ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

কৃষকের ধানে মই দিলেন কৃষি কর্মকর্তা!

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কৃষকের ধানে মই দিলেন কৃষি কর্মকর্তা!

কারেন্ট পোকার (বাদামী গাছ ফড়িং) আক্রমণে খুলনার রূপসা উপজেলার জাবুসার পশ্চিম পাড়ার বিলের প্রায় দুই হাজার বিঘা জমির রোপা আমন ধান নষ্টের আলামত ধ্বংস চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে উপজেলা কৃষি দপ্তর।

পোকা দমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই ওই জমি লাগোয়া সড়কের পাশ থেকেই বেশির ভাগ ধান গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।

অভিযোগ উঠেছে, ওই বিলে গিয়ে সাংবাদিকসহ অন্যকেউ সহজে পোকা আক্রান্ত ধানের চিত্র দেখতে যেন না পান, তাই এমন কাজের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা। মূলত: উপজেলা কৃষি অফিস নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই কৃষকদের আপত্তি থাকা স্বত্বেও তাদের ধান কেটে ফেলছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।

বাগমারা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিমাদ্রী বিশ্বাস নিজে উপস্থিত থেকে এবং শ্রমিক দিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই ধান কাটার এই উৎসবে মেতে উঠেছেন।

বিষয়টি এ প্রতিবেদকের কাছে স্বীকারও করেছেন রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ফরিদুজ্জামান ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিমাদ্রী বিশ্বাস। তবে, এভাবে কৃষকের জমির ধান তারা কাটতে পারেন না বলে স্বীকার করলেও কৃষকের উপকারের খোড়া যুক্তি তুলে ধরছেন তারা।

এদিকে, আপত্তি সত্বেও ভুল বুঝিয়ে নিজেদের জমির ধান কেটে ফেলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন জাবুসা বিলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তারা কৃষি কর্মকর্তাদের এ ধরণের অপতৎপরতাকে রূখে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বাগমারা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিমাদ্রী বিশ্বাস স্বীকার করে রাইজিংবিডিকে জানান, তিনি নিজ খরচে গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন করে শ্রমিক দিয়ে পোকা আক্রান্ত ধান কেটে ফেলছেন। এছাড়া কৃষকদেরও ধান কাটতে মাঠে নামিয়েছেন। এভাবে গত ৪/৫ দিনে প্রায় ২শ’ একর জমির ধান কেটে ফেলেছেন।

তিনি যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এই ধান না কাটলে কৃষকদের আরো ক্ষতি হবে। এ জন্য দ্রুত ধান কাটতে তারা সহায়তা করছেন।

রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ফরিদুজ্জামান রাইজিংবিডিকে জানান, দ্রুত আক্রান্ত ধান কেটে ওই জমিতে বোরোর বীজতলা তৈরির উপযোগী করা হচ্ছে। এছাড়া ভবিষ্যতের জন্য কৃষকদের এ জমিতে বিআর-২৩ ও মরিশাল উপসী জাতের ধান চাষের পরিবর্তে ব্রি-৮৭, ব্রি-৫১ ও ব্রি-৫২ নতুন জাতের ধান চাষের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে, এভাবে এর আগে কোথাও কৃষি অফিস বা অফিসারের উদ্যোগে কৃষদের ধান তারা কখনও কাটেননি বলেও স্বীকার করেন।

কৃষক ও স্থানীয় নৈহাটি ইউপি’র ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাবর আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদককে জানান, পোকায় জাবুসা বিলের সব ধানই নষ্ট হয়ে গেছে। যা কেটে কৃষকের কোন লাভ নেই। তাই তারা কাটছেন না। কিন্তু কৃষি অফিসাররা কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে ধান কেটে ফেলছেন। কৃষকদের আপত্তিও তারা শুনছেন না। ওই জমি লাগোয়া সড়কের পাশ থেকেই বেশির ভাগ ধান গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। কারণ: বিলে গিয়ে সাংবাদিকসহ অন্যকেউ সহজে যেন পোকা আক্রান্ত ধানের চিত্র দেখতে না পায়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন জাবুসা বিলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তারা কৃষি কর্মকর্তাদের এ ধরণের অপতৎপরতাকে রূখে দেবেন।

উল্লেখ্য, কারেন্ট পোকার আক্রমণে জাবুসার পশ্চিম পাড়ার বিলের প্রায় দুই হাজার বিঘা জমির রোপা আমন ধান গাছ মরে যাওয়ার ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাইজিংবিডিতে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। মূলত: এর পরই নড়েচড়ে বসেছেন কৃষি কর্মকর্তারাও। অন্য সময় কৃষকের পাশে পাওয়া না গেলেও কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা এখন দফায় দফায় আক্রান্ত মাঠ পরিদর্শন ও কৃষকের খোঁজ খবর নিচ্ছেন।



খুলনা/নূরুজ্জামান/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়