ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

৩ লাখ টাকায় ব্যবসা শুরু করা রোমান ৪ বার সেরা করদাতা

উপজেলা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৩ লাখ টাকায় ব্যবসা শুরু করা রোমান ৪ বার সেরা করদাতা

সদ্য লেখাপড়া শেষ করা ছেলে ব্যবসা শুরু করতে চায়ছিলেন। নিজের সঞ্চয় থেকে ছেলেকে ৩ লাখ টাকা দিয়েছিলেন মা। সেই ছেলে এখন ঢাকা জেলার সেরা করদাতা। শুধু তাই নয়, গত চার বছর ধরে সর্বোচ্চ কর পরিশোধের খেতাব তার।

সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের তরুণ ব্যবসায়ী হিসেবে এবারও সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন তানভীর আহমেদ রোমান ভূইয়া। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার রেডিসন হোটেলে তাকে জেলার সেরা করদাতার সম্মননা স্মারক তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামাল।

রোমান ভূইয়া ২০০৭ সালে একটি টেলিকম কোম্পানির এক্সক্লুসিভ আউটলেট দিয়ে প্রবেশ করেন ব্যবসায়। অনিশ্চিত ছিল ব্যবসার ভবিষ্যৎ। নিজেই সেবা দিতেন গ্রাহকদের। দিন-রাত পরিশ্রম করতেন স্বপ্ন পূরণে।

শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় মোবাইল ফোনের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের প্রথম আউটলেট চালু করেন রোমান ভূইয়া। ব্যবসা চালু করতে মাত্র ৩ লাখ টাকা দিয়েছিলেন মা তমিছুন নেছা। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে তার ব্যবসা। মোবাইল নেটওয়ার্ক যত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, ততো বাড়তে থাকে তার ব্যবসার পরিধি।

ছেলের কঠোর পরিশ্রম আর ব্যবসার সফলতা দেখে এক বছর পর আরো ১০ লাখ পুঁজি দেন বাবা আলহাজ্ব ছফিল উদ্দিন ভূইয়া। এই পুঁজি দিয়ে ২০০৮ সালে জামগড়া এলাকায় গ্রামীণ ফোনের নতুন আউটলেট চালু করেন রোমান ভূইয়া।

এরপর দিন যতই গড়িয়েছে, ব্যবসা বেড়েছে। প্রথম বছরে গ্রামীণ ফোনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেবা প্রদানকারী আউটলেট হয় রোমানের আউটলেট। এরপর এই অঞ্চলের গ্রামীণ ফোনের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পেয়ে যান রোমান ভূইয়া। 

ব্যবসায় মুনাফা বাড়তে থাকলে অন্যান্য খাতেও বিনিয়োগ বাড়ান রোমান ভূইয়া। বর্তমানে তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান- বন্ধন ডিস্ট্রিবিউশন এন্ড সাপ্লাইয়ার্স (ডিস্ট্রিবিউটর অব গ্রামীণফোন), প্রোভাত হাউজিং লিমিটেড, গ্লোরী ডিস্ট্রিবিউশন কর্পোরেশন (ডিস্ট্রিবিউটর অব বিকাশ), নায়ফা ট্রেড বিডি, শার্প স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক এবং নান ব্রিকসে কাজ করছে পাঁচ শতাধিক কর্মী।

ব্যবসা এই পর্যায়ে নিয়ে আসার পথে নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে রোমান ভূইয়া বলেন, ‘‘আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বাপ-দাদার অনেক সম্পদ ছিল। তবুও এতটা সহজ ছিল না আমার নিজের পথ। হাল ছাড়িনি। প্রথম দিকে কর্মী ছাড়াই ব্যবসা সামাল দিয়েছি। সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা অবধি কাজ করেছি। দুপুরের দিকে আউটলেট বন্ধ করে কখনো ঘুমাইনি। এই সময়ের মধ্যে গ্রামীণ ফোনের কিংবা বাংলালিংয়ের প্রধান কার্যালয়ে ছুটে গেছি; ঢাকার যানজটে ঘেমে ভোগান্তি সহ্য করেছি; পরের দিন আবার আউটলেট খুলে সেবা দিয়েছি।’’

তিনি বলেন, “ব্যবসা বড় হতে থাকলে নিজেকে সামাজিক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করি। নিজের এলাকায় মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছি। কখনো কর ফাঁকি দেয়ার চিন্তা মাথায় ঢোকাইনি। ব্যবসা শুরুর পরের বছর থেকে আমি আয়কর দাতা হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করি। ব্যবসা যত এগিয়েছে, কর দেয়া ততো বাড়িয়েছি।’’

রোমান ভুইয়া বলেন, ২০১৬ সালে ঢাকা জেলার সেরা করদাতা হিসেবে সম্মননা পান। এরপর ২০১৭, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালেও সেরা করদাতা নির্বাচিত হন। তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, রাষ্ট্রের সঙ্গে বেঈমানি করা উচিত নয়। কখনো সম্পদের হিসাব গোপন রাখা উচিত নয়।"


সাভার/আরিফুল ইসলাম সাব্বির/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়