ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘গাছই নেই, রস পাব কই’

মো. ইমরান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘গাছই নেই, রস পাব কই’

আজ থেকে ৫ বছর আগেও প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০টা খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করতাম। প্রতিটা গাছে কম করে হলেও এক থেকে দেড় লিটার রস হতো। এ রস আবার তাপালে (টিনের বড় পাত্র) করে জাল (গরম) দিয়ে গুড় তৈরি করতাম। প্রতি লিটার গুড় বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। আর এ গুড় বিক্রি করে যে আয় হতো, তা দিয়েই চলে যেত আমাদের পুরো বছরের ভরণপোষণ।

কিন্তু এখন আর গাছই নেই, রস পাব কই। এখন মাত্র দু’তিনটা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। বিক্রি তো দূরের কথা, এ রস নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারে না। কথাগুলো বলছিলেন রাঙ্গাবালী উপজেলার নয়া ভাংগুলি গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব খেজুর গাছি সৈয়দ প্যাদা।

কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীসহ উপকূলীয় এ অঞ্চলে একসময় প্রচুর খেজুর গাছ ছিল। সড়কের পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো অনেক খেজুর গাছ লক্ষ করা যেত। অনেকে আবার বাণিজ্যিকভাবে খেজুর গাছ লাগাতেন। শীত মৌসুমে অনেক গাছি খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতেন। রস সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছে হাঁড়ি ঝুঁলিয়ে পরদিন সকালবেলা তীব্র শীত উপেক্ষা করে গাছে উঠে রস সংগ্রহ করতেন গাছিরা।

গাছ থেকে তাজা রস সংগ্রহ করে জাল দিয়ে তৈরি করা হতো পাটালি অথবা ঝোলা গুড়। শুধু খেজুরের গুড় বিক্রি করেই সংসার চালাত অনেক গাছি। কিন্তু বর্তমানে ইটভাটার আগ্রাসনে বিলুপ্ত প্রায় খেজুর গাছ। এছাড়া খেজুর গুড়ের চাহিদা সত্ত্বেও দাম অনেকটা কম থাকায় অনেক গাছিই আগ্রহ হারাচ্ছেন রস সংগ্রহের উপর। তবে, এখন খুব কম সংখ্যক এলাকার গাছিরা খেজুর গাছ কাটতে ও রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ধানখালী ইউনিয়নের খেজুর গাছি ষাটোর্ধ্ব রহমান মিয়া জানান, খেজুর গুড়ের চাহিদা অনেক, কিন্তু দাম অনেক কম। এছাড়া, এখন তো গাছই নেই। তাই রসও কম হয়। একই এলাকার আরেক গাছি ফজলু মুন্সী জানান, যে হারে ইটভাটা বাড়ছে, তাতে খেজুর গাছ না থাকারই কথা, আর কয়েক বছর অতিবাহিত হলে নতুন প্রজন্ম জানবেই না যে, খেজুর গাছ বলতে কিছু ছিল।

কলাপাড়া উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা আবদুস সালাম জানান, আমরা কৃষকদের খেজুর গাছের বীজ রোপণে উৎসাহিত করি। তবে বন বিভাগের খেজুর রোপণে আপাতত কোনো পদক্ষেপ নেই।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, খেজুর গাছ জন্মানোর জন্য যে মাটি প্রয়োজন, সে মাটি এখন আর নেই। এছাড়া খেজুর গাছের চেয়ে অন্য ফল গাছ রোপণে কৃষকদের লাভ বেশি হয়। তাই এখন আর কেউ খেজুর গাছ রোপণ করেন না। তবে, সরকারিভাবে পতিত জমিতে খেজুর গাছ রোপণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

 

কলাপাড়া (পটুয়াখালী)/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়