ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে বিপদে ধলেশ্বরী-বংশাই

আরিফুল ইসলাম সাব্বির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১৮ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে বিপদে ধলেশ্বরী-বংশাই

রাজধানীর হাজারিবাগের ট্যানারির কারণে দূষণের কবলে পড়া বুড়িগঙ্গা নদীকে বাঁচাতে ট্যানারি শিল্পের কারখানাগুলোকে স্থানান্তর করা হয়েছে সাভারে। তবে এখানে পুরোপুরিভাবে আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) চালু না হওয়ায় এবার দূষিত হচ্ছে ধলেশ্বরী ও বংশাই নদী। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন ও স্থানীয়রা।

জানা যায়, সাভার-ধামরাই অঞ্চল দিয়ে তুরাগ, বংশাই ও বুড়িগঙ্গার কিছু অংশ বহমান। এ ছাড়াও এ অঞ্চলে রয়েছে প্রচুর ছোটবড় খাল। উপশহর হিসেবে গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অপরিকল্পিতভাবে এখানে গড়ে উঠেছে কল কারখানা। এসব কারখানার অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্যে এরইমধ্যে মৎস্য সম্পদ বিলুপ্তির পথে। আর সেখানে চামড়া প্রক্রিয়াজাত কারখানা ধলেশ্বরী-বংশাই নদীকে আরো বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে।

চামড়া শিল্প নগরীতে ডাম্পিং ইয়ার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত জমি পর্যপ্ত কি না জানতে চাইলে সাভার চামড়া শিল্প নগরীর (বিসিক) প্রকল্প পরিচালক জিতেন্দ্র নাথ পাল বলেন, ‘ডাম্পিং ইয়ার্ডগুলো অস্থায়ী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ১৫৫টি ট্যানারির উৎপাদিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এ জমি সীমিত। স্থায়ী ডাম্পিং ইয়ার্ড করা হলে আর কোনো সমস্যা হবে না।’

চামড়া শিল্প নগরী ঘুরে দেখা যায়, বিসিকের ১৫৫টি ট্যানারির বিপরীতে ডাম্পিং ইয়ার্ডের জায়গার পরিধি খুবই কম। সেখানে ফেলা হয়েছে ট্যানারির উৎপাদিত কঠিন বর্জ্য -পশুর কান, লেজ, শিং, হাড়, লোম, চামড়ার কাটপিস, মাংশের ঝিল্লি ইত্যাদি। ডাম্পিং ইয়ার্ডে ১১৩টি কারখানার বর্জ্য বৃদ্ধি পেতে পেতে বর্তমানে বিশাল ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব বর্জ‌্যের শেষ ঠিকানা হচ্ছে ধলেশ্বরী। এ বর্জ্য নদীর পানি দূষণের পাশাপাশি ব্যাপক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যা বিসিকের জন্য দুশ্চিন্তার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিল্প এলাকার শ্রমিকরা বলছেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে গেলে, তরল বর্জ‌্যের পাশাপাশি কঠিন বর্জ্যও তৈরি হয়- যেমন পশুর কান, লেজ, শিং, হাড়, লোম, চামড়ার কাটপিস, মাংশের ঝিল্লি ইত্যাদি। এগুলো কারখানার একই পাইপলাইনে ফেলে দেয়া হয়। আর কিছুটা ফেলে দেয়া হয় ডাম্পিং ইয়ার্ডে।

এদিকে, হেমায়েতপুর হরিণধরা এলাকায় বিসিকের চামড়া শিল্প নগরী প্রকল্পটিতে মোট জমির পরিমাণ ১৯৪ দশমিক ৪০ একর। এর মধ্যে সিইটিপির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৭ একর। আর কঠিন বর্জ্য ডাম্পিং ইয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ছয় একর জমি।

গেল বছর সিইটিপি ছাড়া শিল্পাঞ্চলে কাজ শুরু করা অভিশাপের মতো হবে বলে জানিয়েছিল পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। এ বছর শিল্পাঞ্চলে কাজ শুরু হওয়ার পর সেই কথাই যেনো ফলে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ট্যানারির বিষাক্ত ময়লা পানি সরাসরি নদীতে পড়ে। ইতোমধ‌্যে নদী মাছ শূন‌্য হয়ে পড়েছে। মারা গেছে অন‌্যান‌্য জলজ প্রাণি। এই পানির ছিটা গায়ে লাগলে চুলকানি শুরু হয়। ট‌্যানারি কারখানা এসে আমাদের নদী ধ্বংস হয়ে গেছে। অবিলম্বে ট্যানারির বর্জ্যের শোধন না হলে নদী ও নদীবাহিত সকল জীব হুমকিতে পড়বে।’

স্থানীয় পরিবেশবাদী আন্দোলনের নেতারা বলেন, ‘বিষাক্ত শিল্পবর্জ্য যেকোনো প্রাণির জন্যেই হুমকিস্বরুপ। এটি মানব শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য যেমন হুমকির তেমনি জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণিদের জন্যেও। ফলে পূর্ণাঙ্গ পরিশোধনাগার ছাড়া এই শিল্পাঞ্চল চালু এরইমধ্যে তার রূপ দেখানো শুরু করেছে। আশেপাশের নদীগুলো এরইমধ্যে চরম মাত্রায় দূষিত হয়ে পড়েছে।’

স্থানীয় আইনজীবী পুলক আশরাফ বলেন, ‘বিষাক্ত বর্জ্য অব্যাহতভাবে নদীতে পড়লে তা আশেপাশের কৃষি জমির উপরও প্রভাব ফেলবে। জমিগুলো উৎপাদনের অনুপযোগী হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এই অঞ্চলে নদী দূষণ এখনই বন্ধ করতে হবে। কারখানাগুলোকে অবশ্যই যথাযথ পরিশোধনাগার ব্যবস্থা করতে হবে। তা নাহলে বুড়িগঙ্গা বাঁচানোর জন্যে এবার প্রাণ যাবে ধলেশ্বরী ও বংশী নদীর।’


সাভার, ঢাকা/সাব্বির/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়