ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অর্থ সঙ্কটে পূর্ণতা পাচ্ছে না ‘স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ’!

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৬, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অর্থ সঙ্কটে পূর্ণতা পাচ্ছে না ‘স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ’!

স্বাধীনতা যুদ্ধে অকাতরে জীবন উৎসর্গ করা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে খুলনার বধ্যভূমি গল্লামারীতে নির্মিত হয় ‘স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধের’ মূল স্তম্ভ।

কিন্তু অর্থ সংকটে আজও পূর্ণতা পায়নি। সীমানা প্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত স্মৃতিসৌধের পবিত্রতাও নষ্ট হচ্ছে। তবে, বিজয় দিবস উপলক্ষে আপাতত সংস্কার করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের গোড়ার দিকে গল্লামারীতে স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ নির্মাণে এক প্রকল্প গ্রহণ করে খুলনা জেলা পরিষদ।  এই সৌধ নির্মাণে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১১ কোটি টাকা।

প্রকল্পে রয়েছে মূল স্তম্ভ নির্মাণ, স্বাধীনতা সৌধ এ্যাপ্রোচ রাস্তা এবং পার্কিং ইয়ার্ড, সীমানা প্রাচীরসহ ফটক ও গার্ড/ওয়েটিং রুম ও রেস্টুরেন্ট এবং ম্যুরাল দিয়ে গেট নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ ও দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান তৈরি, চত্বরে পানির ফোয়ারা, বৈদ্যুতিকরণ ইত্যাদি। এর মধ্যে মূল স্তম্ভ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ১৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

সূত্র আরও জানায়, প্রকল্প অনুমোদনের পর মূল স্তম্ভ নির্মাণে ২ কোটি বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অর্থ বরাদ্দের পর স্তম্ভ নির্মাণে দুই দফা দরপত্রের আহ্বান করে জেলা পরিষদ। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৩ জুন আহ্বানকৃত দরপত্রের প্রেক্ষিতে কাজ পায় খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আজাদ-ইলোরা জেভি। যার ওয়ার্ক অর্ডার হয় ২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর এবং মূল স্তম্ভ নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে।

এদিকে, ২০১০ সালের ১৮ অক্টোবর মাসে সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও তৎকালীন জেলা প্রশাসকসহ খুলনার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে মেয়র সৌধের মাস্টারপ্লান অনুযায়ী অন্যান্য কাজ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন।

এরপর ২০১১ সালের ১০ মার্চ নির্মিত ওই মূল স্তম্ভ পরিদর্শন করেন স্মৃতিসৌধের স্থপতি আমিনুল ইসলাম ইমন। পরিদর্শন শেষে তিনিও স্মৃতিসৌধটিকে পূর্ণতা দিতে মূল নকশা বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ ও মূল নকশা অনুযায়ী স্মৃতিসৌধের পূর্ণতা দিতে ২০১১ সালের মার্চে স্থানীয় সরকার বিভাগে বাকী ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পেতে পত্র প্রেরণ করে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদ।

তবে স্থানীয় সরকার বিভাগে বাকী অর্থ প্রদান না করে ওই বছরের এপ্রিল মাসে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে অর্থ প্রদানে সুপারিশ ও নির্দেশনা দেয়। কিন্তু আজ অবধি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ওই অর্থ বরাদ্দ করেনি। ফলে সৌধটির পূর্ণতা না পেয়ে বর্তমানে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাস্টার প্লান অনুযায়ী সকল কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ায় বিশেষ করে সীমানা প্রাচীর না থাকায় চত্বরে অবাঞ্ছিত/অনাকাঙ্খিত লোকজনের পদচারণায় সৌধের পবিত্র নষ্ট হচ্ছে। অবাধে বিচরণ করছে গরু-ছাগল।

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মো. আসাদুজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, পূর্ণতা দিতে পারলে এটি হবে দৃষ্টিনন্দন স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ। মানুষ এখানে স্বাচ্ছন্দে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। পাশাপাশি সৃষ্টি হবে মনোমুগ্ধকর বিনোদন ক্ষেত্র। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্মিলনীসহ নানা কর্মসূচি পালন সুযোগ তৈরি হবে।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর ১৯৯৫ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক কাজী রিয়াজুল হক ও পুলিশ সুপার আওলাদ হোসেনের উদ্যোগে গল্লামারীর বধ্যভূমির এ স্থানে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। ১৯৯৫ সালের ২৬ মার্চ স্মৃতিসৌধের পরিকল্পনাকারী কাজী রিয়াজুল হক বিজয় মঞ্চের উদ্বোধন করেন।



খুলনা/নূরুজ্জামান/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়