ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

লাল শাপলার ফাঁকে পাখির জলকেলি

আরিফুল ইসলাম সাব্বির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৯, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লাল শাপলার ফাঁকে পাখির জলকেলি

অগ্রহায়ণ মাস আসতেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে প্রতিবছরের মতো আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখি। শরতের শেষে হিমালয়ের উত্তরের দেশগুলোতে তীব্র শীত থেকে বাঁচতে এ সব পাখি এ দেশে আসে। সেই পাখির কলকাকলিতে মুখর ক্যাম্পাস।

শীতে সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া ও নেপালে তুষারপাত শুরু হয়। সেই তুষার থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে পরিযায়ী পাখির দল। অতিথি এসব পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলো। 

 

 

ক্যাম্পাসের জলাশয়ে গিয়ে দেখা গেছে, পাখির উড়াউড়ির চিত্র। ভোরের শিশির মাড়িয়ে ক্যাম্পাসের বিলে পাখি দেখতে ভিড় করেছেন পাখিপ্রেমিরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় লেকে বিভিন্ন প্রজাতির শত শত অতিথি পাখি বিচরণ করছে; তা মুগ্ধ করেছে পাখিপ্রেমি দর্শকদের।

ক্যাম্পাসের জলাশয়ে সরালী, পিচার্ড, গার্গেনি, মুরগ্যাধি, মানিকজোড়, কলাই, নাকতা, জলপিপি, ফ্লাইপেচার, কোম্বডাক, পাতারি, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি প্রজাতির পাখি আসে। আবার শীতের শেষে পাখিরা চলে যায় আপন ঠিকানায়।

শীতের এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে আসলে মনে হবে যেন প্রাকৃতিক নিদর্শনের স্বর্গভূমিতে প্রবেশ করছেন। ভেতরে ঢুকে একটু হাঁটলে চোখে পড়বে জলাশয়। সেখানে পানির উপরে পুরোটা জুড়ে দেখবেন অসংখ্য লাল শাপলা। হাঁটতে হাঁটতে শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে ডান দিকে গেলে চোখে পড়বে দুইপাশের জলাশয়ে ফুটে থাকা লাল শাপলা। সেসব শাপলার ফাঁকে ঘাপটি মেরে বসে আছে পরিযায়ী পাখি। কখনো সেগুলো খেলা করছে, কখনো উড়ছে, কখনো দিচ্ছে ডুব। কখনো চুপ করে বসে যেন উৎসুক মনে দর্শনার্থীদের দেখে নিচ্ছে।

 

 

মানিকগঞ্জ থেকে পাখি দেখতে এসেছেন বৃষ্টি মজুমদার। তিনি বলেন, সকালে ক্লাস বাদ দিয়ে অতিথি পাখি দেখার জন্য এসেছেন। শীতের সকালে এই পাখি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

পাখি দেখতে এসেছেন শরিফুল ইসলাম রিফাত। তিনি বলেন, তিনি প্রতি বছর পাখির মিলনমেলা দেখতে এখানে আসেন। এখানে আসলে মন ভালো হয়ে যায়। আজ ক্লাস বন্ধ থাকায় পাখির মিলনমেলা দেখতে এসেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় ১০ থেকে ১২টি লেক রয়েছে। এর চারটি লেকে অতিথি পাখি বেশি বসে। এবারও প্রশাসনিক ভবনের সামনের লেক, জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেক, বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের লেক এবং সুইমিংপুল সংলগ্ন সবচেয়ে বড় লেকে পাখিরা জায়গা করে নিয়েছে। এই চারটি লেককে অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

 

 

কর্তৃপক্ষ জানায়, পাখিপ্রেমিদের জন্য এ বছরও আয়োজন করা হয়েছে পাখিমেলা। জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই মেলা বসবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ বলছে, সর্বপ্রথম এখানে অতিথি পাখি আসে ১৯৮৬ সালে। সেই সময় ক্যাম্পাসের জলাশয়ে ৯৮ প্রজাতির পাখি দেখা যেত। তবে এখন সেই সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে ১৯৫ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এর মধ্যে ১২৬টি দেশীয় প্রজাতির এবং ৬৯টি বিদেশি। এদের বেশির ভাগই হাঁস জাতীয় পাখি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পাখি গবেষক মো. কামরুল ইসলাম বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পাখির জন্য অন্যতম ভালো অবাসস্থল। বিশ্ববিদ্যালয়ও এই আবাসস্থল টিকিয়ে রাখতে প্রতি বছর পাখি মেলার আয়োজন করাসহ বিভিন্ন কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বাইরে থেকে যারা অতিথি পাখি দেখতে আসেন, তাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে; যাতে করে অতিথি পাখি রিবক্তবোধ না করে বা লোক থেকে উড়ে না যায়।

 

 

তিনি আশা করেন এ বছর বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি পাখিপ্রেমি ক্যাম্পাসে আসবে। একই সঙ্গে এবারো বিশ্ববিদ্যালয় পাখি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে ক্যাম্পাসের পরিবেশ বিপর্যয়, খাদ্য সংকট, দর্শনার্থীদের অসচেতনা পাখির জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন তিনি।


সাভার/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়