ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘আমার বাবারে লেলীন ডাক্তার মাইরা ফালাইছে’

জেলা সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৩, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আমার বাবারে লেলীন ডাক্তার মাইরা ফালাইছে’

বাবারে নেবুলাইজার দেয়ার পর অবস্থা আরও বেশি খারাপ হয়ে যায়। বাবারে দেখার জন্য লেলীন স্যারের (ডাক্তার) কাছে গিয়ে অনেক আকুতি মিনুতিসহ কয়েক বার তার পা পর্যন্ত ধরেছি। অনেক কান্নাকাটি করেছি। কিন্তু তারপরও তার মন গলেনি, তিনি বাবারে দেখতেই গেলেন না। উল্টো আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে বলল, এইমাত্র ওষুধ লিখে দিয়েছি, প্রয়োজন হইলে বরিশাল নিয়া যা। এর কিছুক্ষণ পরই আমার বাবা মারা যান। উনি ডাক্তার না, উনি কসাই।

রোববার সন্ধ্যায় প্রতিবেদকের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন নিহত সামসুল হক তালুকদারের ছোট ছেলে মিঠু তালুকদার।

এসময় মিঠু আরও বলেন, ‘স্যারে (ডাক্তার) যখন আমার মরা বাবারে দেইখা চইলা যায়, তখন আমি দৌড়ে তার কাছে গেলে সে আমার হাতে বাবার ভর্তি ফরম নিয়া ছিড়া ফালায়। আমার বাবারে লেলিন ডাক্তার মাইরা ফালাইছে।’

স্বজনরা জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় নিহত সামসুল হক তালুকদার পায়ে হেঁটে হাসপাতালের জরুরি ওয়ার্ডে ঢুকেছেন। গ্যাস লাগানোর আগ পর্যন্ত কথা বলছিলেন। পরে তার শরীরে ঘাম দিয়ে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এসময় ডাক্তার এসে তার প্রেশারটা মাপলে বুজতে পারত আসলে কী হয়েছে। কিন্তু লেলীন ডাক্তার ব্লাড প্রেশার পরীক্ষা না করে ওষুধ লিখে দিয়েছেন।

এছাড়া তার কাছে একাধিক বার আকুতি মিনতিসহ কয়েকবার পা ধরলেও তিনি রোগীকে দেখতে আসেননি। এর মধ্যেই মারা যান সামসুল হক, জানান নিহতের স্বজনরা।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। কলাপাড়া ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে এ মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল এলাকায় নিহতের স্বজনদের ভিড়ে হট্টোগোলের সৃষ্টি হয়। পরে গভীর রাতে কলাপাড়া থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নিহত সামসুল হক তালুকদারের (৬০) বাড়ি চাকামইয়া ইউনিয়নের আনিপাড়া গ্রামে।

এব্যাপারে ডাক্তার জে এইচ খাঁন লেলীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে ওষুধ লেখার কথা অস্বীকার করেন।

পরে তিনি জানান, ভীষণ অসুস্থ অবস্থায় রোগীকে নিয়ে এলে তিনি দেরি না করে গ্যাস দেয়ার জন্য পাঠান। এরপর নার্সদের কাছে ভর্তি ফরম জমা দেয়ার আগেই রোগির মৃত্যু হয়। তিনি ভর্তি ফরম ছেড়ার সুযোগ পেলেন কোথায়।

এখানে তিনি কোনো দোষ করেননি বলেও জানান ডাক্তার লেলীন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিনময় হাওলদার জানান, ডা. লেলীনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা তারা পায়নি। এছাড়া তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছে, সেখানেও কোনো ত্রুটি খুঁজে পাচ্ছেন না।

কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, রোগীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে হাসপাতালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নিহতের স্বজনরা ভুল চিকিৎসার কথা বললেও তারা লিখিত কোনো অভিযোগ না দেয়ায় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি।


পটুয়াখালী/মো. ইমরান/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়