বৃক্ষপ্রেমিক শওকত মাস্টার!
সিদ্দিক আলম দয়াল || রাইজিংবিডি.কম
সিদ্দিক আলম দয়াল : গাইবান্ধার গোবিন্ধগঞ্জের নাকাইহাট এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ডা. শওকত আলী। তিনি নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন বিলুপ্ত ও দুর্লভ প্রজাতির প্রায় এক হাজার ওষুধি ও ফলজ গাছের বাগান। বাগান থেকে উৎপাদিত ওষুধ ও ফল বিতরণ করছেন সাধারণ মানুষের মাঝে। সেই সাথে দুর্লভ গাছের প্রজাতি ধরে রাখতে এসব গাছের চারা উৎপাদন করে মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিচ্ছেন বিনামূল্যে।
ডা. শওকত আলী পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। বয়স ৯০ এর কাছাকাছি হলেও মানব সেবার কাছে এই বয়স তাকে পরাজিত করতে পারেনি। মানুষ ও গাছের প্রতি ভালবাসা তার শৈশব থেকেই। তিন ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীর সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক। সারাদিন চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বসতবাড়ি শীতলগ্রামের আশপাশে ও পুকুর পাড়ে গড়ে তুলেছেন বিলুপ্ত প্রায় ও দুর্লভ প্রজাতির ওষুধি ও ফলজ গাছ। গ্রামের অন্যন্য এলাকায় এসব গাছের চারা ছড়িয়ে দিতে বিনামূল্যে বিতরণ করে যাচ্ছেন তিনি। সেই সাথে নতুন প্রজম্মের শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে পরিচিত করে দেন এসব গাছের সাথে। জানিয়ে দেন বিভিন্ন গাছের গুণাগুণ। গাছের প্রতি এমন মমতা বোধের কারণে এলাকার মানুষ তাকে খুব ভালবাসেন। তার সংগৃহীত এসব গাছের গুণাগুণ সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তিনি এখন স্থানীয় গ্রামবাসী ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে পরিবেশ বান্ধব বৃক্ষপ্রেমিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
তার এই কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন পরিবারের সবাই। ছেলে সোহাগ গর্ব করে বলেন, আমার বাবার মতো অনেক বাবার জন্ম হওয়া দরকার। তাহলে আমরা ওষুধি গাছের গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পারবো।
এলাকাবাসী রুবেল চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা তো শুধু ধান ও অন্যান্য ফসল চাষ করে নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখি। নিজের স্বার্থের জন্য জমিতে নানান ফসলের চাষ করে সারা বছরের খাবার যোগাড় করে রাখি। কিন্তু শওকত মাস্টার তা করেন না। তিনি ব্যতিক্রমী মানুষ। তিনি তার জমিতে শুধু তিনি ধান গমের আবাদ করেন না। মানুষের মঙ্গলেরর জন্য নিজের অনেক জমিতে লাগিয়েছেন বিরল প্রজাতির ওষুধি গাছ। মানুষ দেখতে আসেন তার গাছের বাগান। মানুষ গাছ দেখতে এলে তিনিও খুশি হন। নিজের গাছ দেখিয়ে বলেন আমরা বেঁচে আছি এই গাছের গুণেই।
এলাকার সাহেব উদ্দিন মাস্টার বলেন, শওকত মাস্টার মানুষের কল্যাণে গাছের চারা বিতরণ করেন। এজন্য তিনি কোনো পয়সা নেন না। গাছের যত্নের কথা ও তার গুণাগুণ মানুষকে বুঝিয়ে বলেন।
গাছ নিয়ে গবেষণায় অন্যন্য অবদান রাখায় অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু এ্যাওয়ার্ড। এছাড়াও জেলা ও উপজেলায় পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তবে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেলেও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই ডা. শওকত আলী এমন কাজ করে যাচ্ছেন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও গাছ দ্বারা প্রাকৃতিক ওষুধ দিয়ে রোগ নিরাময় বাড়াতেই তার এ প্রচেষ্টা বলে জানান তিনি।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম ফেরদৌস ডা. শওকত আলীর এমন কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে সবাইকে তার মতো গাছ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান জানান। সেই সাথে শওকত আলীর গাছের সংগ্রহ বাড়াতে বিরল গাছের চারা উৎপাদন ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
গাইবান্ধা/সিদ্দিক আলম দয়াল/বুলাকী
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন