ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘লাগবে শিল-পাটা, বটি ধার’

উপজেলা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৫, ১৮ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 ‘লাগবে শিল-পাটা, বটি ধার’

বাইরে থেকে উচ্চ স্বরে ‘লাগবে শিল-পাটা, বটি ধার’ বুলি শুনলেই এক সময় বাড়ির ভেতর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসতেন গৃহিণীরা।

গ্রাম কিংবা শহরে ঈদ, পূজা ও বিয়েসহ নানা সামাজিক আয়োজনের পূর্বেই বাড়ির শিল-পাটা ও ধাতব বটি ধার করিয়ে নেয়াটা যেন ছিল অত্যাবশ্যকীয় বিষয়।

মসলা বাটার জন্য ব্যবহৃত পাথরের তৈরি শিল কিংবা পাটাটি ক্ষয়ে গেলে আবারও এর উপর বিশেষভাবে তৈরি এক ধরনের ধাতব যন্ত্র দিয়ে তৈরি করা হত নকশা। এসময় রান্নার কাজে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ ধাতুর তৈরি বটিও ধারালো করে নেয়া হত একই যন্ত্র দিয়ে।

তবে কালের বিবর্তনে যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে এই কর্ম। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ব্লেন্ডার মেশিনের আবিষ্কারের পর যেন ম্লান হতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল-পাটার গুরুত্ব। একই সাথে মাংস ও সবজিসহ রন্ধনের জন্য আবশ্যকীয় অন্যান্য জিনিস কাটার জন্য ঐতিহ্যবাহী ধাতব বস্তুর তৈরি ধারালো বটির ব্যবহারও কমেছে কয়েক গুণ। ফলে বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী শিল-পাটা ও বটি ধার এই পেশার সাথে জড়িতরা বিপাকে পড়ে ছুটছেন অন্য কর্মের পিছু।

সাভারে নবীনগরের কুঁরগাও এলাকায় ছোট্ট একটি ঘিঞ্জি পরিবেশের ভাড়া বাসায় দেখা মেলে এই পেশার সাথে জড়িত হবিগঞ্জের সাবাইদুর, মোখলেছ, জাবিদুল, তাহের, আফজাল ও মুজাহিদদের। এদের মধ্যে জাবিদুল প্রায় পাঁচ বছর আগেই গ্রাম থেকে শহরে পাড়ি জমিয়েছিলেন এই পেশায় বেশি রোজগারের আশায়। পরে তিনি অন্যদেরও এখানে নিয়ে আসেন।

মোখলেছ, জাবিদুল ও তাহের জানান, বুদ্ধি হওয়ার পর বাপ-দাদার পুরনো পেশা দেখতে দেখতে তারা এই পেশা শিখেছেন। কিন্তু গ্রামে কাজের চাহিদা থাকলেও কম পারিশ্রমিক দেওয়ায় সারা দিন ভারী যন্ত্রগুলো কাঁধে নিয়ে ঘুরে খুব একটা লাভজনক হত না। দিন শেষে একশ থেকে দেড়শ টাকা আয় হত। পরে তিনি অধিক ভালো পারিশ্রমিকের আশায় এক জনের পরামর্শে সাভারে আসেন।

এখানে গত চার-পাঁচ বছর আগেও ভালো কাজ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষের কাছে তাদের কাজের চাহিদা কমতে শুরু করেছে। আগে সারা দিন ফেরি করে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করতেন। কিন্তু এখন পাঁচশ টাকা আয় করতেই অনেক কষ্ট হয়ে পড়ে। আর অন্য কোনো কাজ না জানায় বর্তমানে পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।

সাবাইদুর জানান, প্রতিদিন ৮-১০ কিলোমিটার তার যন্ত্রটি কাঁধে নিয়ে পেটের তাগিদে হাঁটতে হয় তাকে। ১৫-২০ টাকা দরে বটি আর ৪০-৫০টাকা দরে শিল-পাটা ধার দেয়ার কাজ করতে পারেন তিনি। প্রতিদিন কমপক্ষে ত্রিশটি বটি ধার দেয়ার কাজ হয়ে থাকে। আর মাঝে মধ্যে শিল-পাটাও পাওয়া যায় না। আগে শিল-পাটার কাজ অনেক বেশি হত। কিন্তু এখন ব্লেন্ডার মেশিনের মতো নতুন যন্ত্র বের হওয়ায় আর পুরনো শিল-পাটার দরকার হয় না। তাই তাদেরও আর কেউ ডাকে না। এখন নিজের খরচ বাদ দিয়ে বাড়িতে ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীর জন্য পর্যাপ্ত খরচ পাঠাতে পারছেন না। তাই ভাবছেন হবিগঞ্জে দেওয়ান দিঘির পূর্বপাড় নামক নিজ গ্রামে গিয়ে কৃষি কাজের পাশাপাশি ঋণ নিয়ে অন্য কিছু করবেন।



সাভার/আরিফুল ইসলাম সাব্বির/হাকিম মাহি  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়