ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ত্রিশ বছরেও পরিচয় মেলেনি তার..

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২১ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ত্রিশ বছরেও পরিচয় মেলেনি তার..

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা সদরে তিনি অতি পরিচিত মুখ। কিন্তু তিনি কোথা থেকে এসেছেন, বাড়ি কোথায়, তা সবারই অজানা।

প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ঘাটাইলের কলেজ মোড় থেকে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দিন রাত ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় এই নারীকে। রাতে ঘুমান নির্মাণ সংগঠনের বারান্দায়।

এই ত্রিশ বছরে তার যেন কোন পরিবর্তন নেই। আগে তার শারীরিক অবস্থা যেমন ছিল, এখনো দেখতে ঠিক তেমনি। লোকমুখে তার নাম পরিচিতি পেয়েছে ‘ববিতা পাগুল্লি’। দিন মজুর, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী এমনকি রাজনৈতিক ব্যক্তি সবাই ববিতাকে আদর করে নাম ধরে ডাকে।

দাঁত নেই, তবুও মুচকি হাসিতে ববিতাকে মন্দ লাগে না। কিন্তু কি যেন মনে করে ক্ষণে ক্ষণে কাঁদে আবার পরক্ষণেই হাসে। তার এ হাসি-কান্না বড়ই রহস্যময়। চলচ্চিত্রের ববিতার মতো দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা না থাকলেও এই ববিতার জনপ্রিয়তা রয়েছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে। বাবা মা’র দেওয়া নাম কি! এই ববিতা নামই বা কে দিয়েছে, তার সঠিক তথ্য কেউ জানে না।

কখনো ডাকে সাড়া দেয়, আবার কখনো দেয় না। সবার দেওয়া খাবারও সে খায়না। আবার যাকে ভালো লাগবে তার কাছ থেকে এটা ওটা চেয়ে খায়। খাবার হোটেলগুলোতে তার জন্য সব সময় দরজা খোলা থাকে। কখনো খাবার খেতে গেলে কি যে আদর আপ্যায়ন তা না দেখলে বোঝা যায় না। কারো সাথে কথা তেমন একটা বলেন না। আর যাও দু’ একটা বলেন তাও অবোধ্য।

সড়কের দু’ধারের দোকানিরা ববিতাকে অনেক ভালোবাসে। দোকানে গেলে অনেক মালিক তার চেয়ার পর্যন্ত ছেড়ে দেন বসার জন্য। যতক্ষণ মন চায় দোকানে বসে থাকেন। এর ভিতরে চলে আপ্যায়ন। চা এবং পান এ দুটোই সে বেশি ভালেবাসে। সবাই বলে ববিতা যেদিন দোকানে আসেন তাদের বিক্রি নাকি বেড়ে যায়।

তাকে সব সময় দেখেন এবং জানেন- এমন একজন স্থানীয় মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ‘ত্রিশ বছর ধরে সে এই এলাকায় আছে। কোনো দিন তাকে গোসল করতে দেখিনি। অথচ তার কাছে গিয়ে বসলে শরীর থেকে কোনো গন্ধ আসেনা। সে কোনো দিন অসুস্থও হয় না। ত্রিশ বছর আগে তার শারীরিক অবস্থা যেমন ছিল এখনো ঠিক তেমনি আছে।’

কলেজ মোড় এলাকার জেমি ফার্মেসির মালিক জামাল হোসেন বলেন, ‘তার ভিতরে মনে হয় অলৌকিক কিছু আছে। আমার দোকানের কর্মচারী একদিন চুরি করেছিল যা আমি নিজেও জানতাম না। কোথা থেকে যেন ববিতা এসে সেই কর্মচারীকে জুতা দিয়ে পিটানো শুরু করলো। পরে চুরির বিষয়টি জানতে পারি।’

ঘাটাইল উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ত্রিশ বছর ধরে আমি তাকে এ এলাকায় দেখে আসতেছি। তার ভিতরে অলৌকিক কিছু থাকতে পারে। দোকানদাররা আত্মবিশ্বাস নিয়ে তাকে দোকানে বসায় এবং সেবাযত্ন করে। আবার সবার দেওয়া খাবার সে খায় না যাকে ভালো লাগে তার কাছ থেকে চেয়ে খায়।’



টাঙ্গাইল/শাহরিয়ার সিফাত/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়