রদূতের

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে দ্রুত ‘জটিলতা কমিয়ে আনার’ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

সোমবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন।

লি জিমিং বলেন, ‘‘আমি নতুন এসেছি; এখনো তেমন কিছু জানি না। বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ইউএনএইচসিআর, এমনকি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করছি। আশা করছি,  দ্রুত নানা জটিলতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।’’

এর আগে দুপুরে টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সিআইসি কার্যালয়ে ২০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এ সময় বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন সহকারী কমিশনারসহ চীনের প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলকে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দেখতে পাঠাতে চায় চীন। কক্সবাজারের টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিদর্শনে আসা চীনের প্রতিনিধি দল সোমবার এই প্রস্তাব দেন।

সেখানে মিয়ানমারে ফিরে যেতে সমস্যার বিষয়ে প্রশ্ন করলে রোহিঙ্গারা বলেন, ‘‘মিয়ানমারে এখনো রোহিঙ্গাদের জন্য শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সেদেশে বিবাদমান গ্রুপের মধ্যে সংঘাত লেগে আছে। এখনো যেসব রোহিঙ্গা সেদেশে রয়েছে, তাদের উপর নির্যাতন চলছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা কীভাবে মিয়ানমার যাব?’’

কী করলে মিয়ানমারে যাবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে এই শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা গুরা মিয়া ও মোহাম্মদ জসীম বলেন, ‘‘আমাদের তিনটি দাবি পূরণ করলে আমরা নিজ দেশে চলে যাবো। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, কেড়ে নেয়া জমি ফেরত ও নিরাপত্তার নিশ্চিয়তা।’’

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় মিয়ানমারের পরিস্থিতি দেখতে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি দল সেদেশে পাঠালে যাবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গারা যাওয়ার সম্মতি দেন।

তখন রোহিঙ্গা নেতা গুরা মিয়া রোহিঙ্গাদের জন্য দুটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। একটি হলো, রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলে জনপ্রতি দুটি মোবাইল সেট দেয়া; যার একটি নিজে সেদেশে যাওয়ার সময় সঙ্গে নিয়ে যাবেন, অন্যটি এখানে পরিবারে কাছে রাখবেন। যদি মিয়ানমারের পরিস্থিতি ভালো হয়, মোবাইলে জানিয়ে পরিবারকে সেদেশে নিয়ে যাবেন।

আরেকটি হলো, একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে গিয়ে অবস্থা দেখে ফিরে আসবেন। যদি সেখানকার অবস্থা ভালো হয় পরিবার নিয়ে তিনি দেশে ফেরত যাবেন।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে চীনের রাষ্ট্রদূত টেকনাফের কেরনতলী ট্রানজিট ঘাট পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে প্রত্যাবাসন নিয়ে লি জিমিং জানতে চাইলে জবাবে ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত) শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের ইনচার্জ (সিআইসি) আব্দুল হান্নান, জাদিমুরা ও শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালিদ হোসেনসহ অন্য কর্মকর্তারা।

এর আগে রোববার চীনের এই প্রতিনিধি দল নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু শূন্য রেখায় আটকাপড়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সীমান্ত ঘুরে দেখেন।

২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা কেন্দ্র করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নিধন শুরু করে।

প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭ জন। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি।


রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯/সুজাউদ্দিন রুবেল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়