ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কাঠমিস্ত্রির লাইব্রেরিতে দুই হাজার বই!

অলোক সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২২ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাঠমিস্ত্রির লাইব্রেরিতে দুই হাজার বই!

পেশায় কাঠমিস্ত্রি হলেও বই পড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকায় ঝালকাঠিতে নারায়ন চন্দ্র বসতঘরেই গড়ে তুলেছেন লাইব্রেরি। নাম রেখেছেন নারায়ন মিস্ত্রি গ্রন্থাগার।

শহরের বাঁশপট্টি সড়কে ছোট্ট একটি টিনশেড ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন নারায়ন চন্দ্র মিস্ত্রি। বসতঘরে গড়ে তোলা এই লাইব্রেরিতে বর্তমানে দেশ-বিদেশের লেখকদের প্রায় দুই হাজার বই রয়েছে।

১০ থেকে ১৫ জন পাঠক প্রতিদিন এখানে এসে বই পড়েন। ছুটির দিনে পাঠকের সংখ্যা বেড়ে যায়। দিন দিন পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে। আবার বাইসাইকেল চালিয়ে অনেক পাঠকের বাসায় বই পৌঁছে দেন নারায়ন মিস্ত্রি। কাঠ মিস্ত্রির এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকে।

কথা হয় বইপ্রেমী এই নারায়ন মিস্ত্রির সাথে । তিনি জানান, অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পর অর্থের অভাবে পড়ালেখা বন্ধ করে কাজে যোগদান করেন। বই পড়ার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল তার। সেই আগ্রহ থেকেই লাইব্রেরি করেছেন তিনি। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ঝালকাঠিতে মিস্ত্রির কাজ করছেন নারায়ন। বর্তমানে প্রতিদিন ৬০০ টাকা বেতন পান তিনি। একার উপার্জন করা এই টাকা দিয়েই স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলের সংসার চলে। এর মধ্যে বড় মেয়ে সুস্মিতা মিস্ত্রি বরিশাল বিএম কলেজে হিসাব বিজ্ঞানে এমএ, ছোট মেয়ে তিলক তমা এসএসসি পরিক্ষার্থী এবং ছেলে তুষার মিস্ত্রি ঝালকাঠি সরকারি কলেজে বিএ অধ্যায়নরত। স্ত্রী সন্ধ্য রানী গৃহিণী।

নারায়ন মিস্ত্রি প্রতিদিন সকাল ৭ টায় ঘর থেকে বের হয়ে কাজে যোগদান করেন। বিকেল পর্যন্ত কাজ করেন। এরপর রাতে বাইসাইকেলে করে বিভিন্ন পাঠকের বাসায় বই পৌঁছে দেন।

২০০৩ সালে তিন/চারটি বই দিয়ে লাইব্রেরির যাত্রা শুরু করেন। আস্তে আস্তে নিজের উপার্জনের টাকার অংশ দিয়ে লাইব্রেরির জন্য বই কেনা শুরু করেন। প্রথম দিকে নারায়ন মিস্ত্রির পরিবার তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তবে প্রতিবেশি অনেকে বিভিন্ন সময়ে কটূক্তি করেছেন। তার পরেও থেমে থাকেনি তার পথচলা। ১৬ বছরের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে লাইব্রেরিটি এখন পূর্ণতা পেয়েছে। এখান থেকে বই পড়ে অনেকেই উপকৃত হচ্ছেন। লাইব্রেরি করার মধ্য দিয়ে ঝালকাঠি শহরের নারায়ন মিস্ত্রি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। তবে ছোট ঘরে বেশি পাঠকদের বসতে দিতে কষ্ট হয়।

কাঠমিস্ত্রি নারায়ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিভিন্ন গুণী ব্যক্তিদের কাঠের খোদাই করা ম্যুরাল তৈরি করেছেন। যা দেখে অনেকে তার প্রশংসা করেছেন এবং এই ম্যুরালগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি বিক্রি করছেন।

লাইব্রেরিতে বই পড়তে আসা পাঠক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘নারায়ন মিস্ত্রির লাইব্রেরিতে দুর্লভ অনেক বই আছে। যা পাঠ করলে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যাবে। প্রত্যেকের নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিৎ।’

পাঠক নির্মল বেপারী বলেন, ‘আমি প্রতিদিন এখানে বই পড়তে আসি। এখানে ধর্মীয়, ইতিহাস, সাহিত্য এমনকি বিভিন্ন দালিলিক প্রমাণের বই রয়েছে, যা পাঠ করে জ্ঞান অর্জন করতে পারছি।’

মো. নাইম ইসলাম বলেন, ‘আমি কলেজে লেখাপড়া করি। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি এখানে এসে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছি।’

নারায়ন মিস্ত্রি বলেন, ‘আমার স্বল্প আয়ের অংশ দিয়ে আমি ছোট্ট পরিসরে লাইব্রেরি তৈরি করেছিলাম। এখন এর পরিধি বেড়েছে। নিজের অর্থে পাঠকদের নতুন নতুন বই সংগ্রহ করে দিতে হয়। এর পাশাপাশি তাদের বসার স্থানও দিতে হয়। এটা আমার পক্ষে কষ্টকর। সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে উপকার হবে।’

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, ‘নারায়ন মিস্ত্রি অর্থনৈতিকভাবে তেমন স্বচ্ছল না। তবে, তার উদ্যোগটি চমৎকার। খুব শীঘ্রই আমি তার লাইব্রেরিটি পরিদর্শন করব। যদি দরকার হয় তাহলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’

 

ঝালকাঠি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়