ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সু চির বক্তব্যে ক্ষুব্ধ রোহিঙ্গারা

কক্সবাজার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৩, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সু চির বক্তব্যে ক্ষুব্ধ রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর গণহত্যার অভিযোগে নেদারল্যান্ডের হেগে ‘আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে)’ বিচারকার্যের দ্বিতীয় দিনে মিয়ানমারের পক্ষে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

এতে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি মিয়ানমারের পক্ষে সাফাই গাইলেন। এর জন্য ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা। তারা বলছেন, সু চির নির্দেশে সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। যার পর্যাপ্ত প্রমাণ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে রয়েছে।

গণহত্যার অভিযোগ উত্থাপন করে গত ১১ নভেম্বর নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত ‘আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে’ ওআইসির পক্ষভূক্ত হয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে গাম্বিয়া। ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে গণহত্যা নিয়ে আইসিজের অভিযোগের তিন দিনের শুনানি।

বুধবার শুনানির দ্বিতীয় দিন ছিল মিয়ানমারের পক্ষে চুক্তি উপস্থাপনের সময়। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি যখন আদালতে বক্তব্য রাখছিলেন তখন তা শুনেছেন ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা।

যেখানে মিয়ানমারের পক্ষে আদালতে সাফাই দিয়েছেন সু চি। সু চির এ বক্তব্য বিভ্রান্তকর, মিথ্যা দাবি করেছেন রোহিঙ্গারা। তারা বলেছেন, সু চির নির্দেশে সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। যার পর্যাপ্ত প্রমাণ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে রয়েছে।

জামতলী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা আলী বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি; অং সান সু চি যেটা বলছেন এটা মিথ্যা কথা। আমাদের গুলি মেরে মারছে, তাড়িয়ে দিয়ে ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এটা আমি নিজের চোখে দেখেছি। যার গায়ে গুলি পড়বে পড়ুক দেখেনি, গুলির পর গুলি করে মেরে ফেলেছে। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে তাই পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছি।”

একই ক্যাম্পের জহির আলম নামে আরেক রোহিঙ্গা বলেন, “আমার বাবা যদি আদেশ দেয় তাহলেও আমি কাউকে নির্যাতন করবো না। অং সান সু চি আদেশ দেয়ার কারণে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। মেয়েদের রাস্তা রাস্তায় ধর্ষণ করেছে, আমাদের কাছে ভিডিও ও ছবি আছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের আগুনে ফেলে মেরে ফেলেছে। আমার চাচার মেয়েটাকে মেরে ফেলেছে।”

কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা সিরাজ বলেন, “সু চি যা বলেছে তা বানোয়াট, মিথ্যা কথা। রোহিঙ্গাদের গণহত্যা না করলে তারা কীভাবে অস্ত্র নিয়ে এসেছে, হত্যা করেছে, পুড়িয়ে মেরেছে। সেনা বাহিনী অস্ত্রসহ চারদিকে ঘিরে গুলি করেছে, আগুন জ্বালিয়ে হত্যা করেছে, এটি গণহত্যা নয়? বিশ্ব কি এটা মেনে নেবে? সারা বিশ্ব আমাদের উপর যে অত্যাচার হয়েছে, তা দেখেছে। এখনো হচ্ছে।”

রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস্ এন্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘‘মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি আন্তর্জাতিক আদালতে যা বলছেন, তা পুরনো কথা। এরা যে বলছেন গণহত্যা হয়নি; এটার বিচার বিশ্ব করবে প্রমাণাদি নিয়ে। এখন বিশ্ব গণহত্যার সকল প্রমাণ পেয়েছে, তাই এখন ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করেছে।’’

মুহিব উল্লা বলেন, ‘‘মিয়ানমারের বিচার আমরা বিশ্বাস করি না। মিয়ানমারে বিচার হবে এটাও চায় না। আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হোক এটাই আমরা চাই।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা এখনো নিজদেশে ফিরে যেতে চাই। এখন বললে এখনি চলে যাবো। মিয়ানমার যদি অধিকার দিয়ে ইজ্জতের সঙ্গে রোহিঙ্গা বলে ডাকে অবশ্যই আমরা মিয়ানমারে ফিরে যাবো।’’

আর কক্সবাজার পিপলস্ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল জানান, সু চির বক্তব্য সঠিক নয়। রাখাইনে সংগঠিত ঘটনা পরিকল্পিত এবং একটি জনগোষ্ঠী নিধন। আন্তর্জাতিক মহলের এখনই সুযোগ এটা আদালতে প্রমাণ করার।


কক্সাবাজার/সুজাউদ্দিন রুবেল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়