ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

প্রতি বিঘায় লাভ দেড় লাখ টাকা!

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৪৯, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রতি বিঘায় লাভ দেড় লাখ টাকা!

বিষমুক্ত পান চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কুষ্টিয়ার কৃষকরা। আধুনিক উপায়ে পান চাষ করে প্রতি বিঘা জমিতে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ করছেন তারা।

কয়েক বছর আগেও অধিক লাভের আশায় কৃষকরা তামাক চাষে ঝুঁকেছিলেন। এখন তারা তামাকের পরিবর্তে পান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

কুষ্টিয়ার মাটি পান চাষের উপযোগী হওয়ায় এবং দাম ভালো থাকায় পান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষকরা। অন্যান্য ফসলের তুলনায় পানে লাভ বেশি হয়। বাজারের চাহিদার কথা চিন্তা করে, মাটি ও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে নজর দিয়ে নিরাপদ পান উৎপাদনে কৃষি অফিস সহায়তা করছে কৃষকদের। প্রদর্শনী, মাঠ দিবস, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিষমুক্ত পান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি অফিস।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে পান চাষ শুরু হলেও এখনো এ মৌসুমের উৎপাদনের সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করা হয়নি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলায় ২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয়েছিল ভেড়ামারা উপজেলায়। ভেড়ামারা উপজেলায় ৭২০ হেক্টর, দৌলতপুর উপজেলায় ৫৩৬ হেক্টর, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ৬২০ হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ১৬০ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ৮২ হেক্টর এবং কুমারখালী উপজেলায় ২২ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছিল।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছিল। এর মধ্যে ভেড়ামারা উপজেলায় ৭৫০ হেক্টর, দৌলতপুর উপজেলায় ৫০০ হেক্টর, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ৬২০ হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ২১০ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ৭০ হেক্টর এবং কুমারখালী উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছিল।

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের পান চাষ করা হয়ে থাকে। এর মধ‌্যে রয়েছে বাংলা, মিঠা, দেশি, ঝালি, সাচি, কর্পূরী, গ্যাচ, মাঘি, উজানী, নাতিয়াবাসুত, বরিশাল পান প্রভৃতি। উচ্চ ফলনশীল ও বিভিন্ন ভেষজ গুণসম্পন্ন এবং রোগ প্রতিরোধে সক্ষম বারিপান-১, বারিপান-২ এবং বারিপান-৩ ছাড়াও বেশ কয়েক ধরনের পান চাষ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে বাংলা ও মিঠা পান খুব জনপ্রিয়। কুষ্টিয়া অঞ্চলে বাংলা পান চাষে আগ্রহ বেশি কৃষকদের।

ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ঠাকুর দৌলতপুর এলাকার পানচাষি আব্দুর রহমান জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরেই পান চাষ করি। তবে বিভিন্ন রোগের কারণে পানে খুব একটা লাভ হতো না। পরে আমি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নিরাপদ উপায়ে পান চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে দুই বিঘা জমিতে বাংলা জাতের পান চাষ করছি। আমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নিরাপদ পান উপাদন করছি। দুই বিঘা জমিতে আমার প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছি।

মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের ফকিরাবাদ এলাকার পানচাষি শহিদুল ইসলাম জানান, আমি আগে তামাক চাষ করতাম। এখন আর তামাক চাষ করি না। বর্তমানে আমি পান চাষ করি। আমি গত বছর এক বিঘা জমিতে বাংলা পান চাষ করেছিলাম। সেখানে আমার প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। প্রথমবার পানের বরজ করতে একটু বেশি খরচ হয়। কিন্তু পরের বার চাষ করতে খরচ কম। এ বছর আমি তিন বিঘা জমিতে বাংলা পান চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ টাকার পান বিক্রি করেছি। আরো ২-৩ লাখ টাকার পান বিক্রি করা যাবে। স্থানীয় বাজার, কুষ্টিয়া, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলা পানের চাহিদা বেশি।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, পান লাভজনক ফসল। আগে কুষ্টিয়ার পান সারা দেশে বিখ্যাত ছিল। তবে কয়েক বছর আগে বিভিন্ন রোগের কারণে পানচাষিদের লোকসান হয়। এতে পান চাষ অনেক কমে যায়। পরবর্তীতে আমরা পান উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কর্মসূচির আওতায় পান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি। সেই সাথে নিরাপদ উপায়ে পান চাষের বিষয়ে আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেই। এতে কৃষকরা পান চাষ করে লাভবান হন। ফলে এই এলাকায় এ বছর আরো ৩০টি পানের বরজ হয়েছে। চাষিরা ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে পান চাষে লাভবান হচ্ছেন। আশা করছি, এবছর দেশের বাইরে পান রপ্তানি করা হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুশান্ত কুমার প্রামাণিক জানান, পান চাষ অধিক লাভজনক। আমরা নিরাপদ পান উৎপাদনের প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষকদের পান উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করছি। আমরা নিরাপদ পান উৎপাদন করছি। বিষমুক্ত এ পান আমরা বিদেশে রপ্তানির চেষ্টা করছি।



কুষ্টিয়া/কাঞ্চন কুমার/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ