ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

জনতার আদালতে বানরের মৃত্যুদণ্ড!

জেলা সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫১, ২১ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জনতার আদালতে বানরের মৃত্যুদণ্ড!

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ৩০ জন মানুষের ওপর হামলার অভিযোগে এক বন‌্য বানরের বিরুদ্ধে মৃত‌্যুদণ্ড দিয়ে নির্মমভাবে ফাঁসি কার্যকর করলো শতাধিক মানুষ।

মঙ্গলবার সকালে ঘুমের ওষুধ মেশানো ভাত খাইয়ে দিনব্যাপী ধাওয়া করে। বিকেলে হতভাগ‌্য বানরকে ধরে ফেলে উত্তেজিত জনতা। একদিকে বন‌্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইন, অন‌্যদিকে বানরের তাণ্ডবের কথা চিন্তা করে আদালতের আদলে প্রাণিটির শাস্তির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে এলাকাবাসী। পরে বেশিরভাগ মানুষের সম্মতিতে বানরটির মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়। এর পরপরই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলহাস উদ্দিন এর আগে এলাকায় গিয়ে ভুক্তভোগী লোকজনকে বানরটিকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেন। যদিও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী যে কোনো বন্যপ্রাণি হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ।

জানা গেছে, পাথারিয়া পাহাড়ের দলছুট একটি বানর ২০-২৫ দিন আগে উপজেলার কাঁঠালতলী এলাকায় প্রবেশ করে। বানরটি কাঁঠালতলী, রুকনপুর, বড়খলা, দক্ষিণ মুছেগুল, উত্তরভাগসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে তাণ্ডব চালাতে থাকে। সুযোগ বুঝে সে নিরীহ পথচারীসহ শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। বানরটির হামলায় আহত হয় শিশু, মহিলাসহ অন্তত ৩০ ব্যক্তি। বানরের আক্রমণে অতিষ্ট লোকজন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিনের স্মরণাপন্ন হন। এরপর তিনি বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলহাস উদ্দিনকে খবর দেন।

রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলহাস উদ্দিন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করেন। তবে বানরটিকে পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি। বরং ভুক্তভোগী লোকজনকে বানরটিকে মেরে ফেলার জন্য নির্দেশ দেন।তখন থেকেই হতভাগা বানরটিকে মেরে ফেলার জন্য ৬-৭ গ্রামের বাসিন্দা মিলে ধাওয়া শুরু করেন।

অবশেষে মঙ্গলবার সকালে ভাতের সাথে অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খেতে দেয়া হয়। এক সময় ক্ষুধার তাড়নায় বানরটি সেই ওষুধ মেশানো ভাত খায়। ভাত খাওয়ার পর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে বানরটি। এরপর ধাওয়া শুরু হয়। উপায়ন্তর না পেয়ে একটি ধানক্ষেতে আশ্রয় নেয় বানরটি। 

উত্তেজিত জনতা বিকেল ৩টার দিকে সেই ক্ষেতের চতুর্দিক ঘেরাও করে। দেখামাত্র লাঠি পেটা শুরু হয়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় বানরটিকে আটক করে জনগণ। পরে কাঁঠালতলী বাজার সংলগ্ন স্থানে কয়েকশ’ মানুষ আদালত বসিয়ে নির্মমভাবে বানরটির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন। খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন বানরের মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় একটি টিলায় মাটিচাপা দেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন জানান, প্রায় ২০-২৫ দিন ধরে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন বানরটির আক্রমণে আতঙ্কিত ছিলেন। বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ বিভাগে খবর দিলে রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলহাস উদ্দিন কয়েকদিন আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, লোকালয় থেকে তাড়ানোর ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি বানরটিকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়ে যান। তার উৎসাহে ভুক্তভোগী লোকজন মঙ্গলবার বিকেলে নির্মমভাবে বানরটিকে হত্যার করে। পরে মৃতদেহ রাস্তায় ফেলে দেয়।

এদিকে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলহাস উদ্দিন জানান, বানরের তাণ্ডবের খবর পেয়ে এর আগে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বানর ধরার বা তাড়ানোর সরকারি কোনো ব‌্যবস্থা না থাকায় তিনি সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারেননি।

 

মৌলভীবাজার/আব্দুর রব/সাইফুল/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ