ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘সু চিই দায়ী’

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সু চিই দায়ী’

সু চি’র নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। গণহত্যার জন্য সু’চিই দায়ী।

এই প্রতিক্রিয়া উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের সত্তর বছর বয়সী রোহিঙ্গা আবু বক্কর এর। অং সান সুচি এখন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কাঠগড়ায়। রোহিঙ্গাদের হত্যায় তার সরকার অভিযুক্ত।

রোহিঙ্গা আবু বক্কর  বলেন,“৭০ বছর ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চলছে। সু চি, মিয়ানমার সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে লুন্ঠনকারী বাহিনী দিয়ে যে নির্যাতন চালিয়েছে তো সহ্য করার মত নয়। এসব কিছুর জন্য অং সান সু চিই দায়ী। তার নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে।”

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার জের ধরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা বিরোধী অভিযান শুরু। হত্যা-ধর্ষণসহ সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। জাতিসংঘ জানিয়েছে ‘গণহত্যার উদ্দেশ্য’ নিয়ে এই অভিযান চালানো হয়েছিল।

দীর্ঘ সময় পর অবশেষে আন্তর্জাতিক বিচারের আওতায় মিয়ানমার। যার শুনানিতে অংশ নিতে আদালতের কাঠগড়ায় অং সান সু চি। রোহিঙ্গারা বলছেন, অংসান সু চিই রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতীক। এখন তিনি সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করছেন। যা লজ্জার।

উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা রহিম উদ্দিন বলেন, “এখন মিয়ানমার থেকে আন্তর্জাতিক আদালতে অং সান সু চি গেছেন। সু চি এর আগে ২০১৪ সালে আমাদেরকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। এই হিসেবে মিয়ানমার থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছেন সেখানে আমাদের পক্ষ হয়ে কথা বলবেন না বরং আমাদের ক্ষতি করবেন। আইসিজেতে সু চিকে আসামি গণ্য করে এ্যাকশন এবং ব্যবস্থা নেবে, এটেই বিশ্বাস করি।’

আরেক রোহিঙ্গা মাহবুব বলেন, “অং সান সু চি ক্ষমতায় আসার পর হত্যা করেছে আমাদের। যা করেছে পরিকল্পিতভাবে। আমাদেরকে গণহত্যাও করেছে সু চি। তিনি এখন আসামী। সু চি এখন দালাল ধরে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছে, যা আমরা পছন্দ করছি না। সে আমাদের গলাকাটার জন্য গিয়েছে।”

কুতুপালং ডি-৫ ব্লকের রোহিঙ্গা জহির উদ্দিন বলেন, “সু চি কোন ভাল নারী নয়। সে যদি ভাল হত, তাহলে আমাদেরকে ২০১৪ সালে ভোটার থেকে বাদ দিতো না।  ভোটার থেকে বাদ দেয়ার পর মিয়ানমার থেকেও তাড়িয়ে দিয়েছে। এখন সে আন্তর্জাতিক আদালতে সেনাবাহিনীকে বাঁচাতে গেছে। সু চি আসলে গিয়েছে; ভোট পাওয়ার জন্য। মিয়ানমারে গণতন্ত্র নেই; গণতন্ত্রের জন্য তাকেই ভোট দিতে হবে এটা বলার জন্য। ”

নেদারল্যান্ডসের হেগ-এ জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়েছে মিয়ানমার। নিজ দেশের হয়ে আইনি লড়াই করছেন রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি। আদালতে সু চির উপস্থিতি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রোহিঙ্গারা। সু চিকে গণহত্যার প্রতীক আখ্যা দিয়ে এক সময়কার গণতন্ত্রপন্থী ওই নেত্রীর প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা।

এখন আন্তর্জাতিক আদালতের দিকে চোখ কক্সবাজারে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের। তারা চান, আন্তর্জাতিক আদালতে যেন তারা ন্যায় বিচার পান এবং দ্রুত স্বদেশে ফিরতে পারেন।

কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা আমির আহমেদ বলেন, “সারা বিশ্ব এই মামলাটি করেছে। এই মামলাটাকে যাতে সঠিকভাবে আমাদের নাগরিকত্ব, অধিকার, নিরাপত্তা, জায়গা-জমি এবং অন্যান্য ১৩৫টি জাতি মিয়ানমারে যে অধিকার নিয়ে বসবাস করে সেই অধিকার নিয়ে আমরাও মিয়ানমারের ফেরত যেতে পারি সেই বিচারটা আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে আশা করি।”

আরেক রোহিঙ্গা আবু ছিদ্দিক বলেন, “মিয়ানমারে আমাদের ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন মেরে ফেলেছে, ঘর পুড়িয়েছে; জমি-জমা নিয়ে ফেলেছে। এখন আন্তর্জাতিক আদালতে এসবের বিচার চাই। বিচার চাইছি; ওদের সাজা দিতে হবে। সাজার পাওয়ার পর আমাদের সবকিছু ফিরে পেতে হবে।”

আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস্ এন্ড হিউম্যান রাইটস্ (এআরএসপিএইচ) সদস্য মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, মিয়ানমার যে গণহত্যা চালিয়েছে এটার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হচ্ছে। ওখানে অং সান সু চি গিয়েছে সেটাও দেখছি। বিশ্ব আমাদের মামলাটাকে সঠিকভাবে বিচার করে দিক; যাতে রোহিঙ্গাদের সকল অধিকার ফিরিয়ে দেবে এবং রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বিচারও করে দিবে বলে আশা করছি।

আর গণহত্যার সকল প্রমাণাদি জাতিসংঘের রিপোর্টে রয়েছে; যা রোহিঙ্গাদের জন্য সুখকর হবে বলে মনে করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাব এনাম খান।

তিনি রাইজিংবিডিকে জানান, যত ধরনের প্রমাণাদি দরকার সেগুলো কিন্তু জাতিসংঘের রিপোর্টে আছে। অর্থাৎ জাতিসংঘ রিপোর্ট এবং গাম্বিয়া যে ব্যবস্থা নিয়েছে; সেই ব্যবস্থায় যারা জড়িত এবং স্যাটেলাইট ইমেজ রয়েছে। তা কিন্তু রায়ে রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক বেশি সুখকর হবে।

নতুন পুরনো মিলে কক্সবাজারের ক্যাম্পে এখন রোহিঙ্গা আছে ১১ লাখের বেশি। যাদের প্রায় সবাই কোন না কোনভাবে নিপীড়নের শিকার নিজদেশ মিয়ানমারে।


কক্সবাজার/ সুজাউদ্দিন রুবেল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়