ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

যেভাবে মুক্ত শায়েস্তাগঞ্জ ও আজমিরীগঞ্জ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৭, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেভাবে মুক্ত শায়েস্তাগঞ্জ ও আজমিরীগঞ্জ

হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ ও আজমিরীগঞ্জ হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর একই দিনে এই দু’টি শহর শত্রুমুক্ত হয়।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার শায়েস্তাগঞ্জ শহরে এইদিনে মুক্তিকামী জনতা আকাশে উড়িয়ে ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজ পতাকা। চারদিকে মুখে মুখে ধ্বনিত হচ্ছিল ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালো রাতে হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা শুরুর পর পরই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এখানে গড়ে তোলেন প্রতিরোধ। বৃহত্তর সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে মুক্তিবাহিনী উড়িয়ে দেয় শায়েস্তাগঞ্জ খোয়াই ব্রিজটি। স্থানে স্থানে রেললাইনেও প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এরই মাঝে ২৯শে এপ্রিল বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই পাক-হানাদার বাহিনী শায়েস্তাগঞ্জ শহরে এসে উপস্থিত হয়। এখানে অবস্থান নিয়ে তারা সাধারণ মানুষের ওপর চালাতে থাকে নির্মম হত্যাচার। যোগাযোগের জন্য খোয়াই নদীতে ফেরী চালু করে। স্থাপন করে ক্যাম্প। তারা মেরামত করে ব্রিজটি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা যায়, অসংখ্য মানুষকে চোখ বেঁধে বিধ্বস্ত খোয়াই ব্রিজের ওপর থেকে কখনো গুলি করে, আবার কখনো হাত-পা বেঁধে জীবন্ত অবস্থায়ই নদীতে ফেলে দিতো হায়েনার দল।

এদিকে সারা দেশের সঙ্গে সড়ক ও রেল এবং নৌ-পথের যোগাযোগের সুবিধার্থে হানাদার বাহিনী এখানে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে। ফলে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা সাধারণ মানের অস্ত্র নিয়ে চোরাগুপ্তা হামলা চালালেও যুদ্ধে এদের সঙ্গে পেরে উঠছিলেন না।

অন্যদিকে এখান থেকে ভারত সীমান্ত কাছে থাকায় পাকিস্তানিরা সবসময় ভারী অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত থাকতো। পাশাপাশি মিত্র বাহিনীর ভয়ে ভীত থাকতো বলে গুপ্তচর সন্দেহে তারা নির্বিচারে অনেক সাধারণ মানুষকেও হত্যা করতো।

অবশেষে আসে সেই শুভক্ষণ। ১৯৭১ এর ৮ ডিসেম্বর সিলেটের সর্বত্র যুদ্ধে হেরে পাকবাহিনী সড়ক ও রেলপথে শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে পালাতে থাকে। একই সঙ্গে শায়েস্তাগঞ্জ থেকেও ছটকে পড়ে হায়েনার দল। দীর্ঘ নয় মাস পর এলাকার সর্বস্তরের মানুষ বিজয় পতাকা হাতে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। গগন বিদারী ‘জয়বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শায়েস্তাগঞ্জ শহর।

একই দিনে মুক্ত হয়েছিল তৎকালীন ভাটি বাংলার রাজধানী খ্যাত আজমিরীগঞ্জ থানা। সেদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই ১১নং সেক্টরের ট্রেনিং ইনচার্জ মেঘনা রিভার ফোর্সের কোম্পানি কমান্ডার ফজলুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে দুদিক থেকে প্রায় ৭ ঘন্টা যুদ্ধ শেষে পাকসেনা, রাজাকার, আলবদরদের হটিয়ে মুক্ত হয় আজমিরীগঞ্জ।

বীরযোদ্ধাদের মুহুর্মুহু গুলি ও জয় বাংলা স্লোগানের মাধ্যমে বীরদর্পে এগিয়ে আসে কয়েক হাজার মুক্তিকামী জনতা। ফুলের মালা গলায় দিয়ে বরণ করে যুদ্ধকালীন কমান্ডার মোঃ ফজলুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধিন বীরমুক্তিযোদ্ধাদের। এসময় ফজলুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ঐতিহাসিক গরুহাট ময়দানে উত্তোলন করা হয় কাঙ্খিত সেই বাংলাদেশের লাল সবুজের রক্তিম পতাকা।


হবিগঞ্জ/মামুন চৌধুরী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়