ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ইছামতি নদী দখল করে মাছ চাষ, গোসলেও মানা

রাজিব হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইছামতি নদী দখল করে মাছ চাষ, গোসলেও মানা

ভারত সীমান্ত সংলগ্ন নদী ইছামতি। নদী পাড়ের হালদার সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর জীবন জীবিকা এই নদীকে ঘিরে। মাছ ধরে বিক্রি করে তাদের জীবন চলে।

যে নদীটি এলাকার মানুষ মাছ ধরা থেকে শুরু করে নানা কাজে ব্যবহার করেন। সেই নদীতে হঠাৎ করে স্থানীয় এক প্রভাবশালী বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন। মহেশপুর উপজেলার শ্রীনাথপুর গ্রামের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদীতে এই বাঁধ দেয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, বছরের পর বছর এই নদীর সরকারি জায়গা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। গ্রামের মানুষ নদীর পানিতে গোসল থেকে শুরু করে যাবতীয় অনেক কাজই করতো। এখন বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে কাউকে নদীতে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। নদীর পানিতে গোসল করা যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। হালদারদের মাছ ধরারও কোনো সুযোগ নেই।

শ্রীনাথপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, তাদের গ্রামের নিচ দিয়ে ইছামতি নদী বয়ে গেছে। নদীটি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আবার ভারতে চলে গেছে। এই গ্রামেই রয়েছে বিজিবি’র শ্রীনাথপুর ক্যাম্প। ক্যাম্পের নিচে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বাঁধটি দিয়েছেন শ্রীনাথপুর গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের পুত্র আওয়ামীলীগ কর্মী শরিফুল ইসলাম। বিজয়ের এ মাসেই তিনি হঠাৎ করে ওই নদীর মাঠপাড়া ও হালদারপাড়া এলাকায় দুইটি বাঁধ দেন। মাঝে আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ বিঘা এলাকা এই বাঁধ দিয়ে আটকে ফেলেন। আর এক সপ্তাহ হলো সেই আটকে ফেলা জলাশয়ে তিনি মাছ ছেড়েছেন।

স্থানিয়রা বলছেন তারা নানা ভাবে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। শ্রীনাথপুর ছাড়াও পাশ্র্ববর্তী শ্যামকুড় গ্রামের মানুষও এই নদী ব্যবহার করেন। তাই দখলকারীকে বাঁধ না দেওয়ার জন্য তারা অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কোনো অনুরোধই কাজে লাগেনি।

হালদারপাড়ার সাধন হালদার জানান, তারা প্রায় ১৭ টি পরিবারে শতাধিক মানুষ এই নদীর পাড়েই বসবাস করেন। এছাড়াও গ্রামে আরো হালদার সম্প্রদায় রয়েছে। যারা এই নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করেন। এই মাছ বিক্রির মাধ্যমে তাদের সংসার চলে। এই বাঁধ দেওয়ার কারণে তারা আর নদীতে নামতে পারছেন না। তিনি বলেন, শরিফুল ইসলামের এক ভাই স্থানীয় ইউপি সদস্য। যে কারণে শরিফুল কোনো কিছুই মানতে চান না। তাদের সমস্যার কথাগুলো বলেছেন, কিন্তু তিনি গুরুত্ব দেননি। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন হালদার সম্প্রদায়ের মানুষগুলো।

হালদাররা জানান, ‘জাল যার-জলা তার’ এটা সরকারের স্লোগান। সেখানে জেলেদের বঞ্চিত করে নদী দখল করে প্রভাবশালী মাছ চাষ করছেন।

এ বিষয়ে দখলকারি শরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, নদীতে এখন পানি কম। তিনি খাবার জন্য কিছু মাছ ছেড়ে বড় করছেন। এটা তিনি শুনে করেছেন, কিন্তু কাদের কাছে শুনেছেন তা বলতে চাননি। তিনি নিজের ঘাড়ে দোষ নিয়ে বিষয়টির দিকে একটু খেয়াল রাখার অনুরোধ করেন। নদীতে মানুষের নামতে নিষেধ একথা ঠিক নয় বলে জানান।

শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আমান উল্লাহ জানান, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। তবে আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে একটু ব্যস্ত আছেন। দ্রুতই খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুজন সরকার জানান, বিষয়টি তিনি অবগত নন। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

 

ঝিনাইদহ/ রাজিব হাসান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়