সোনারগাঁওয়ে একের পর এক লাশ পড়ার নেপথ্যে
হাসান উল রাকিব || রাইজিংবিডি.কম
বালুমহল ও পোল্ট্রি খাবারের ব্যবসার চাঁদা নিতে নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁওয়ে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা চলছেই দুই স্থানীয় নেতার মধ্যে। আর তাদের অনুসারীদের সংঘর্ষে মারা যাচ্ছে দরিদ্র ঘর থেকে আসা সাধারণ ঘরের সন্তানরা।
উপজেলার আনন্দবাজার এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে দুটি গ্রুপের মুখোমুখি অবস্থানে প্রশাসন তৎপর না হলে এ লাশের সারি আরো দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ অঞ্চলে মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন, নদীতে মাছের ঝোপ, মুরগী পোল্ট্রি খাবার তৈরীর ব্যাবসা থেকে চাঁদাসহ স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য নিয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়াচ্ছে প্রায়ই। এতে করে লাশ হতে হচ্ছে অসহায় সাধারণ মানুষকে।
এমনই এক ঘটনায় গত রোববার রাতে আনন্দবাজার আমিরাবাদ এলাকায়। সেখানে মেঘনা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নবী হোসেন ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী আমীর হোসেন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে জাকির হোসেন নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় আজ সোমবার দুপুরে নিহত জাকির হোসেনের ভাই মনির হোসেন বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নবী হোসেনকে প্রধান আসামী করে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে, আরো অজ্ঞাত ৭/৮ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এর আগে গত বছর ২০১৮ সালে ৯ এপ্রিল একই ভাবে সংঘর্ষে জড়িয়ে নবী হোসেন বাহিনীর লোকজন হামলা চালিয়ে সানাউল্লাহ নামের এক যুবককে খুন করে। পরে নিহতের পরিবার নবী হোসেনকে ৫ নাম্বার ও তার ভাইকে ৬ নাম্বার আমামী করে হত্যা মামলা দায়ের করে। এর তিনদির পর ১২ এপ্রিল যুবলীগের সভাপতি নবী হোসেনের সহযোগীরা তার মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানবন্ধন করে। নবী হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা না হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করার আল্টিমেটামও দেয়া হয়েছিল সেসময়।
সর্বশেষ হত্যাকাণ্ড এবং চাঁদার জন্য একের পর এক সংঘর্ষের বিষয়ে নবী হোসেনের মোবাইল ফোনে কল করে তাকে পাওয়া যায়নি। একই ভাবে তার প্রতিপক্ষ আমির হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকেও পাওয়া যায়নি।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে তারা তৎপর রয়েছেন। তবুও বন্ধ হচ্ছে না সন্ত্রাসী গ্রুপের অবৈধ টাকা আয়ের অপতৎপরতা।
স্থানীয় এলাকাবাসি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সোনারগাঁও উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নবী হোসেন ও নুর মিয়ার ছেলে আমির হোসেনের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে মেঘনা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন করছে ২০-২৫ জনের একটি সিন্ডিকেট। তারা এ অঞ্চলে মেঘনা নদীতে মাছের ঝোপ নিয়ন্ত্রণ, নদী থেকে বালু উত্তোলন ও ওই এলাকার মুরগী পোল্ট্রি খাবার তৈরীর ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করে। অবৈধভাকে টাকা উপার্জনের জন্য দুই গ্রুপই বিভিন্ন সময় মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে এ দুই গ্রুপের সদস্য এলাকার সাধারণ পরিবারের সন্তানকে লাশ হয়ে ফিরতে হয়।
নাম প্রকাশ না করে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ দুই গ্রুপের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটে তাদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা না নিলে আরো অনেককে লাশ হতে হবে। গ্রামবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চত করতে পুলিশকে আরো তৎপর হওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন, বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে জাকির হোসেন হত্যার সাথে জড়িত একজনকে পুলিশ আটক করেছে। পুলিশ তৎপর রয়েছে এলাকার শান্তিশৃংখলা রক্ষা করতে, পুলিশ সব ধরনের ব্যাবস্থা গ্রহণ করবে। কোন সন্ত্রাসী বাহিনীকে পুলিশ প্রশ্রয় দেবে না। এ হত্যা মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারেও পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ/হাসান উল রাকিব/সাজেদ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন