ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ছেউরিয়ায় সাঁইজির বারামখানায় ভক্তের ঢল

ইমানুল সোহান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ১৮ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছেউরিয়ায় সাঁইজির বারামখানায় ভক্তের ঢল

শরীরে সাদা পোশাক, মাথায় লাল কাপড়, গলায় বিভিন্ন রঙের মালা। আসরে নেই ঢোল-তবলা কিংবা আধুনিক কোনো বাদ্যযন্ত্র, আছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র— একতারা আর ডুগডুগি। সুরে সুরে ভক্তরা গাইছে লালন সাঁইজির গান।

লালনের ১২৯তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে ছেউরিয়ায় শুরু হয়েছে লালন মেলা। গানে গানে মেতে উঠেছে কুষ্টিয়ার লালনের আখড়া। ছোট ছোট গানের আসরের মাঝে আধ্যাত্মিক ফকির লালন শাহকে স্মরণ করছে ভক্তরা। যেন গানের মাঝে তারা খুঁজছে সাঁইজিকে।

সারা বছরই লালন ভক্তরা তার স্মরণে আখড়ায় ভিড় জমায়। তবে প্রতিবছর ১৬ অক্টোবর কুষ্টিয়ায় শুরু হয় লালন উৎসব। চলে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত। বছরের এই তিন দিনের জন্য অপেক্ষায় থাকেন লালন ভক্তরা। উৎসবকে কেন্দ্র করে বসে মেলা। সকাল-সন্ধ্যা কিংবা মধ্যরাতেও থাকে দর্শনার্থীদের সরব পদচারণা। এছাড়া দূরদূরান্ত থেকে বাউলেরা আসেন। দলবেঁধে গান করেন, আড্ডা জমান এবং লালনের দর্শনতত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন। সব দিক যেন হয়ে ওঠে লালনময়। সাধুরা গেয়ে ওঠেন ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি ওহে দয়াময়, পাড়ে লয়ে যাও আমায়।’

ফকির আফজাল শাহ পাবনা থেকে এসেছেন সাঁইজির আখড়ায়। তিনি বলেন, সাইজির দর্শন পেতে এখানে আসা। এখানে এলে মনে-প্রাণে তৃপ্তি পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাঁইজির ভক্তদের গান শুনে মনে প্রশান্তি অনুভব করি। দর্শনার্থীরা আখড়ায় লালনের বিভিন্ন স্মৃতিকর্ম দেখতে আসেন। বিশেষ করে সাদা দোয়ালে কারুকার্য সম্পূর্ণ মাজারটি দর্শণার্থীদের মন কাড়ে। এছাড়াও গ্রামীণমেলায় কাঠের তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র পাওয়া যায়। বিশেষ করে বিক্রি হয় একতারা, দোতারা আর ডুগডুগি।

আধ্যাত্মিক সাধক লালন শাহর জন্ম, জাতি ও ধর্ম বিষয়ে সুষ্পষ্ট প্রামাণ্য দলিল পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয় ১৭৭৪ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ভাড়ারা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহন করেন। আর ১৮৯০ সালে কুমারখালীর ছেঁউড়িয়াতে মৃত্যুবরণ করেন। আখড়াতেই সমাধিস্থ হন তিনি। ১৯৬৩ সালে তার বর্তমান মাজারটি নির্মাণ করা হয়। পরে ২০০৪ সালে সেখানেই আধুনিক মানের অডিটোরিয়ামসহ লালন একাডেমি ভবন নির্মাণ করা হয়। বাউল দর্শন এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও কৌতূহল সৃষ্টি করছে। লালন ফকির জাত ধর্ম তোয়াক্কা না করে সব মানুষের হৃদয়ের কথা বলতেন। এজন্যই হয়তো জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই ভিড় জমান লালন আখড়াতে।

 

ঢাকা/মারুফ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়