ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘ভরজাল’ এর ফাঁদে বিপন্ন দেশি মাছ

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৭ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ভরজাল’ এর ফাঁদে বিপন্ন দেশি মাছ

এক সময় সিলেট বিভাগের হাওরগুলোতে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছ পাওয়া যেত । দেশের চাহিদার একটি বৃহৎ অংশের মাছ এখানকার হাওর থেকে আহরণ করা হতো।

এসব হাওরে এক যুগ আগেও প্রায় ১০৭ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতে। কিন্তু গত কয়েক বছরে বেশ কিছু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে। বিলুপ্তির পথে রয়েছে অন্তত ৪৬ প্রজাতির মাছ। এর অন্যতম কারণ নির্বিচারে মাছ শিকার। যেখানে ভরজাল, ক্যারেন্ট জালসহ নানা নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করা হচ্ছে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখো গেছে, নদীর এক তীর থেকে অপর তীর পর্যন্ত ফেলে রাখা হয় জাল। পানির ওপর থেকে নদীর তলদেশ পর্যন্ত জালে ঘেরা থাকায় আটকা পড়ে মাছসহ জলজ প্রাণী। ক্ষুদ্র ফাঁসের জাল হওয়াতে পোনা থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব প্রজাতির মাছই ধরা পড়ে জালে। স্থানীয়ভাবে এ জালের নাম ‘ভরজাল’।

এ জাল ব্যবহার করেই সিলেটের বালাগঞ্জের বিভিন্ন নদী থেকে নির্বিচারে শিকার করা হচ্ছে মাছ ও জলজ প্রাণী। শুধু ভরজালই নয়, মাছ শিকারে অসাধু জেলেরা ব্যবহার করছেন নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, বস্তাজাল আর টানাজালও। সংশ্লিষ্টদের তদারকি না থাকায় অবাধে এসব জালের ব্যবহার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এক জরিপে দেখা গেছে সিলেটের হাওরগুলোর ১০৭ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৪৬ প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে মহাবিপন্ন প্রজাতি মাছের মধ্যে রয়েছে- টাটকিনি, ঘারুয়া, বাঘাইড়, রিটা, রাণী, পাঙ্গাস, বামোশ, নাফতানি, চিতল, একথুটি ও চাকা।

সঙ্কটাপন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে- বাচা, ছেপচেলা, ঢেলা, বাঁশপাতা, কুঁচে, নাপতে কই, বাতাসিয়া টেংরা, ফলি ও গুজিআইড়।

এবং বিপন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে- গুলশা, গনিয়া, দাড়কিনা, আইড়, পাবদা, বড়বাইম, গজার, তারাবাইম, তিতপুঁটি, নামা চান্দা ও কালিবাউশ।

যদিও উপজেলা প্রশাসন বলছে, অবৈধ জাল উদ্ধার ও দেশীয় মাছ রক্ষার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার উপজেলার বড়ভাঙ্গা নদীতে অভিযান চালিয়ে দুই লাখ টাকা মূল্যের নিষিদ্ধ জালও জব্দ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলার বেতরী নদী, টলাখালি, রত্মানদীসহ সবকটি খাল ও নদীর একাধিক স্থানে ভরজাল পেতে অবাধে দেশীয় মাছ ধরছেন অসাধু জেলেরা। নিষিদ্ধ জালে প্রতিদিনই রুই, কাতলা, শিং, কই, পুঁটি, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় মাছ ধরা পড়ছে। এর সঙ্গে মাছের পোনাও জালে আটকা পড়ে। এছাড়া কাকড়াসহ বিভিন্ন প্রকারের জলজ প্রাণীও মারা পড়ছে।

তারা বলছেন, অবাধে মৎস শিকারের কারণে এখন আগের মতো দেশীয় মাছের দেখা মিলে না। এক সময়ের মাছের এলাকা হিসেবে পরিচিতি বালাগঞ্জ, বাংলাবাজার, আজিজপুর, মোরারবাজারসহ অন্যান্য বাজারগুলোতেও এখন দেশি মাছ পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ সময়ই চাষের মাছ কিনতে হয় ক্রেতাদের।

এ বিষয়ে উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য স্বপন কান্তি দাস সপু রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বেতরী নদী বালাগঞ্জের অন্যতম দীর্ঘ নদী। পাশাপাশি টলাখালি, রত্মা নদী প্রভৃতি খাল ও নদী পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রবাহিত হয়েছে। এসব খাল ও নদীর স্থানে স্থানে অসংখ্য জাল পেতে রাখা হয়েছে। এসব জালে ছোট-বড় সকল আকারের মাছ আটকা পড়ে। ফলে হারাচ্ছে দেশীয় মাছ।’

বালাগঞ্জ উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) নির্মল চন্দ্র বণিক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ভরজাল, বস্তাজাল, টানাজাল, কারেণ্টজালসহ সবধরনের ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার একেবারেই নিষিদ্ধ। এরপরেও এসব জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার ও পোনা ধ্বংস বন্ধে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুস সাকিব রাইজিংবিডিকে  বলেন, ‘নদী ও খাল থেকে অবৈধ জাল উদ্ধার ও দেশীয় মাছ রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযানও চলছে।’


সিলেট/আব্দুল্লাহ আল নোমান/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়