ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বয়স্ক ভাতা নিতে সম্মানে লাগে বাহুবলের ‘লোকাল এমপি’র

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২০ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বয়স্ক ভাতা নিতে সম্মানে লাগে বাহুবলের ‘লোকাল এমপি’র

বয়স তার ৯০ চলছে। এই বয়সেও নিজের উপার্জনে ওপর ভর করেই জীবন চলছে তার। শত কষ্টেও বয়স্ক ভাতায় আগ্রহী নন এই অনেক বয়সের মানুষটি।

কারণ, তিনি এটাকে অসম্মান মনে করেন। লোকে তাকে ‘লোকাল এমপি’ বলে সম্বোধন করে। এই ডাকের আড়ালে আসল নামটি যেন চাপা-ই পড়ে গেছে তার। লোকজনের মুখে এই ডাক শুনে তিনি গর্বিত।

হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলা শহরের এই কথিত লোকাল এমপি’র নাম শাহ মোঃ আব্দুর রব। অতিদরিদ্র সীমার নিচে বসবাস হলেও সে অবস্থানেই তিনি তার পরম প্রশান্তি খুঁজে নিয়েছেন।

বাহুবল উপজেলা শহরের এক চায়ের দোকানে দেখা হয় এই লোকাল এমপি’র সাথে। পরে তিনি এ প্রতিবেদককে তার বর্তমান কর্মস্থল ও বাসস্থান উপজেলা শহরের উত্তর দৌলতপুরের দানিশ মিয়ার বাড়িতে নিয়ে যান।

সেখানের একটি ঝুঁপড়ি ঘরে তার বসবাস। এ ঘরের সামনে বসে তিনি দর্জির কাজ করেন। আলাপকালে তিনি জানান, তার জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আকলা এলাকায়। ঢাকার তিতুমীর কলেজে লেখাপড়া করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি হবিগঞ্জের বাহুবলে চলে আসেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করেন। দেশ স্বাধীন হলে তিনি আর বাড়ি ফিরে যাননি। বাহুবলে বসবাস শুরু করেন। সেই থেকে লোকজন তাকে লোকাল এমপি বলে ডাকে। স্থানীয় লোকজনের সাথে তার গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। তাই উপজেলা শহরেই তিনি বিয়ে করেন। বিয়ের পর তার এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, বেশ কয়েক বছর পূর্বে সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যান। তবে ছেলে মাঝে মাঝে এসে তার সাথে দেখা করে যায়।

সেই থেকে তিনি দানিশ মিয়ার বাড়িতে বিনা ভাতায় বসবাস করছেন। জীবিকা নির্বাহে তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন দর্জির কাজ। এ পর্যন্ত তিনি এ পেশায় কাজ করে সৎপথে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

বয়স্ক ভাতা না নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লোকজন আমাকে লোকাল এমপি বলে ডেকে সম্মান দেয়। এখানে আমি বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে পারি না। এতে আমার সম্মান নষ্ট হবে।’

জানালেন, দর্জির কাজ করে যা পাচ্ছেন তাতে ভালই চলে যাচ্ছে তার। তাই তিনি কারো কাছে হাত পাততে রাজি নন।

তিনি জানান, বাহুবলের প্রাক্তন ইউএনও জসীম উদ্দিনসহ হৃদয়বান লোকেরা মিলে তাকে একটি সেলাই মেশিন উপহার দেন। বর্তমানে এ উপহারের মেশিন দিয়ে দর্জির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

ঝুঁপড়ি ঘরে তার বাসস্থান দেখিয়ে বলেন, ‘নিজের হাতে রান্না করে খেয়ে হুজুরের শেখানো দোয়া পড়ে মাটির উপরে ছেঁড়া বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ি। কোন প্রকারের মশা মাছি ও সাপের আক্রমণ নেই। বীবের মতো বাঁচতে চাই। কামনা করছি সুন্দর মৃত্যুর।’

মৃত্যুর পর নিজ গ্রামের মাটিতে শায়িত হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে সাদা মনের এ মানুষটির।

 

হবিগঞ্জ/মামুন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়