ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হটলাইনে অভিযোগ পেয়ে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে দুদকের অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৭, ২ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হটলাইনে অভিযোগ পেয়ে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে দুদকের অভিযান

হটলাইনে সনদ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি টিম সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত গোপনে ও প্রকাশ্যে অভিযান চালায়। পরে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকায় ছয়জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন বোর্ড সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন।

রাতে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের সনদপত্র উত্তোলন, নাম সংশোধন, ফলাফল সংশোধন, ভর্তি বাতিল, এক কলেজে ভর্তি বাতিল করে নতুন কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পাদনে সরকার নির্ধারিত ফি এর অতিরিক্ত ফি আদায় এবং বিদ্যালয় মঞ্জুরি  নবায়ন, বিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ খোলা, মহাবিদ্যালয়ের এডহক কমিটি, কার্যনির্বাহী কমিটি, একাডেমিক স্বীকৃতি ও মহাবিদ্যালয়ের ছাড়পত্র প্রদান ইত্যাদি কাজে উৎকোচ গ্রহণ, অনিয়ম হচ্ছে উল্লেখ করে একজন ভুক্তভোগী দুদকের হট লাইন ১০৬ এ অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে দুদক এ অভিযান চালায়।

অভিযানের শুরুতে সকালে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করেন দুদক টিমের সদস্যরা। গোপন অভিযানকালে সেবা প্রত্যাশীদের নিকট নাম সংশোধন, সনদপত্র উত্তোলন ও সনদপত্র ইংরেজি ভার্সন রূপান্তরের নামে শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারীরা নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে অতিরিক্ত ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা নিচ্ছেন এবং আবেদন ফরম গ্রহণ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেবা প্রদানের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন বলে প্রমাণ পায় দুদক টিম। কাউন্টারের মাধ্যমে আবেদনপত্র নেয়ার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ আবেদন ফরম বিভিন্ন কর্মচারীর মাধ্যমে সরাসরি নিয়ে বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উৎকোচের বিনিময়ে কাজ করে দিচ্ছেন। উৎকোচের ভাগ তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন শাখার স্টাফদের দিতে দেখেন টিমের সদস্যরা। এ চিত্র প্রায় সব শাখায় দেখা যায়।

এছাড়া সেবা প্রত্যাশীরা এসএমএস-এর মাধ্যমে ডেলিভারি কাউন্টার থেকে সংশ্লিষ্ট সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও সেটি তারা পাচ্ছেন না। প্রার্থীরা বাড়তি টাকা দিয়ে সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করলে সেবা প্রদান করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এসবের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে শিক্ষাবোর্ডের পত্রপ্রাপ্তি শাখার অফিস সহকারী মুরাদ আলী, স্ক্রিপ্ট শাখার দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী রুবেল খান, আসলাম হোসেন ওরফে চৌধুরীকে হাতেনাতে প্রার্থীদের আবেদন ফরম ও উৎকোচসহ আটক করেন দুদক টিম সদস্যরা। এরপর তাদের সংশ্লিষ্ট শাখায় নিয়ে যাওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ইসমাইল হোসেন,  পত্রপ্রাপ্তি শাখার অফিস সহকারী শহিদুল ইসলাম ও সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক  আহসান আলী অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এরপর দুদুক টিমের সদস্যরা এ বিষয়ে বোর্ডের সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে আলাপ করেন।

এ বিষয়ে বোর্ডের সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ওই ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে মঙ্গলবার সকালে বোর্ডে সভা আহবান করা হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্তদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুদক রাজশাহীর উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে অভিযোগের সত্যতা মেলে। এ সময় ছয়জনকে আটক করা হয়। পরে বোর্ড সচিবকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি (সচিব) বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে ওই ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুদক কমিশনে প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।


রাজশাহী/তানজিমুল হক/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়