ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দেশকে ভালোবেসে ১৬ বছর ধরে পতাকা বিক্রি!

রফিক সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩২, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেশকে ভালোবেসে ১৬ বছর ধরে পতাকা বিক্রি!

জাতীয় পতাকা নিয়ে শফিক মিয়া

পঞ্চাশ পেরুনো ভগ্ন স্বাস্থ‌্যের অধিকারী শফিক মিয়া। বাড়ি হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার গায়েনগঞ্জ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তবে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জের অলি-গলিতে তার বিচরণ। লম্বার বাঁশের সাথে বিভিন্ন আকারের পতাকা বেঁধে নিয়ে সারা বছরই ঘুরে বেড়ান তিনি।

সংসার অভাব অনটন লেগেই আছে। কিন্তু তাতে হবে কী? পেটের টানের চেয়ে দেশের টান যে বড়! দেশের প্রতি অগাধ ভালবাসা এই রুগ্ন-ভগ্ন লোকটির। সেই ভালবাসা থেকেই বিগত ১৬ বছর ধরে জাতীয় পতাকা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। পতাকার আদলে দেশের প্রতি ভালোবাসা বিকিয়ে বেড়াচ্ছেন শফিক মিয়া।

দারিদ্রতার কারণে বিয়ে করতে চাননি। বৃদ্ধ বাবা নয়ানুল্লাহর চাপে অবশেষে বিয়ে করতে হলো। এখন দুই ছেলের বাবা। বড় ছেলে মোখলেস (২৪) একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। বাবাকে সংসার চালাতে সহযোগীতা করেন। ছোট ছেলে মমিনুল (৭) পড়ছে প্রাথমিকে। দারিদ্রতার কারণে শফিক বেশি দূর লেখাপড়া করতে পারেননি। তাই ছোট ছেলে মমিনুলকে উচ্চ শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেন।

জাতীয় পতাকার বিভিন্ন সাইজের পতাকা পাওয়া যাবে তার কাছে। সাইজ বুঝে দরও ভিন্ন। শুধু জাতীয় পতাকা নয়। তার কাছে আছে জাতীয় পতাকা সম্বলিত হেড ব‌্যান্ড, ব্রেসলেট, ছোট ছোট পতাকা, কাগজের পতাকা, গালে ও কপালে লাগানোর স্টিকার। আছে জাতীয় পতাকা সম্বলিত রাবার ব‌্যন্ডও। তার কাছে যা কিছু আছে, তার সবই বাংলাদেশের পতাকা কেন্দ্রীক। অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ পতাকা বিক্রেতাদের কাছে লাল-সবুজের পতাকা ছাড়া অন্যা দেশের পতাকা বা অন্যান্য সামগ্রী পাওয়া যায়। কিন্তু শফিক একেবারেই আলাদা।

শফিক মিয়া বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জন্যই সাড়ে সাত কোটি মানুষকে একসাথে করেছিলেন। ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের। জাতীর পিতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি অন্য কোনো দেশের সামগ্রী বিক্রি করি না। সারাবছর এ ব্যবসা খুব একটা ভাল থাকে না। তাই আমিও খুব একটা ভাল থাকি না। তবে ব্যবসার চেয়ে বেশি ভাল লাগে যখন দেখি ছোট ছোট কোমলমতি শিশুরা বাংলাদেশর পতাকার রংয়ে রঞ্জিত লাল-সবুজ কেন্দ্রীক সামগ্রী কিনছে।’

স্মৃতি চারণ করে শফিক মিয়া বলেন, “আমি তখন অনেক ছোট, তাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। কিন্তু যখন কাঁধে করে একগুচ্ছ জাতীয় পতাকা নিয়ে গ্রামের অলি-গলি মেঠো পথ ধরে হাঁটি, মনে হয়- আমি যেন বঙ্গবন্ধুর মুক্তির বারতা নিয়ে হাঁটছি। তখন নিজের অজান্তেই বুক চিরে বেরিয়ে আসে ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই/যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই/ মুক্তি চাই, মুক্তি চাই/তবে বিশ্ব পেতো এক মহান নেতা, আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা/’।”   



গাজীপুর (কালীগঞ্জ)/রফিক সরকার/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়