তাদের গন্তব্য পথেই থেমে গেছে
চট্টগ্রামের পাথরঘাটার বিস্ফোরণে হতাহত স্বজনদের আর্তনাদ
কেউ যাচ্ছিলেন স্কুলে। কেউ যাচ্ছিলেন কর্মস্থলে। সারারাত কাজ করে একজন রঙ মিস্ত্রি ফিরছিলেন নিজ বাসায়, স্ত্রী, সন্তানের কাছে।
কিন্তু তাদের গন্তব্য পথেই থেমে গেছে। একটি বিস্ফোরণে মুহূর্তেই লাশ হতে হয়েছে নারী ও শিশুসহ ৭ জন পথচারীকে। যে বাসা থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা, সেই বাসার কেউ নিহত হননি। দগ্ধ হয়ে ওই বাসার একজন ভর্তি রয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।
ঘটনাস্থলের কাছে পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডের টং দোকানি প্রত্যক্ষদর্শী মনজুর হোসেন রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো সকালে দোকান খুলে বসেছেন তিনি। পান সিগারেট এবং চা বিক্রি করেন এই দোকানি। সকাল ৯টার দিকে তার দোকানের পাশেই বড়ুয়া ভবনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় মনজুর টং দোকান।
মনজুর বলেন, বিস্ফোরণের পর আমি বুঝতে পারি আলমারির নিচে আমার পা চাপা পড়ে আছে। কয়েকজন ছুটে এসে আমাকে চাপাপড়া অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন। উঠেই দেখতে পাই পাশেই দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে আছে রঙ মিস্ত্রি নুরুল ইসলামের লাশ। এই নুরুল ইসলাম কয়েক মুহূর্ত আগেই তার টঙ দোকান থেকে পান কিনে খেয়েছিলেন।
মনজুর আরো জানান, তিনি রক্ষা পেয়ে উঠে দেখতে পান চারদিকে কেবল ধ্বংসস্তুপ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হতাহতরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ অ্যাম্বুলেন্স এসে সবাইকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। নিহতদের সবাই পথচারী।
যে বড়ুয়া ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেই ভবনের বাসিন্দা সন্ধ্যা রাণী দেবীকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
ঘটনাস্থলের কাছাকাছি একটি বাসার বাসিন্দা কমল দে রাইজিংবিডিকে জানান, সকালে নাস্তা সেড়ে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই বিস্ফোরণে বাসার জানালার কাঁচসহ পুরো বাসা কেঁপে উঠে। বাইরে উঁকি দিতেই দেখা যায় বিস্ফোরণে বড়ুয়া ভবন ও তার আশেপাশের এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
এদিকে এই বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৭ জন নিহত হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৯ জন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, বিস্ফোরণে আহত ৯ জনকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে আইসিইউতে ১ জন, ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ৪ জন, নিউরোলজি বিভাগে ১ জন, বার্ন ইউনিট, অর্থপেডিক ও কার্ডিওলজি বিভাগে ১ জন করে ভর্তি করা হয়েছে।
এদের মধ্যে টিসা গোমেজ নামক একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছে।
গ্যাসলাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এছাড়া চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ পৃথক একটি কমিটি গঠন করেছে।
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন