ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন

নরসিংদী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৯, ২ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন

নরসিংদীতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আবুল হাসেম নামে এক মুক্তিযোদ্ধা। ফলে মৃতের পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সোমবার মনোহরদী উপজেলার চরমান্দালিয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।

’৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ মারা গেলে প্রথা অনুযায়ী তাদের প্রতি জানানো হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। কিন্তু মনোহরদী উপজেলার পশ্চিম চরমান্দালিয়া গ্রামের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের দ্বিতীয় দিনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন করতে হয়েছে এ মুক্তিযোদ্ধাকে।

মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যরা জানান, সাবেক ইউপি সদস্য ও পশ্চিম চরমান্দালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম (৭৫) রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পর চরমান্দালিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. শহিদুল্লাহ উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেন।

এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরদিন সকাল ১০টায় জানাজা নামাজের সময় নির্ধারণ করে দেন। সে অনুযায়ী এলাকায় প্রচারণাও চালানো হয়। একঘণ্টা পর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মতিউর রহমান তারা মৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে জানান, সকাল ১১টায় জানাজা পড়ানোর জন্য। কিন্তু নির্ধারিত সময় সকাল ১১টার আগেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে একজন কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত হন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে পুলিশের জন্য লাশ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন মৃতের পরিবার এবং জানাজায় আগত লোকজন। আধাঘণ্টা অপেক্ষার পরও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও মুসল্লিরা ক্ষোভ হয়ে ১১টা ৩৩ মিনিটে নামাযে জানাজা শেষে লাশ দাফন করেন।

জানাজা নামাযের নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পর সেখানে পুলিশ উপস্থিত হলে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা এবং এলাকাবাসী পুলিশের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে নানা মন্তব্য করেন। আর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই শেষ বিদায় নিতে হয়েছে এই মুক্তিযোদ্ধাকে।

মৃত মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেমের ছেলে পুলিশ সদস্য কামরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘বাবার মৃত্যুর পর উপজেলা প্রশাসন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জানানো হলে জানাজা নামাযের জন্য তাদের নির্ধারণ করে দেওয়া সময় মতো আত্মীয়-স্বজন, মুক্তিযোদ্ধা এবং এলাকাবাসী উপস্থিত হন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ৩৩ মিনিট পরেও পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ না আসায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া বাবাকে দাফন করা হয়েছে।’

চরমান্দালিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. শহিদল্লাহ বলেন, ‘আবুল হাসেমের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পরই আমি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। জানাজা নামাযের নির্ধারিত সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা এবং এলাকাবাসী উপস্থিত থাকলেও পুলিশের কোনো লোকজন উপস্থিত না থাকায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই লাশ দাফন করতে হয়েছে।’

মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিয়া আক্তার শিমু বলেন, ‘বিজয়ের মাসে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে শেষ বেলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে না পারা খুবই দুঃখজনক।’

উল্লেখ্য, আবুল হাসেম মনোহরদী উপজেলার তালিকাভুক্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ এবং নিজ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেন।


নরসিংদী/গাজী হানিফ মাহমুদ/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়